স্বপ্নের ঘর ভাঙতে দেখে কেঁদে ফেললেন কঙ্গনা, বম্বে হাইকোর্টে জবাব দিতে হবে বিএমসি-কে

কল্যাণ অধিকারী

❏ প্রতিবাদের কন্ঠ রোধ করতে বুলডোজার চালানোর অভিযোগ উঠল বিএমসি-র বিরুদ্ধে।
❏ আখেরে বিজেপির পালে হাওয়া তুলে দেওয়া সে কথাই হাবে ভাবে বুঝিয়ে দিয়েছেন এনসিপি সুপ্রিমো শরদ পাওয়ার।
❏ দেশের বাণিজ্য নগরী মুম্বইয়ে বলিউডে স্বজনপোষণ এবং অবৈধ বিল্ডিং নির্মাণ নতুন কোনও বিষয় নয়।
❏ বিএমসি আখেরে প্রতিবাদের স্বর বন্ধ করে দিতে চাইছে, এমনটাই ক্ষোভ জাহির করেছে কঙ্গনা।
❏ একজন মহিলার প্রতিবাদ করার অধিকার কি গণতান্ত্রিক দেশে কমে আসছে প্রশ্ন সর্বত্র!

সুশান্ত মৃত্যু রহস্য নিয়ে মুম্বই পুলিশের তদন্ত আগেই প্রশ্নের সম্মুখীন হয়েছে। এবার প্রতিবাদের কন্ঠ রোধ করতে বুলডোজার চালানোর অভিযোগ উঠল বৃহন্মুম্বই পুরসভা (বিএমসি) বিরুদ্ধে। ঘটনায় মহারাষ্ট্র সরকারের সঙ্গে দ্বন্দ্ব আরও প্রকট হল কঙ্গনার। একিসঙ্গে কঙ্গনাকে প্রচারে মধ্যমণি করে তুলল মহারাষ্ট্র সরকার। আখেরে বিজেপির পালে হাওয়া তুলে দেওয়া সে কথাই হাবে ভাবে বুঝিয়ে দিয়েছেন এনসিপি সুপ্রিমো শরদ পাওয়ার।

উঠতি তারকা সুশান্ত সিং রাজপুতের মৃত্যুর পর বলিউডে স্বজনপোষণ নিয়ে সরব হয়েছিলেন কঙ্গনা রানাউত। তারপর মহারাষ্ট্র সরকারের তদন্ত নিয়েও প্রশ্ন তুলেছিলেন তিনি! পরবর্তী সময় ‘মুম্বই যেন মিনি পাকিস্তান’ মন্তব্য আগুনে ঘৃতাহুতি দিয়েছে কঙ্গনা। বিতর্কের গনগণে আঁচে পুড়তে হয়েছে কঙ্গনাকে। বুধবার মুম্বইয়ের মণিকর্ণিকা ফিল্মস অফিসের একাংশ ভেঙে দেয় বিএমসি। যদিও ততক্ষণে বম্বে হাইকোর্ট এতে স্থগিতাদেশ দিয়েছে। কিন্তু প্রশ্ন উঠছে, একজন মহিলার প্রতিবাদ করার অধিকার কি গণতান্ত্রিক দেশে কমে আসছে! পরিশ্রমের টাকায় বানানো ফিল্মস অফিসে ভাঙচুর করে বিএমসি আখেরে প্রতিবাদের স্বর বন্ধ করে দিতে চাইছে, এমনটাই ক্ষোভ জাহির করেছে কঙ্গনা।

দেশের বাণিজ্য নগরী মুম্বইয়ে বলিউডে স্বজনপোষণ এবং অবৈধ বিল্ডিং নির্মাণ নতুন কোনও বিষয় নয়। কিন্তু ফিল্মস অফিস ভেঙে দিতে বিএমসি-র এত আগ্রাসী ভূমিকা দেখে জবাব চেয়েছে বম্বে হাইকোর্টও। এমনিতেই সুশান্ত মৃত্যু তদন্তভার কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থায় যাওয়ায় কোণঠাসা মুম্বই পুলিশ। তার উপর কঙ্গনা রানাউতের ফিল্মস অফিসে বুলডোজার চালানো নিয়ে ল্যাজেগোবরে অবস্থা মহারাষ্ট্র সরকারের। তাদের অপর শরিক এনসিপি তো রীতিমত ক্ষোভ দেখিয়েছে। মহারাষ্ট্র সরকারের সঙ্গে দ্বন্দ্ব জিইয়ে রেখে মানালির বাড়ি থেকে বুধবারই মুম্বইয়ে পা রেখেছেন অভিনেত্রী কঙ্গনা। তারপর থেকে বাল ঠাকরের পুত্র উদ্ধব ঠাকরেকে লাগাতার আক্রমণ শানাচ্ছেন। পরিস্থিতি এমন যে তুই-তোকারি পর্যায়ে পৌঁছেছে। কঙ্গনার সাফ জবাব, ‘আজ আমার ঘর ভেঙেছে, কাল তোর অহংকার ভাঙবে’।

মহারাষ্ট্র সরকার শিবসেনা-এনসিপি এবং কংগ্রেস-এর জোট সরকার। ফলে কোনকিছু ঘটনা ঘটলে তার ভাগীদার হতে হবে শিবসেনার জোটের শরিক এনসিপি এবং কংগ্রেসকে। যদিও ‘স্পিকটি নট’ কংগ্রেস। কিন্তু পোড় খাওয়া নেতা তথা এনসিপি সুপ্রিমো শরদ পাওয়ার ঘটনায় সিঁদুরে মেঘ দেখছেন। এমন ঘটনা উপেক্ষা করাই শ্রেয় বলে মন্তব্য করেছেন তিনি। তাঁর জবাব স্পষ্ট, বিএমসি অন্য পন্থা দেখতে পারতো। ভাঙচুর করে প্রচারের সমস্ত আলো ঘরে তুললো কঙ্গনা। দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে এমন অনেক গেম তিনি দেখেছেন। কঙ্গনাকে সামনে রেখে বিজেপি আরও বড় গেম খেলতে চাইবে। যা আখেরে বাল ঠাকরের পুত্র উদ্ধব ঠাকরের ঘাড়ে নিঃশ্বাস ফেলার মতো অবস্থাও তৈরি হতে পারে।

দেশের সবথেকে ধনী বৃহন্মুম্বই পুরসভা (বিএমসি) শিবসেনার দখলে রয়েছে। কিন্তু বিএমসি যেভাবে বুলডোজার নিয়ে অফিস ভাঙার কাজ করেছে তাতে করে আরও কঠিন বাক্য বিনিময় ও আইন-আদালত হবার সম্ভাবনা। কঙ্গনার ছুঁড়ে দেওয়া চ্যালেঞ্জ সামলাতে হবে বিএমসিকে এবং মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী উদ্ধব ঠাকরেকে। ইতিমধ্যে সোশ্যাল মিডিয়ায় ভিডিও পোস্ট করে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়েছেন কঙ্গনা। আগামীদিনে কঙ্গনার বাক্যবাণ চলতে থাকবে। সংবাদমাধ্যমে প্রচার পাবে অভিনেত্রী। এরমধ্যেই পাশে পেয়েছেন বলিউড অভিনেতা অনুপম খেরকে। তিনি বলেছেন, “বুলিডোজার চালানো হয়েছে। কারও সম্পত্তি এভাবে ভেঙে দেওয়া যায় না।”

যতদিন যাবে আন্দোলনের ঝাঁজ ক্রমাগত বাড়াবেন। ইতিমধ্যে কঙ্গনা স্মরণ করিয়ে দিয়েছে মুম্বই সরকারকে। এদিন বলেছেন, “সময়ের চাকা, মনে রেখো, কোনও দিন এক জায়গায় থেমে থাকে না।” এমন হুমকি দিয়ে কার্যত লড়ায়ের প্রারম্ভিক আঘাত দিয়ে রাখলেন এমনটাই মত বিশেষজ্ঞদের।