সারদা-রোজভ্যালি তদন্তে সূচনায় থাকা গতি ‘উপসংহারে’ পৌঁছাবে তো! হতাশ ভুক্তভোগী আমানতকারীরা
কল্যাণ অধিকারী
০ গরিবের টাকা হাতিয়ে নেওয়া সবচেয়ে বড় সুবিধাভোগীরা জেলের বাইরে।
০ আদৌ কি টাকা মিলবে আমানতকারীদের জানেনা ওঁরা।
০ জেল থেকে বেরিয়ে ওঁরা এখন মূলস্রোতে। কেউ আবার দল পাল্টেছে। তদন্তেরও গতি নেই।
০ হতাশ ভুক্তভোগী আমানতকারীরা।
০ সেদিনের পাশে থাকার বার্তা দেওয়া শহরের বিশ্বাসকারী মানুষগুলো তবে কি ঠকবাজ ছিল!
বছর ঘুরলে রাজ্যে একুশের বিধানসভা নির্বাচন। রাজনৈতিকভাবে তপ্ত হয়ে উঠবে রাজ্য। একিসঙ্গে সারদা কেলেঙ্কারি সহ একাধিক তদন্তে ঠান্ডা ঘরে থাকা ফাইল বের করে তদন্তের গতি বাড়াবে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা! কিন্তু গরিবের টাকা হাতিয়ে নেওয়া সবচেয়ে বড় সুবিধাভোগীরা তো জেলের বাইরে। আদৌ কি টাকা মিলবে আমানতকারীদের জানেনা কেউ। শুধু ভোট এলেই প্রসঙ্গ ওঠে। মনে পড়ে আমানতকারীদের। বাকি সময় ঠান্ডা ঘরে ফাইল!
২০১৪ সালের মে মাস। সুপ্রিম কোর্ট সারদা মামলার তদন্ত ভার সিবিআইয়ের হাতে তুলে দেওয়া হয়। দুই বিচারপতি সি নাগাপ্পন এবং বিচারপতি টি এস ঠাকুরের ডিভিশন বেঞ্চ এই রায় দেয়। একিসঙ্গে ১৭ হাজার কোটি টাকা তছরুপের অভিযোগ ছিল রোজভ্যালি দুর্নীতি মামলায়। দীর্ঘ ৬বছর তদন্ত চালিয়েছে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা। একাধিক প্রভাবশালী রাজনৈতিক ব্যক্তি গ্রেফতার হয়েছেন। আবার জামিনে মুক্ত হয়ে মূলস্রোতে ফিরে এসেছেন। নিজস্ব রাজনৈতিক দলের কাজেও পুরোপুরি যুক্ত হয়েছেন। তাঁরা এখন সমাজের আম-জনতার সেবার কাজে ‘ভদ্রলোক’ এ পরিণত ! কিন্তু গরিব মানুষের গচ্ছিত টাকা আজও ফিরিয়ে দিতে পারেনি তদন্তকারী সংস্থা। তবুও সাধারণ মানুষ অপেক্ষায় ফিরে পাবে তাদের গচ্ছিত টাকা।
২০১৩ সালের ২৩ এপ্রিল। সারদা আর্থিক কেলেঙ্কারিতে জড়িত থাকায় রাজ্য সরকার কাশ্মীরের শোনমার্গ থেকে গ্রেফতার করেছিল সারদা গোষ্ঠীর কর্ণধার সুদীপ্ত সেন এবং দেবযানী মুখোপাধ্যায়কে। তারপর ভাগীরথী দিয়ে বয়েছে সহস্র কিউসেক জল। সারদা চিট ফান্ড হোক বা রোজভ্যালি কাণ্ড গ্রেফতারের তালিকায় সাংসদ তাপস পাল, সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়, পরিবহন মন্ত্রী মদন মিত্র, রাজ্যসভার সাংসদ সৃঞ্জয় বসু, কুণাল ঘোষ ইত্যাদি ইত্যাদি নাম। প্রত্যেকে এখন সমাজে সুস্থ অক্সিজেন নিচ্ছে। শুধুমাত্র তাপস পাল প্রয়াত হয়েছেন। কিন্তু সারদা-রোজভ্যালিতে জমা দেওয়া টাকা কবে পাবেন ? আদৌ পাবেন কিনা, তা নিয়ে দীর্ঘ সাত বছরে রয়ে গিয়েছে বিস্তর সংশয়।

