মঞ্চে দিদির পাশে দাদাকে দেখতে পেল না মেদিনীপুর দলে শুভেন্দুকে নিয়ে কৌশলী তৃণমূল

মুখে না বলেও ঈঙ্গিতে স্মরণ করিয়ে দিলেন একটা অধিকারী নিয়ে তিনি লড়াইয়ে নামেননি। লড়াইয়ের ময়দান থেকে জয় ছিনিয়ে আনতে এক ইঞ্চিও ছাড়বেন না তিনি।

কল্যাণ অধিকারী

হাইলাইটস
❏ শুভেন্দু যতক্ষণ দলে থাকছে আক্রমণের পথে যাচ্ছে না তৃণমূল
❏ মেদিনীপুর সভা থেকে বিজেপিকে আক্রমণ শানালেও শুভেন্দু বিষয় কৌশলী
❏ দিদির সভা শুরু হতেই বাড়ি থেকে কলকাতার পথে রওনা দিলেন শুভেন্দু
❏ একুশের লড়াইয়ের আগে অগোছাল ঘর গুছিয়ে নেওয়ার শেষ চেষ্টায় তৃণমূল

রাজনীতির লড়াই তাঁর কাছে নতুন কিছু নয়। একসময় লক্ষ্য ছিল জ্যোতি বসু তারপর বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। রজ্যে সরকার পরিবর্তন করেও তাঁর নামের পাশে লড়াইটা ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে রয়েছে। তিনি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সোমবার পড়ন্ত বিকেলে মেদিনীপুর কলেজ-কলেজিয়েট স্কুল মাঠে সভা করলেন। মুখে না বলেও ঈঙ্গিতে স্মরণ করিয়ে দিলেন একটা অধিকারী নিয়ে তিনি লড়াইয়ে নামেননি। লড়াইয়ের ময়দান থেকে জয় ছিনিয়ে আনতে এক ইঞ্চিও ছাড়বেন না তিনি।

একুশের লড়াইয়ের আগে অগোছাল ঘর গুছিয়ে নেওয়ার পালা। লড়াইয়ে নামতে হবে এক সঙ্গে। কিন্তু একা শুভেন্দুতে রক্ষা নেই, সঙ্গে আবার দোসর হলেন রাজীব। স্নেহের শুভেন্দুকে দিয়েছিলেন রাজ্যের পরিবহণ মন্ত্রিত্ব। অন্যজন রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর নামের পাশে সেচমন্ত্রী তারপর বনমন্ত্রীর দপ্তর। শুভেন্দু-পর্বের মধ্যেই তিনিও মুখ খুলেছেন। দল বিব্রত হয়েছে। কিন্তু মেদিনীপুরের গড় শুভেন্দু দিদিকে এড়িয়ে যেতে অন্যত্র ঘুরে বেড়াচ্ছেন। দিদি মেদিনীপুরে জনসভা করছেন অথচ পাশের সিটে স্নেহের শুভেন্দু নেই। শুধু শুভেন্দু নয় দেখা নেই পুরো অধিকারী পরিবারের। রবিবার থেকেই রেল শহর জুড়ে দিদির সমর্থনে পোস্টারে ছয়লাপ। অনেকেই আশা করেছিলেন অধিকারী পরিবারের কেউ না কেউ থাকবেন। কিন্তু কোথায় কি আসল না কেউ। সমস্ত বক্তব্যে শুভেন্দু অধিকারীর নাম নিলেন না ঠিকই। কিন্তু নিশানায় যে তিনিই তা হাবেভাবে বুঝিয়ে দিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

দলে টিম পিকে আসার পর থেকে চাপ বেড়েছে বিধায়কদের। বেশ বসে বসে কাজ হচ্ছিল। মাথায় বিস্তর চাপ দিয়ে দিল পিকে। কর্পোরেট বলেও কেউ কেউ গায়ের ঝাল ঝাড়ছে। তৃণমূলকে ছেড়েছে কোচবিহারের মিহির। মন্ত্রিত্ব ছেড়ে দিয়েছেন শুভেন্দু। এবার দলের সঙ্গে সম্পর্ক ত্যাগ করার চেষ্টায়। কিন্তু সোমবার বিকেলে মেদিনীপুরে জনসভায় দাঁড়িয়ে মমতার হুঙ্কার পৌঁছেছে সুদূর দিল্লি পর্যন্ত। যদিও তার আগে উত্তরকন্যা অভিযানে বিজেপি অলআউট আক্রমণ করেছে। পুলিশের জল কামান, কাঁদানে গ্যাসের সামনে ব্যারিকেট ভাঙার চেষ্টা, পাথর ছুঁড়ে পুলিশকে আক্রমণ এ যেন নবান্ন অভিযানের প্রতিরূপ। সমস্তটা যে তাঁর কানেও পৌঁছেছে তা একপ্রকার নিশ্চিত। এর আগে তিনি বিজেপিকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে বলেছেন, বহিরাগতদের দিয়ে বাংলা দখল করতে দেব না। এ দিন তিনি বিজেপি-র বিরুদ্ধে ‘বিভাজনের রাজনীতি’ করার অভিযোগ এনেছেন। তিনি বলেছেন, ওরা ভাবে হিন্দু-মুসলমান করে ভাগ করে দাও ! দাঙ্গায় ভাগ করে দাও !

রবিবার সন্ধেয় পৌঁছে যান মেদিনীপুর। রবিবার বিকেলে সভামঞ্চে দাঁড়িয়ে বিজেপিকে তুলোধোনা করবেন এটা স্বাভাবিক ছিল। কিন্তু শুভেন্দুকে নিয়ে কি বলবেন তা জানার আগ্রহ ছিল রাজ্যবাসির। যদিও বক্তব্যে শুভেন্দুকে নিয়ে খুব বেশি সময় দিলেন না। ব্ল্যাকমেল, দর কষাকষিতে লাভ নেই। এইটুকু ছাড়া বার দুয়েক অধিকারী নাম নেওয়া ছাড়া বাকিটা রাজ্যের উন্নয়ন নিয়ে সুদূর প্রসারী পরিকল্পনার খসড়া এবং বিজেপিকে আক্রমণ করেই কাটিয়ে দিলেন। ততক্ষণে কলকাতায় পৌঁছে যান শুভেন্দু। রাজ্যের সমস্ত লাইমলাইট টানতে শুরু করে দেন তিনি। তাঁর কালো রঙের গাড়ির সামনে পিছনে ক্যামেরা হাতে প্রত্যেকটি চ্যানেল। বিব্রত হয়ে ফিরে গেলেন কাঁথির দিকে। শুভেন্দুকে নিয়ে টানাপড়েন আর কত দিন চলবে। তিনি কোন পথে এটাই তাঁর মুখে শুনতে চাইছে তৃণমূলও। মেদিনীপুরে দিদির সভায় না থাকলেও যতক্ষণ না দল ছাড়ছে আক্রমণের পথে যাচ্ছে না তৃণমূল।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *