উত্তরে বিশাল পুকুর, পাশে ঠাকুর দালান, দক্ষিণে মেঠো পথ আমতার প্রত্যন্ত গ্রাম তাজপুরকে পছন্দ হয়ে গিয়েছিল প্রণব বাবুর

কল্যাণ অধিকারী

তাজপুর গ্রামের স্কুলে শিক্ষকতা করতে আসা সেদিনের ‘তরুণ’ প্রণব মুখোপাধ্যায়ের স্মৃতি বিজড়িত গ্রাম।
চক্রবর্তী পরিবারের ‘অমূল্য সম্পদ’ চলে গেলেন।
বাড়ি পাশে পুকুর, নিত্যসেবা দেওয়া ঠাকুর দালান, খিড়কির দরজা লাগোয়া মেঠো রাস্তা ছিল বড্ড প্রিয়।
তাজপুর এম.এন.রায় ইনস্টিটিউশনে ৬মাস শিক্ষকতার সময় চক্রবর্তী পরিবারের বাড়িতে থাকতেন।
প্রণব বাবুর পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানিয়েছে চক্রবর্তী পরিবার।

চক্রবর্তী পরিবারের বাড়ি। এখানেই ৬মাস কাটিয়েছেন প্রণব বাবু। ছবিঃ রাজন্যা নিউজ।

তিনি ছিলেন আদর্শের রাজনীতিতে আপসহীন এক ব্যক্তিত্ব। নেতৃত্বদানে বলিষ্ঠ এক অধিকারী। সর্বদা দুচোখে বিনয়ীর রেখা টানা থাকতো। রাজনীতির সর্বোচ্চ অলিন্দে থাকলেও মানুষের হৃদয়জুড়ে থাকতেন তিনি। সোমবার বিকেলে প্রয়াত হয়েছেন কিন্তু আমতার তাজপুর গ্রামের চক্রবর্তী পরিবারের হৃদয়ে আজীবন থাকবেন প্রণব মুখোপাধ্যায়।

১৯৫৭ সালে তাজপুর এম.এন.রায় ইনস্টিটিউশনে শিক্ষকতা করেছেন ৬মাস। ছবিঃ রাজন্যা নিউজ

সালটা ১৯৫৭। আমতার তাজপুর এম.এন.রায় ইনস্টিটিউশনে শিক্ষকতা করতে আসলেন এক তরুণ শিক্ষক। তিনি প্রণব মুখোপাধ্যায়। কিন্তু স্কুল থেকে তো আর বীরভূম জেলার কীর্ণাহারের বাড়ি প্রতিদিন ফেরা সম্ভব নয়। থাকার ঘর খুঁজতে শুরু করলেন। তাজপুর গ্রামের চক্রবর্তী পরিবারের একটি ঘর পেলেন। বাড়ির উত্তর দিকে বিশাল আয়তনের পুকুর। পাশে সেকালের মন্দির। দু’বেলা নিয়ম করে নিত্যসেবা চলে। বাড়ির পূর্বদিকে খিড়কির দরজা লাগোয়া মাটির রাস্তা সোজা স্কুলে চলে গেছে। আমতার এই প্রত্যন্ত গ্রাম তাজপুরকে বেশ পছন্দ হয়ে গিয়েছিল প্রণব বাবুর। তৎক্ষণাৎ থাকার সিদ্ধান্ত নিয়ে নিলেন। গ্রামের স্কুলের শিক্ষকতা করবেন। সেখানে পড়াশোনা করবে এ গাঁয়ের ছেলেমেয়েরা। চক্রবর্তী পরিবারেও খুশির ছোঁয়া। স্কুলে মাস ছয়েক শিক্ষকতা করেছিলেন। তবে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে গ্রামের মানুষদের সঙ্গে আলাপ করতেন তিনি। সবসময় শেখার ইচ্ছে কাজ করতো। এমন আত্মীক মানুষ রাজনীতিতে সম্পৃক্ত হয়েছেন নিজস্ব ভূমিকায়। এহেন একজন ‘নেতাকে’ হারিয়ে শোকাচ্ছন্ন তাজপুর গ্রামের চক্রবর্তী পরিবার।

চক্রবর্তী পরিবারের বাড়ির উত্তর দিকের বিশাল আয়তনের পুকুর। প্রণব বাবুর পছন্দের ছিল। ছবিঃ রাজন্যা নিউজ।

পুরনো দিনের স্মৃতি আজও উজ্জ্বল গোলক চক্রবর্তী, দেবী চক্রবর্তীদের কাছে। ৯অগাস্ট রাতে খবরে জানতে পারেন প্রণব বাবু অসুস্থ। ১০ অগাস্ট দিনভর বাড়ির মন্দিরে আরোগ্য কামনায় একজোট ছিল পরিবারের সকলে। গৃহ দেবতার কাছে প্রণব মুখোপাধ্যায়ের দ্রুত আরোগ্য কামনা করেছিলেন পরিবারের প্রত্যেক সদস্য, জানালেন দেবী চক্রবর্তী। তিনি আরও জানান, “এমন মানুষ খুব কম রয়েছেন। মানুষ হিসাবে অনেক বড়ো মাপের তিনি। মানুষের পাশে থাকতেন সবসময়। তাঁর প্রয়াত হবার খবর টিভিতে দেখে শোকস্তব্ধ পরিবারের সকলে।” বাড়ির আর এক সদস্য গোলক চক্রবর্তী জানান, “খুব মনে পড়ছে বাড়ির সকলের কথাগুলো। আমি তখন খুব ছোট। কোলে করে আমাকে রাখতেন। তিনি প্রয়াত বিশ্বাস করতে পারছিনা। উনি সুস্থ হয়ে উঠবেন বলে জন্মাষ্টমীর অনুষ্ঠানে মনোনিবেশ না করে আমরা ওঁনার সুস্থতার কামনা করেছিলাম। তাঁর কর্ম তাঁকে চিরজীবন মানুষের হৃদয়ে বাঁচিয়ে রাখবে। মানুষ তাঁকে শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করবে অনন্তকাল।”

ঠাকুর দালানে পরিবারের লোকজন শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করছেন। ছবিঃ রাজন্যা নিউজ।

প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাস কতসহস্র বন্ধু পরিজনের কাছে প্রতিদিন দুঃসংবাদ বয়ে আনছে। তারমধ্যেই সোমবার বিকেল থেকে প্রণব বাবুর প্রয়াণের খবর দেখাতে শুরু করে সংবাদ মাধ্যম। এ খবর দেখা মাত্র চক্রবর্ত্রী পরিবারে শূন্যতার সৃষ্টি করেছে। প্রণব বাবুর পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানিয়েছে চক্রবর্তী পরিবার। অত্যন্ত সাহসী প্রণব মুখোপাধ্যায়ের মৃত্যু চোখের জল আটকাতে পারেনি পরিবারের সকল সদস্য। করোনা আবহে একের পর এক খারাপ খবরের মাঝে চক্রবর্তী পরিবারে ‘অমূল্য সম্পদ’ চলে গেলেন। যখনই মন ক্লান্ত হবে, মনে পড়বে প্রণব বাবু পাশেই রয়েছেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *