হাওড়া স্টেশনে যাত্রী-বিক্ষোভে রেল পুলিশের লাঠিপেটা, যাত্রা যন্ত্রণায় বদল

কল্যাণ অধিকারী

হাইলাইটস
দাবি স্পেশাল ট্রেনে ওঠার, হাওড়া স্টেশনে বিক্ষোভ যাত্রীদের।
স্টেশনের গেট আটকে দেয় রেল পুলিশ, তুমুল বিক্ষোভ যাত্রীদের।
পরিস্থিতি সামাল দিতে লাঠিপেটা করলো রেল পুলিশ।
আহত হলেন বেশ কয়েকজন যাত্রী।
সকাল-সন্ধে কিছু লোকাল ট্রেন চালুর বিষয় রেলের জিএম-এর সঙ্গে কথা মুখ্যসচিবের।

শনিবার সন্ধে। বাড়ি ফিরবার তাড়াহুড়ো হাওড়া বাসস্ট্যান্ড এলাকায়। তখনি হাওড়া স্টেশনের সামনে থেকে জনা পঞ্চাশেক মহিলা-পুরুষ ছুটতে ছুটতে বেরিয়ে আসছেন। পিছনে লাঠি হাতে রণমূর্তিতে রেল পুলিশ। যে যেদিকে পারলেন ছুটে পালালেন। পুলিশের লাঠির আঘাতে আহত হয়ে রেলিংয়ের গায়ে বসে ছটফট করছেন এক মধ্যবয়সী ব্যক্তি। বসে থাকতে থাকতে হেলে পড়লেন পিচ ঢালা রাস্তায়। কয়েকজন এগিয়ে এসে সোজা করে বসিয়ে মাথায় জল দিচ্ছেন। পকেটে অফিসের কার্ড। মুখে সবুজ রঙের টু লেয়ার মাস্ক। শরীর তখনও থরথর করে কাঁপছে। এই চিত্র শনিবার সন্ধের হাওড়া স্টেশনের সামনের।

যাত্রীদের দাবি উঠতে দিতে হবে স্পেশাল ট্রেনে। রেল পুলিশের দাবি, স্পেশাল ট্রেন শুধুমাত্র রেলকর্মীদের যাতায়াতের জন্য চালানো হচ্ছে। চিৎকার-চেঁচামেচি ও বিক্ষোভে উত্তেজনা ছড়ায় স্টেশন চত্বরে। যাত্রীদের কথায়, শনিবার বাড়ি ফিরতে সমস্যায় পড়ে বাধ্য হয়ে স্টেশনে চলে আসেন তাঁরা। ৬টা পঞ্চাশের স্পেশাল ট্রেনে চড়ে বাড়ি ফিরবার শেষ চেষ্টা করেছিল। সে কথা শুনতে চায়নি রেল পুলিশ। আটকে দেয় যাত্রীদের। এমনকি গেট বন্ধ করে দেওয়া হয়। কথাবার্তার মাঝেই লাঠি চালাতে শুরু করে দেয়। রেল পুলিশ কাউকে বাদ দেয়নি। বিভিন্ন বয়সী মহিলা পুরুষদের প্রচন্ড মারধোর করেছে।

করোনা আবহের মধ্যেই রুজি-রুটির টানে একপ্রকার বাধ্য হয়ে বাড়ি থেকে শহরে কাজ করতে এসেছেন সাধারণ মানুষ। সপ্তাহ শেষে বাড়ি ফিরবার বাস অপ্রতুল। কেউ যাবেন বর্ধমান, কারও বাড়ি চন্দনপুর। গুড়াপের এক যাত্রীর কথায়, ক’দিন আগেই লিলুয়া স্টেশনে যাত্রী বিক্ষোভের ঘটনার পর অনেকেই ভেবেছিল সাধারণ মানুষের অসহায় অবস্থার কথা ভাববে রেল। কিন্তু ভাবলো কোথায়! ফাঁকা ট্রেনে হাতে গোনা কয়েকজন রেলকর্মীকে নিয়ে ট্রেন প্রতিদিন ছুটছে। আর সাধারণ মানুষ নিত্যদিন দুর্ভোগে পড়ছে। হাওড়া বাসস্ট্যান্ড থেকে বর্ধমানের বাস নেই। একমাত্র ভরসা ট্রেন। সেখানেও যাত্রা করবার অধিকার শুধুমাত্র রেলকর্মীদের। তাহলে বাড়ি ফিরবে কেমনে। অসহনীয় হয়ে উঠছে প্রতিদিনের যাত্রা যন্ত্রণা।

মঙ্গলবার আনলক সংক্রান্ত নতুন নির্দেশিকা জারি করেছে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক। নভেম্বরের শেষ পর্যন্ত আনলক ৫-এর নির্দেশিকাই বলবৎ রাখা হয়েছে। ফলে লোকাল ট্রেন চালুর বিষয় হতাশ হয়ে পড়েছেন সাধারণ মানুষ। শহর কলকাতার মেট্রো চালু হয়েছে। চলছে বেসরকারি বাস। শুধুমাত্র বন্ধ শহরের সঙ্গে গ্রামাঞ্চল এবং মফস্বলের যোগাযোগের সহজতর মাধ্যম লোকাল ট্রেন পরিষেবা। সেই পরিষেবা বন্ধ থাকায় নাজেহাল সাধারণ মানুষ। কখনও উঠে পড়ছেন স্টাফ স্পেশাল ট্রেনে। তো কখনও স্টেশনে ট্রেন আটকে বিক্ষোভ দেখিয়েছেন। করোনার সংক্রমণ ঠেকাতেই লোকাল ট্রেন বন্ধের সিদ্ধান্ত। কিন্তু মানুষের ধৈর্যের বাঁধ যে ভাঙছে তা প্রমাণিত হল শনিবার সন্ধেয় হাওড়া স্টেশনের গেটে।

তবে লোকাল ট্রেন চালুর বিষয় আশার খবর দিয়েছে রাজ্য। এদিন রেলের জিএমের সঙ্গে কথা বলেছেন মুখ্যসচিব আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়। দু-এক দিনের মধ্যে রেলের সঙ্গে কথা এমনটাই সূত্রের খবর। সকাল ও সন্ধে কিছু লোকাল ট্রেন চালানোর জন্য রেলের সঙ্গে কথা বলবে রাজ্য এমনটাই জানা যাচ্ছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *