চলন্ত বাসে দীর্ঘ সময় অজ্ঞান হয়ে থাকা মহিলাকে হাসপাতালে নিয়ে গেলেন যাত্রীরা

কল্যাণ অধিকারী

❏ শ্বাসকষ্টে ছটফট করতে করতে নুইয়ে পড়া মহিলার পাশে বাসের সহযাত্রীরা।
❏ মহিলার শরীরে টিউমার! অসুস্থ শরীরে চিকিৎসা করাতে বেরিয়েছিলেন। সঙ্গে একমাত্র বোন।
❏ মুন্সিরহাট-হাওড়া রুটের সরকারি বাসে আসবার সময় সলপের কাছে অসুস্থ হয়ে অজ্ঞান হয়ে যান।
❏ সহযাত্রীদের চেষ্টায় হাসপাতালের এমারজেন্সিতে নিয়ে যাওয়া হয়। শুরু হয় চিকিৎসা।
❏ সময়ে না আনা হলে অবস্থা আরও আশঙ্কাজনক হতে পারতো, জানান চিকিৎসক।

চলন্ত বাসে অসুস্থ মহিলা। সাহায্যে এগিয়ে আসলেন বাসের অন্যান্য যাত্রীরা। মঙ্গলবার দুপুরে ঘটনাটি ঘটেছে মুন্সিরহাট-হাওড়া রুটের একটি সিটিসি বাসে। শ্বাসকষ্টে ছটফট করতে করতে নুইয়ে পড়া বছর তিরিশের অসুস্থ মহিলা যাত্রীকে বাস থেকে নামিয়ে হাসপাতালে নিয়ে গেলেন বাসের যাত্রীরা।

লকডাউনের পর প্রথম কাজের দিন মঙ্গলবার। ব্যস্ত হাওড়ার বাঁকড়া এলাকা। সলপের পর থেকে হাওড়া-আমতা রোডে তীব্র যানজট। ওই রুটে চলাচল করা একাধিক বাস, ছোট গাড়ি, টোটো আটকা পড়ে। যানজটে আটকে থাকে মুন্সিরহাট-হাওড়া রুটের ওই সিটিসি বাসটি। গেটের পাশের সিটে বছর ১৮ মেয়েটি বসে। ওর পাশের সিটে বসে থাকা দিদির মাথায় জল দিচ্ছে। কখনও আবার জামার ওড়না দিয়ে মুখ মুছে দিচ্ছে। মাঝেমধ্যে চালকের দিকে কাতর চাউনিতে তাকিয়ে। অসুস্থ দিদি আরও অসুস্থ হয়ে পড়ছে। অন্যান্যরা চালকের কাছে অনুরোধ করেন যেভাবেই হোক গাড়ি ঘুরিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য।

৬নং জাতীয় সড়ক হয়ে কোনা এক্সপ্রেসওয়ের মুখ সর্বত্র যানজট। গড়ফা পৌঁছানোর আগেই মহিলা অজ্ঞান হয়ে যায়। বোন সাজিদা দিদির মাথায় জল দিলেও কথা বলছে না। বেশ কিছুক্ষণ অজ্ঞান হয়ে থাকে। কিছুটা দূরে সিটে বসে থাকা মহিলা উঠে এসে মাথায় হাওয়া করতে থাকেন। বেলেপোল মোড়ের কাছে জ্ঞান ফেরে। মহেশ ভট্টাচার্য হোমিওপ্যাথিক মেডিকেল কলেজ এবং হসপিটালের কাছে চালককে বলে বাস থামানো হয়। কোনক্রমে অসুস্থ মহিলাকে নামিয়ে আনা হয়। বাস থেকে নেমে পড়েন দুই বাসযাত্রী প্রসেন ও অভিজিৎ। দু’শো মিটার পথ নিয়ে যেতে টোটোর খোঁজ করা শুরু হয়। ৩০ টাকা ভাড়া দিয়ে নিয়ে আসা হয় মহেশ ভট্টাচার্য হোমিওপ্যাথিক মেডিকেল কলেজ এবং হসপিটালে।

মুন্সিরহাট তালপুকুর এলাকার সাজিদা অসুস্থ দিদিকে নিয়ে আসছিল চিকিৎসা করাতে। হাওড়া শহরের কিছু জানেনা। কিন্তু অসুস্থ দিদিকে বাড়িতে রাখতে পারেনি। কয়েকমাস আগে স্থানীয় এলাকার চিকিৎসক দিদির অসুস্থতা দেখে জানিয়েছিল টিউমার রয়েছে। সেইমতন চিকিৎসা চলছে দিদির। ১২বছরের বিবাহিতা দিদির এক ছেলে ও এক মেয়ে সাজিদারদের কাছেই থাকে। দিদি শ্বশুর বাড়িতে থাকে। জামাইবাবু অন্যত্র কাজ করে। মাঝেমধ্যে আসে। কিন্তু দু’দিন শরীর অসুস্থ থাকায় মঙ্গলবার বেলায় মুন্সিরহাট থেকে সিটিসি বাসে করে চলে আসেন হাওড়ায়। কিন্তু মাঝ রাস্তায় অসুস্থ হয়ে পড়েন দিদি। ঘড়িতে তখন দুপুর আড়াইটে। এমারজেন্সিতে নিয়ে আসতেই জুনিয়র চিকিৎসকদের একটি টিম তৎক্ষণাৎ প্রাথমিক চিকিৎসা শুরু করে দেয়। বাইরে একা সাজিদা খাতুনকে রেখে চলে যেতে পারেনি প্রসেন, অভিজিৎ। ঘন্টাখানেক চিকিৎসা চলাকালীন বারেবারে সাজিদার পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেছে।

চিকিৎসদের কথায়, মহিলার শ্বাসকষ্ট রয়েছে। তবে, প্রেসার ঠিকঠাক রয়েছে। ওঁনার যে টিউমার রয়েছে তা আগেকার এক্স-রে রিপোর্ট দেখে মনে হচ্ছে না। আপাতত বুকের একটি এক্স-রে এবং ইসিজি করবার কথা বলা হয়েছে। যেহেতু এখানে ওই পরিষেবা নেই। তাই অন্যত্র করানোর কথা বলা হয়েছে। রোগীর শ্বাসকষ্ট রয়েছে। প্রয়োজনে অক্সিজেন দেওয়া হবে। তবে সময়ে না আনা হলে অবস্থা আরও আশঙ্কাজনক হতে পারতো।

ক’দিন আগে আনন্দপুরে চলন্ত গাড়িতে মহিলার শ্লীলতাহানির ঘটনায় সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছিলেন এক মহিলা। এবার হাওড়ায় চলন্ত বাসে অসুস্থ মহিলার পাশে দাঁড়ালেন ওই বাসের সহযাত্রীরা। করোনা আবহের মাঝে দূর-দূরান্ত থেকে বাসে করে আসা অপরিচিত মানুষকে সাহায্য করার জন্য এগিয়ে আসছে মানুষ বিষয়টিকে স্বাগত জানিয়েছে সুশীল সমাজ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *