স্কুল বন্ধ মোটর বাইক মেকানিকের ‘তালিম’ নিচ্ছে সুমন্তরা!
কল্যাণ অধিকারী
❏ মাধ্যমিকে বসার কথা ছিল কিন্তু লকডাউনে স্কুল বন্ধ থাকায় জীবন সংগ্রামকে সহজেই চিনিয়ে দিয়েছে।
❏ সেই সকাল থেকে বড় রাস্তার ধারে মোটর বাইক মেকানিকের ‘তালিম’ নিচ্ছে সুমন্তরা।
❏ কলেজে পড়ার ইচ্ছে থাকলেও বাড়ির পরিস্থিতি অনেকটাই বদলে দিয়েছে।
❏ হোটেল চলছে না দেখিয়ে কর্মচারীদের ছাড়িয়ে শিশু শ্রমিকদের দিয়ে কাজ করানো হচ্ছে!
❏ কমবয়সী মেয়েদের বিয়ে দেবার চেষ্টা চলছে। শৈশবদের বুঝিয়ে-সুজিয়ে কাজে লাগিয়ে দেওয়া হচ্ছে।
বেশ চলছিল পড়াশোনা। এ বছর মাধ্যমিকে বসার কথা ছিল তালবন্দি বেলায়েত আলী হাইস্কুল থেকে। কিন্তু করোনা ভাইরাসের জেরে ২৪ মার্চ মধ্যরাত থেকে সারা দেশজুড়ে শুরু হয় সম্পূর্ণ লকডাউন। সেই থেকে প্রায় ৬মাস বন্ধ হয়ে রয়েছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলি। স্কুলে পড়াশোনা বন্ধ থাকায় মোটর বাইক মেকানিকের কাজ শিখছে ষোল বছর বয়সের সুমন্ত (নাম পরিবর্তিত)।
পিতা জরির কাজ করে সংসার চালান। এক দাদা সেও এমব্রয়ডারি কাজ করে। সুমন্ত পড়াশোনায় ছোট থেকে ভালো। অভাব অনটনের মধ্যেও পড়াশোনা চালিয়ে যাচ্ছিল। এবছর মাধ্যমিকের মতন বড় পরীক্ষায় বসার কথা। দীর্ঘদিন চলা লকডাউনে মানুষের দৈনন্দিন অবস্থা চরম দুর্দশায় পড়েছে। কাজ হারিয়েছেন অনেকে। জরি কাজেও সমস্যায় শিল্পীরা। বহুক্ষেত্রে কাজ মিলছে না। স্কুলও বন্ধ। টিউশন শুরু হলেও মাইনে কেমনে দেবে সমস্যায় পরিবার। বাধ্য হয়ে ঘরে বসে না থেকে রানিহাটি-আমতা সড়কের পাশে মোটর বাইক মেকানিকের কাজ শিখছে একাধিক সুমন্ত।
সুমন্ত’র বাড়ি কর্মক্ষেত্র থেকে আরও দেড় কিমি দূরে ধূলোরবাঁধ এলাকায়। মালিকের বাইকের পিছনে বসে সকাল হলে কাজে চলে আসে। দুপুরে ফিরে যায় বাড়ি। বিকেলে ফিরে রাত সাড়ে ৯টা অবধি চলে কাজ। পড়াশোনা কীভাবে হচ্ছে প্রশ্ন শুনে মাথা ঝুঁকিয়ে নেয় একটা শৈশব। সুমন্ত’র কথায়, “মাধ্যমিক দেবার প্রস্তুতি যে ভাবে শুরু হয়েছিল লকডাউনের পর থেকে সেসব থমকে গেছে। স্কুল কত মাস যায়নি। স্যারেদের সঙ্গেও যোগাযোগ নেই। বাড়িতে প্রস্তুতিও সেভাবে হচ্ছে না। বুঝতেই পারছি না মাধ্যমিক কীভাবে দেব! ইচ্ছে তো রয়েছে বড় হয়ে কলেজে পড়ার। কিন্তু বাড়ির পরিস্থিতি অনেকটাই বদলে দিয়েছে। এখন কাজের মধ্যে দিনের বেশিভাগ সময় চলে যায়। বাড়ি ফিরে খুব একটা পড়াশোনা হয় না। ক্লান্তি দুচোখে ঢলে আসে।”
একটি সূত্র বলছে, গ্রামীণ হাওড়ার বিভিন্ন এলাকায় শিশু শ্রমিকের সংখ্যা বাড়ছে। ১৬নং জাতীয় সড়কের ধারে একাধিক ধাবায় বাসন মাজার কাজ থেকে জল বয়ে আনা সব কাজ করানো হচ্ছে শৈশব দিয়ে। হোটেল চলছে না দেখিয়ে কাজের লোকদের ছাড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে! তাদের জায়গায় পনের-ষোল বছর বয়সী শিশুরা কাজ নিচ্ছে। মোটর বাইক মেকানিকের কাজে যোগদান করেছে অনেক শিশু শ্রমিক। সেই সকাল থেকে একেবারে রাত শুরু পর্যন্ত চলে কাজ। মাস্ক পড়ার বালাই নেই। রাস্তার ধারে ধুলোর থেকে বেশি বিপদ ‘করোনায়’। মুখে মাস্ক দিয়ে কাজ চলছে না কোথাও। বাবা-মায়ের সংসারের হাল ফেরাতে শিশু শ্রমিকরা মেহনতি কাজ বিপদের মধ্যে করছে।
শৈশব নিয়ে দীর্ঘদিন কাজ করে চলেছেন মলিনা মাইতি। তাঁর কথায়, করোনা ভাইরাসের জেরে মানুষের দৈনন্দিন জীবনে অনেকটাই প্রভাব পড়েছে। বহুক্ষেত্রে দেখা গেছে, কমবয়সী মেয়েদের বিয়ে দেবার চেষ্টা চলছে। ১৫-১৬ বছরের শৈশবদের বুঝিয়ে-সুজিয়ে কাজে লাগিয়ে দেওয়া হচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে ইতিমধ্যে আলোচনা হয়েছে। আমরা বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রচারে নামব। স্থানীয় ক্লাব সংগঠনের সঙ্গেও কথা বলব। প্রশাসনের সঙ্গেও দেখা করব।
ছবিঃ সংগৃহীত।
ReplyForward |