একুশের ভোটের আগে দলে মান-অভিমান মেটাতে অত্যন্ত প্রয়োজনীয় ছিল দিদির ভাইফোঁটা!
কল্যাণ অধিকারী
হাইলাইটস
❏ বাধ সাধলো করোনা, দিদির বাড়িতে ফোঁটা পাওয়া থেকে বঞ্চিত ভাইরা।
❏ বিধানসভা ভোটের আগে ভাইফোঁটা হয়ে উঠতো অনুযোগ মেটানোর মোক্ষম জনসংযোগ।
❏ আপাতত একুশের আগে বিক্ষুব্ধদের শান্ত করতে নরমে গরমে তৃণমূল!
ভাইফোঁটার মধ্য দিয়ে প্রতিবছর ভাইদের আত্মিক করে নেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এই দিনটায় কালীঘাটের টালির ছাউনি বাড়িতে পাঞ্জাবী পড়ে হাজির হতেন পার্থ চট্টোপাধ্যায়, সুব্রত বক্সি, ফিরহাদ হাকিম, অরূপ বিশ্বাস, রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়, নির্মল মাজি, মুকুল রায়, শোভন চট্টোপাধ্যায়রা। থাকতেন সুলতান আহমেদ, কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় তালিকা লম্বা। বছর তিন-চারেক আগের তৃণমূল আর এই মুহূর্তের তৃণমূলে যোগবিয়োগ অনেক ঘটেছে। তিন বছর আগে প্রয়াত হয়েছেন উলুবেড়িয়ার তৃণমূল সাংসদ সুলতান আহমেদ। অন্যদিকে ২০১৭ সালে নভেম্বরে তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দিয়েছিলেন মুকুল রায়। ২০১৯ সালের আগস্ট মাসে পদ্মশিবিরে যোগ দেন শোভন চট্টোপাধ্যায়। তবে গত বছর ভাইফোঁটার দুপুরে দিদির বাড়িতে পৌঁছে চমক দিয়েছিলেন স্নেহের কানন। তারপর ভাগীরথী দিয়ে অনেক জল বয়ে গেছে। ‘গেরুয়া’ কানন আর ঘাসফুলে ঘরওয়াপসি হয়নি।
দিদির নতুন তালিকায় নাম এসেছে নব্য প্রজন্মের দেবাংশু ভট্টাচার্যর মতো ভাইরা। তালিকা বদল হলেও এ বছর করোনা আবহে বাতিল মুখ্যমন্ত্রীর বাড়িতে ভাইফোঁটা। ফোঁটা নিতে তৃণমূলের নেতা-মন্ত্রীরা আসছেন না হরিশ চ্যাটার্জি স্ট্রিটের বাড়িতে। ফলে মুখ্যমন্ত্রীর কাছের বৃত্তে কোনজন অন্ধকারেই থেকে গেল। শুভেন্দুর সঙ্গে তৃণমূলের সম্পর্ক এখন অনেকটাই দোলাচলে। স্বয়ং পিকে পৌঁছে গিয়েছিলেন অধিকারী বাড়িতে। দেখা না হলেও অভিমানী শুভেন্দুর মান ভাঙাতে দল যে নরমে গরমে এগোচ্ছে তা স্পষ্ট। ডোমজুড়ের বিধায়ক রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় নিয়েও বিস্তর কানাঘুষো চলছে। শিবির বদল করতে পারেন বলে যে জল্পনা উঠেছিল কিছুটা চাপা পড়লেও মন্ত্রিসভার বৈঠকে গরহাজির থাকা নিয়ে আবারও জল্পনা শুরু হয়েছে। সিঙ্গুরের মাস্টারমশাইয়ে সঙ্গে বেচারামের দ্বন্দ্ব, দূরে চলে যাওয়া অন্যান্য নেতাদের আটকাতে দিদির ভাইফোঁটা অনুষ্ঠান কার্যকারি ভূমিকা নিয়ে পারতো। কিন্তু করোনা আবহে বন্ধই থেকে গেল দিদির বাড়িতে ভাইফোঁটা।
বিধানসভা ভোটের আগে ভাইফোঁটার মধ্য দিয়ে দলে জনসংযোগ বার্তা কিছুটা হলেও ধাক্কা খেল এমনটাই মনে করছে রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের একাংশ। পাশাপাশি অভিষেকের সঙ্গে অন্যান্য নেতাদের দূরত্ব কমাতে ‘অরাজনৈতিক কর্মসুচী’ ভাইফোঁটা তুরুপের তাস হতে পারত। একুশের লড়াইয়ে বিজেপি-র সঙ্গে চোখে চোখ রেখে লড়াই। সভা করতে প্রথম তালিকা অনুযায়ী উড়ে আসবেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ, বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জেপি নাড্ডা। দ্বিতীয় তালিকায় প্রতিরক্ষা মন্ত্রী রাজনাথ সিংহ, উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ, ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব সহ অন্যান্যরা। তার আগে দলকে একসঙ্গে লড়াইয়ে নামাতে প্রস্তুত রাখতে হবে তৃণমূল সুপ্রিমোকে। তবে পথে নেমে লড়াই করা মমতা একাই একশো। দল একটা শুভেন্দু, একটা রাজীব নিয়ে চলে না। সকলের সঙ্গে একত্র হয়ে লড়াই করে বামবৃক্ষ সরাতে পেরেছেন। এবার লড়াই মমতার সঙ্গে ‘প্রভাবশালী’ বিজেপির। দল ভালোই জানে লড়াইটা অন্যান্য নির্বাচনের থেকে কঠিন হবে। তার আগে মিলন হয়ে উঠতে পারতো ‘ভাইফোঁটা’।
ভাইফোঁটা না দিলেও ভাইদের জন্য দিদির উপহার পৌঁছে যাবে ভাইদের বাড়িতে। দিদি তো ভাইদের প্রতি স্নেহ সর্বদা বজায় থাকে।