বেআইনি অর্থলগ্নি সংস্থার হাতে প্রতারিত এবং এজেন্টদের নিয়ে লম্বা মিছিলে পায়ে হেঁটে আন্দোলনের ফল কি নেতারাই শুধু পেল! একটা সময় সারদা-কাণ্ডে প্রতারিতদের জন্য সুবিচার আদায়ের লড়াইয়ে ভূমিকা নিয়েছিলেন আব্দুল মান্নান, বিকাশ রঞ্জন ভট্টাচার্য এবং সুজন চক্রবর্তী জুটি। ২০১৬ সালের বিধানসভা ভোটে জিতে যাদবপুরের বিধায়ক হন সুজন চক্রবর্তী, চাঁপদানির বিধায়ক হয়েছেন আবদুল মান্নান এবং চলতি বছর রাজ্যসভার সাংসদ হয়েছেন বিকাশ রঞ্জন ভট্টাচার্য। সেদিনের লড়াইয়ের স্বীকৃতি দিয়েছে আম জনতা থেকে দল। কিন্তু চিটফান্ডে টাকা রেখে আমানতকারীরা ফেরত পাননি টাকা। শুধুমাত্র হয়রানির শিকার হয়েছেন। তাহলে মহানগরে লম্বা মিছিলে পা মিলিয়ে কি পেল আমানতকারী থেকে এজেন্টরা ? প্রশ্ন তুলছেন ভুক্তভোগী সাধারণ মানুষজন।
তাঁদের আরও বক্তব্য, জনসাধারণের প্রায় ১০হাজার কোটি টাকা কোথায় গেল? সুদীপ্ত সেন, দেবযানী মুখোপাধ্যায়ের কাছ থেকে সত্যটা প্রকাশিত হল না কেন আজও? লাল ডাইরিতে কি লেখা ছিল? কোথায় গেছে সেটি? সারদাকাণ্ড নাম জড়িয়েছে রাজীব কুমারের ! তাঁকে নিয়ে কত কি নাই কি ঘটলো। সারদা আর্থিক তছরুপ মামলায় যে সিট গঠন করা হয়, তার মাথাতেই ছিলেন তিনি। সেই রাজীব কুমারকে কলকাতা পুলিশ কমিশনারের পদ থেকে করে দেওয়া হয় সিআইডি-র এডিজি। তারপর এখন আবার তিনি আইপিএস থেকে হয়ে গেছেন তথ্য ও প্রযুক্তি দপ্তরের প্রধান সচিব। তদন্তেও গতি নেই তদন্তকারী সংস্থার। ফলে রাজীব কুমার-সিবিআই নাটকীয় মোড় এখন অতীত।
আমানতকারীদের একাংশের কথায়, কান টানলে মাথা আসে। ঠিকি কথা। মাথা আসলো আবার ফিরে গেল নিজেদের বৃত্তে। মিডল্যান্ড পার্ক, লাল ডাইরি, প্রভাবশালী, দলবদলে গা ঝেড়ে ফেলা নেতার মতো সব চুপচাপ। দোষীদের আদৌ শাস্তি হবে কিনা জিজ্ঞাসা করতে চায় না। তিল তিল করে জমানো টাকা ফিরে পাবে কি না জানেনা। ভুক্তভোগী আমানতকারীরা শুধুমাত্র এটুকু জানতে চায় মানুষের এত টাকা কোথায় গেল? সেদিনের পাশে থাকার বার্তা দেওয়া শহরের বিশ্বাসকারী মানুষগুলো তবে কি ঠকবাজ ছিল? নিজেদের জেতার রাস্তা খুঁজতে ব্যবহার করেছে আমানতকারী থেকে এজেন্টদের ! একা সারদা বা রোজ ভ্যালি শুধু নয়। এমন শ’য়ে শ’য়ে ভুঁইফোড় সংস্থা হাজার-হাজার কোটি টাকা নিয়ে সরে পড়েছে। কি করতে পারলো তদন্তকারী সংস্থা ! সেদিন তদন্ত হাতে নিতে আশ্বস্ত হওয়া গরীব মানুষগুলো আজ আর প্রশ্ন করে না। নিজেদের কপালকে দোষারোপ করে।
সূচনায় থাকা সুদীপ্ত সেন জেলের চার দেওয়ালে অপ্রাপ্তির দীর্ঘশ্বাস ফেলছে। আর বিষণ্ণ মুখে নিজেকেই দায়ী করছেন। সংশয়, সন্দেহের ঘেরাটোপে আরও ক’টা বছর জেলেতেই কাটিয়ে দেবে। তারপর একদিন…। কিন্তু আমানতকারীদের কথা, টাকা দ্বিগুণ করে দেবার আশ্বাস, কি হবে সেসবের ? উত্তর কবে মিলবে ? নাকি জিজ্ঞাসা করার মাথারা ভোটের দিকে তাকিয়ে ? জানতে চায় আমানতকারীদের একাংশ।
ছবিঃ সংগৃহীত।