রহস্যমৃত্যু শিল্পী শর্বরী দত্তের! অভিভাবকহারা হল পুরুষের ফ্যাশন ডিজাইন
কল্যাণ অধিকারী
❏ তিনি ছিলেন শিল্পী। এবং শিল্পী হিসেবে তাঁর অনন্য ভূমিকার প্রশংসা করেছেন বিখ্যাত ব্যাক্তিবর্গ।
❏ রহস্যময় মৃত্যু সবকিছু ওলটপালট করে দিল।
❏ ব্রড স্ট্রিটের বাড়ির নিচের তলায় সারাদিন পড়ে থাকলেন শৌচাগারে। ছেলে মেসেজ করলেন ‘মা’ কি করছে জানতে!
❏ সম্পত্তি নিয়ে ছেলের সঙ্গে বিবাদ একটা ছিল। সঙ্গে ছিল একাকীত্ব। বেঁচে থাকার ইচ্ছে হারাচ্ছিলেন।
❏ তাঁর অনুরাগীর সংখ্যায় কপিল দেব থেকে সুনীল গাওস্কর, শচীন তেন্ডুলকার, সৌরভ গাঙ্গুলি। ইমরান খান থেকে শোয়েব আখতার।
ব্রড স্ট্রিটের বাড়ির নিচের তলায় থাকতেন শর্বরী দত্ত। উপরতলার ঘর পুত্র অমলিন এবং পুত্রবধূ কনকলতার জন্য ছেড়ে দিয়েছিলেন। গোটা একটা দিন খোঁজ না পেয়েও ছেলে-বৌমা নিচে নেমে এসে ‘মা’ শর্বরী দত্ত’র খোঁজ নেয়নি। প্রায় ২৪ ঘন্টা পর বৃহস্পতিবার রাতে শৌচাগার থেকে উদ্ধার করা হয় তাঁর দেহ। তারপর থেকেই শুরুই হয়েছে রহস্যমৃত্যু নিয়ে বিভিন্ন প্রশ্ন।
তিনি ছিলেন শিল্পী। এবং শিল্পী হিসেবে তাঁর অনন্য ভূমিকার প্রশংসা করেছেন বিখ্যাত ব্যাক্তিবর্গ। আরও একটি পরিচয় তিনি একজন বিখ্যাত ফ্যাশন ডিজাইনার। এমন একজন ব্যক্তিত্বের রহস্যজনক মৃ্ত্যু ঘিরে কলকাতা তো বটেই দেশের অন্যান্য প্রান্ত থেকেও পরিচিতদের কাছে ফোন এসেছে।একজন বরেণ্য শিল্পীর রহস্যজনক ভাবে মৃত্যু ঘিরে বহু প্রশ্ন সামনে আসছে। সমস্ত ঘটনা তদন্তে মধ্যে রেখেছে পুলিশ। সম্পত্তি নিয়ে ছেলের সঙ্গে বিবাদ একটা ছিল। সঙ্গে ছিল একাকীত্ব। বেঁচে থাকার ইচ্ছে হারাচ্ছিলেন। ঘনিষ্ঠদের কাছে এসব কথাই বলেছিলেন বলে জানা গেছে। লকডাউনে একাধিক কাজ হাতছাড়া হয়েছে বলেও গুঞ্জন রয়েছে। পাশাপাশি অন্য কারণগুলো খতিয়ে দেখছে তদন্তকারী অফিসার।
চিকিৎসকদের দাবি, তেষট্টি বছরের শর্বরী দত্তর মৃত্যু হয়েছে মস্তিষ্কে অভ্যন্তরীণ রক্তক্ষরণের কারণে। তবে কি কোনভাবে শৌচাগারে পড়ে গিয়েছিলেন ? চরম অসুস্থ অবস্থায় কাউকে তিনি ডাকতে পারেননি ? শর্বরী দত্তের পুত্র অমলিন দত্ত সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, মা-এর সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক ছিল। ক’দিন আগে শান্তিনিকেতন থেকে একসঙ্গে ঘুরে এসেছেন! বুধবার সারাদিন ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করেছিলেন। বাড়ির উপরতলায় থেকেও কেন একটিবার নিচের তলায় মা-এর খোঁজ করলেন না ? তিনি বলেন, মেসেজ করা হয়েছিল কিন্তু কোন জবাব আসেনি। পুলিশের অন্য একটি সূত্র বলছে, ওঁনার মৃত্যু বহু ঘন্টা আগে হয়েছে। সেক্ষেত্রে ৩৬ঘন্টার সময় অনুমান করা হচ্ছে। জানা যাচ্ছে ওঁনার কানের পাশে এবং বাঁ পায়ের গোড়ালির কাছে ক্ষতচিহ্ন ! তাঁর মৃত্যু স্বাভাবিক নয়। রহস্যের চাদরে মোড়া।
শর্বরী দত্ত প্রথম যিনি পুরুষদের ফ্যাশন নিয়ে বিপ্লব এনেছিলেন। তাঁর কল্পনার রঙে সেজেছিল বিরাট দুনিয়া। তাঁর অনুরাগীর সংখ্যায় কে নেই। কপিল দেব থেকে শচীন তেন্ডুলকার, সৌরভ গাঙ্গুলি। ইমরান খান থেকে শোয়েব আকতার। তাঁর কথায়,”সৌন্দর্য পুরুষের মধ্যেও খুঁজে পাওয়া যায়। বাস্তবে সেটাই দেখিয়েছেন। ভারতীয় পোশাককে আন্তর্জাতিক সীমানায় পৌঁছে দেয়ার ক্ষেত্রে অসামান্য ভূমিকা নিয়েছেন। ইন্সপিরেশন ছাড়া কোনও সৃষ্টিই সম্ভব নয়। রঙিন ধুতির কদর শেখাতে অনেকগুলো বছর ব্যয় করেছেন। অবশেষে এসেছে সাফল্য। ১৯৯১ সাল প্রথম প্রদর্শনী তাও আবার পুরুষের পোশাক নিয়ে। অভিনব বলে মেনে নিয়েছিল দেশ। তারপর আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি।”
শর্বরী দও’র অস্বাভাবিক মৃত্যু নিয়ে ধোঁয়াশা অনেক। সমস্ত রহস্য রেখেই চলে গেছেন না ফেরার দেশে। বিনোদন দুনিয়ার সাজ পোষাক নিয়ে কাজ করা মানুষ ছিলেন। হঠাৎ খবরটা আসতেই শিল্পী জগতের অনেকেই চমকে গিয়েছেন। চেনা-পরিচিত মুখ বিদায় নিলেন চিরতরে। অনেকের বিশ্বাস হচ্ছে না শিল্পী শর্বরী দত্ত বেঁচে নেই।