ছোলার ডালে ‘জয় হিন্দ’ শব্দ লিখে ভারতের ইতিহাসে নাম তুললেন বাগনানের রুপজিৎ
কল্যাণ অধিকারী
❏ শখ আর যোগ্য লড়াই ‘ইন্ডিয়া বুক অফ রেকর্ডস’-এ জায়গা করে নিলেন বাগনানের রুপজিৎ।
❏ ৪৫সেকেন্ডে খালি চোখে ছোলার ডালের উপর জাতীয় পতাকা এঁকে ‘জয় হিন্দ’ লিখে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন রুপজিৎ।
❏ বইয়ের দোকান চালিয়ে আর্থিক প্রতিবন্ধকতা ছেলের স্বপ্নের পথে বাধা হতে দেননি বাবা।
❏ ছেলে ইতিহাস গড়ার পর উচ্ছ্বসিত হলেও ছেলেকে আরও বিখ্যাত জায়গায় দেখতে চায় মা।
❏ ভবিষ্যতে আর্ট কলেজে পড়াশোনা করা এবং গিনেস বুকে নাম তুলতে চায় রুপজিৎ।
পাঁচ বছর বয়স থেকে রং-তুলির প্রতি অসম্ভব টান ছিল। সেই সঙ্গে শখ ছিল ‘আর্টিস্ট’ হওয়া। সেই শখ আর যোগ্য লড়াই ‘ইন্ডিয়া বুক অফ রেকর্ডস’-এ জায়গা করে নিলেন গ্রামীণ হাওড়ার বাগনান থানার পাতিনান সেলুন মোড় বাসস্ট্যান্ড এলাকার রুপজিৎ শাসমল। মাত্র ৪৫সেকেন্ডে খালি চোখে ছোলার ডালের উপর জাতীয় পতাকা এঁকে জয় হিন্দ লিখে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন রুপজিৎ।
বাড়িতে সায়েন্সের চর্চা থাকলেও বাগনান কলেজে আর্টস নিয়ে প্রথম বর্ষে পড়াশোনা করছে রুপজিৎ। বাবা পার্থ শাসমল ছেলের সাফল্যে অত্যন্ত গর্বিত তিনি। মানকুর মোড়ে বইয়ের দোকান চালান। আর্থিক প্রতিবন্ধকতা ছেলের স্বপ্নের পথে বাধা হতে দেননি। ছোটবেলা থেকে পড়াশোনার পাশাপাশি স্থানীয় আঁকার শিক্ষক সুমিত ধাড়ার কাছে ভর্তি করিয়ে দেন। পড়াশোনার পাশাপাশি স্বপ্ন দেখে আর্ট কলেজে পড়বে, ‘আর্টিস্ট’ হবে। এরপরই নজরে আসে মেদিনীপুর জেলার মাইক্রো আর্টিস্ট প্রসেনজিৎ করের চিত্রকলা। সেই থেকেই টান চলে আসে মাইক্রো আর্টে। বছর দেড়েক ধরে চলছে প্রচেষ্টা। প্রথম প্রথম চক দিয়ে বিভিন্ন ছবি আঁকার কাজ চলতে থাকে। চলতি বছর শুরুতে নতুন চেষ্টা শুরু হয়। ছোলার ডালে কাজ করা।
রুপজিৎ বলেন, “নিজে আঁকি, একিসঙ্গে ছোট ছোট বাচ্চাদের আঁকা শেখানোর কাজ করি। বিভিন্ন সময় অভিনব কাজ করেছি। তারপর মাথায় আসে একটা ছোলার ডালে খালি চোখে জয় হিন্দ লেখা। যদিও এটা অনেকটাই কষ্টকর। প্রথমে এক মিনিট সময় লাগতো লিখতে। পড়ে সময় কম লাগতে থাকে। তারপর চিত্রশিল্পী সৌরভ আদকের পরামর্শে ‘ইন্ডিয়া বুক অফ রেকর্ডস’-এ সার্চ করতে থাকি। মার্চ মাসের ২তারিখ এপ্লাই করি। তারপর ওই মাসের ১৫তারিখ একটী মেল আসে। লেখা ছিল কাজটা আগ্রহ সহকারে নিচ্ছি। ওঁনাদের কথামতো দুজন গেজেটেড অফিসার প্রত্যয়িত করিয়ে পাঠাতে বলা হয়।
তিনি আরও জানান, গেজেটেড অফিসারের প্রত্যয়িত করতে ঝক্কি পোহাতে হয়। বাগনান হাইস্কুলে পড়াশোনা করার সুবাদে ভাস্কর বাবু এবং আনন্দ নিকেতনের শিক্ষক সই করে দেন। সঙ্গে ৪৫ সেকেন্ডের ভিডিও পাঠাই। তারপর ২৫ তারিখ মেল আসে আমি সিলেক্টেড। কিছু তথ্য পাঠাতে হয়। কিন্তু তারপর থেকেই শুরু হয়ে যায় লকডাউন। ‘কুরিয়র সার্ভিস’ পরিষেবা বন্ধ হয়ে যায়। ৩ তারিখ বৃহস্পতিবার দুপুরে বাড়িতে আসে একরাশ স্বপ্ন। মোড়ক খুলতেই একটি ব্রোঞ্জের মেডেল সঙ্গে সার্টিফিকেট। ২০১৯ সালের যে সমস্ত রেকর্ড তৈরি হয়েছে তাঁদের লেখা ও কাজকর্মের ছবি দেওয়া বই একটি পেন, আইকার্ড ও ব্যাচ দেওয়া হয়েছে।
ছেলে ইতিহাস গড়ার পর উচ্ছ্বসিত হলেও মা শান্তনা দেবী ছেলের নাম আরও অনেক বিখ্যাত জায়গায় দেখতে চায়। প্রশাসনের পক্ষ থেকে সাহায্যের আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। এ দিন বাড়িতে পঞ্চায়েত সদস্য এসেছেন। একাধিক সংগঠন থেকে যোগাযোগ করা হয়েছে। যারমধ্যে গিনেস বুকে দেখতে চায়। শুধু ছোলার ডালে নয়, আরও অনেক ধরণের চিন্তাভাবনা করে জয় হিন্দ শব্দকে ছড়িয়ে দিতে চায় উনিশ বছরের রুপজিৎ। ভবিষ্যৎ চিন্তাভাবনা আর্ট কলেজে পড়শোনা করা। এবং গিনেস বুকে নাম তুলতে চায়। যদিও এই লড়াইয়ে তাঁকে অনেকটা পথ পেরতে হবে।