জয়পুরে মর্মান্তিক পথ দুর্ঘটনায় থেতলে গেল শিশুর পা, কলকাতায় স্থানান্তর
কল্যাণ অধিকারী
❏ রাস্তা পার হতে গিয়ে ছোট্ট শিশুর পায়ের মাংস থেতলে দিল মারুতি। উত্তেজনা এলাকায়।
❏ মামার বাড়ি থেকে মায়ের কাছে ফিরতে গিয়ে রাস্তায় দ্রুত গতিতে আসা মারুতির সামনে পড়ে যায় শিশুটি।
❏ যন্ত্রণায় কাতরাতে থাকা ছোট্ট শিশুকে বাইকে চাপিয়ে স্থানীয়রা নিয়ে আসে বিবিধর গ্রামীণ হাসপাতালে।
❏ শিশুটি পা থেতলে যাওয়ায় একাধিক হাড় ভেঙেছে! অপারেশন করাতে হবে। ওর পরিবারের সঙ্গে কথা বলে রেফার করা হয়, জানান নার্স।
❏ মোড়ের মাথায় গতিতে চলে গাড়ি। স্পিড ব্রেকার বসানোর কথা প্রশাসনকে জানানো হবে, জানান স্থানীয়রা।
রাস্তার ওপারে মামার বাড়ি। সাড়ে তিন বছরের শিশুটি বোঝে না বাড়ি আর মামার বাড়ির মাঝে পিচ ঢালা উন্নয়নের রাস্তায় মৃত্যু দূত চলাচল করে! শুক্রবার বেলা সাড়ে দশটার সময় মামার বাড়ি থেকে এক দৌড়ে রাস্তা পার করতে গিয়ে মারুতির সামনে পড়ে যায়। ছোট্ট শিশুর পায়ের মাংস থেতলে দিয়ে চলে যায় মারুতি। ঘটনাটি ঘটেছে গ্রামীণ হাওড়ার জয়পুর থানার মাখালদহ গ্রামে। এলাকায় উত্তেজনা।
মাখালদহ গ্রামের বছর পঁচিশের উজ্জ্বলা রায়ের শ্বশুর বাড়ি ও বাপের বাড়ির মাঝে চলে গিয়েছে জয়পুর-খালনা ঝাঁ চকচকে সড়ক। লরি, বাস, ছোট গাড়ি দিনভর চলাচল করে। ওই রাস্তার গায়ে উজ্জ্বলার বাপের বাড়ি। শুক্রবার সকাল ৯টার সময় মামার বাড়িতে এসেছিল ছোট্ট ছেলেটি। ঘন্টা দেড়েক পর হঠাত করে রাস্তার ওপারে মায়ের কাছে ফিরে যাওয়ার চেষ্টা করে। রাস্তা পার করতে যেতেই দ্রুত গতিতে আসা একটি মারুতি ভ্যানের সামনে পড়ে যায়। বছর আটান্নর চালক ব্রেক চাপলেও রুখতে পারেনি। সাইডে ধাক্কা লেগে ছিটকে যায়। পিছনের চাকায় ছোট পা থেতলে একাধিক হাড় ভেঙে যায় বলে জানা গেছে। গাড়িটিও পাশের একটি গাছে গিয়ে ধাক্কা মারে। রাস্তায় পড়ে যন্ত্রণায় কাতরাতে থাকা ছোট্ট শিশুকে বাইকে চাপিয়ে স্থানীয়রা চলে যায় অমরাগড়ি বিবিধর গ্রামীণ হাসপাতালে।
বিবিধর গ্রামীণ হাসপাতালের এক নার্স জানান, শিশুটিকে নিয়ে আসা হয়েছিল। কিন্তু পায়ের অবস্থা অত্যন্ত খারাপ। থেতলে গিয়েছে। একাধিক হাড় ভেঙেছে। অপারেশন করাতে হবে। ওঁর পরিবারের সঙ্গে কথা বলে রেফার করা হয়।
মা উজ্জ্বলাদেবী মাটির ঘরের ঘুপচি দালানে বারেবারে মূর্ছা যাচ্ছে। পরিবার ও স্থানীয় লোকজন জানান, চোখের সামনে এমন ঘটনা ঘটবে বুঝে উঠতে পারছি না। গাড়ির চালক চেষ্টা করেছিল রুখবার কিন্তু গাড়ির গতি থাকায় নিয়ন্ত্রণ করতে পারেননি। শিশুকে রাস্তা থেকে তুলে ওই অবস্থাতেই হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। ওখান থেকে অন্যত্র রেফার করা হয়েছে। আটান্ন বছর বয়সি চালক দুর্ঘটনায় অল্প আহত হয়েছেন। শিশুটির জন্য কেঁদে চলেছেন। তিনি জানান, দীর্ঘ ২৫বছর গাড়ি চালিয়ে সংসার চালাচ্ছেন। এমন ঘটনা কোনদিন ঘটেনি। শিশুটি হঠাতি রাস্তা পার হতে যায়। বামদিকে গাড়ি কাটিয়েও নিয়েছিলাম। কিন্তু সাইডে ধাক্কা লেগে যায়। রাস্তার পাশে তাল গাছ পড়েছিল তার উপর গাড়িটির চাকা উঠে যায়। ৫জন যাত্রী ছিল গাড়িতে। তারাও অল্পবিস্তর চোট পেয়েছে। শিশুটি এভাবে রাস্তা পার করবে কি করে বুঝি।
ঘটনার পরেই জয়পুর থানার পুলিশের একটি টিম ঘটনাস্থলে আসে। পরিবারের সঙ্গে কথা বলে শিশুটির বিষয় তথ্য নেন। চালকের সঙ্গেও কথা বলেন। গাড়ির গতি থাকার কারণে চালক গাড়ি নিয়ন্ত্রণ করতে পারেনি বলে পুলিশের প্রাথমিক অনুমান।
স্থানীয়দের অভিযোগ, ঝাঁ চকচকে রাস্তা হওয়ায় গাড়ি গতিতে চলাচল করে। বাঁক মোড় থাকা স্বত্বেও গাড়ির গতি বেশি থাকায় এমন মর্মান্তিক দুর্ঘটনা। স্পিড ব্রেকার বসানোর কথা প্রশাসনকে জানানো হবে।