ছাত্র সংগঠনের প্রতিষ্ঠা দিবসে আজ মমতার ভার্চুয়াল ভাষণ, লক্ষ্য একুশের ভোটে বিজেপিকে আটকানো
কল্যাণ অধিকারী
*একুশের ভোটের আগে ছাত্র-যুবদের প্রতি ভার্চুয়াল ভাষণ।
*বিজেপিকে পর্যুদস্ত করতে ছাত্র-যুবদের লড়াইয়ে এগিয়ে রাখাই মমতার লক্ষ্য।
*বিধানসভা ভোটের আগে দলে তারুণ্যর সংখ্যা বাড়াতে অত্যন্ত জরুরী সভা।
*ছাত্র-যুব’র বড়সড় দায়িত্বে আনা হতে পারে তরুণ মুখ দেবাংশু ভট্টাচার্যকে!
*বিজেপির প্রতি কি কি আক্রমণ শানান সেদিকে তাকিয়ে দলের নেতা-কর্মীরা।
আজ শুক্রবার তৃণমূলের ছাত্র সংগঠনের প্রতিষ্ঠা দিবস। বিজেপিকে পর্যুদস্ত করতে একুশের ভোটের আগে ছাত্র-যুবদের প্রতি ভার্চুয়াল ভাষণ। বক্তব্য রাখবেন মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। করোনা পরিস্থতির কথা ভেবে মেয়ো রোডে ছাত্র পরিষদের প্রতিষ্ঠা দিবসের অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হচ্ছে না। তার বদলে ভার্চুয়াল সভা অনুষ্ঠিত হবে দুপুর ২টোয়। ওই ভার্চুয়াল সভা থেকে ঠিক কি কি বিষয় তুলে ধরবেন তার দিকে আজ নজর থাকবে রাজনৈতিক মহলের।
২০২১ সালে রাজ্যে ক্ষমতায় পুনর্বহাল হতে গেলে বিজেপিকে পর্যুদস্ত করতে হবে। সেক্ষেত্রে ছাত্র-যুব নেতৃত্বের দিকেই নেত্রীকে তাকিয়ে থাকতে হবে। বিভিন্ন সভা সমাবেশে মুখ্যমন্ত্রী কলেজ জীবনের কথা একটু হলেও বলে থাকেন। এতে করে নিজের কলেজ জীবনের লড়াইয়ের কথা শেয়ার করে ছাত্র-যুব’র আরও কাছে যাওয়া সম্ভব হচ্ছে। দ্বিতীয়তঃ করোনা পরিস্থিতি এখনি রাজ্যে বড় মাপের জনসভা করা যাবে না। তার বদলে একুশের আদলে ভার্চুয়াল সভা অনুষ্ঠিত করতে হবে। সেক্ষেত্রে মোবাইল ব্যবহারকারীর দিক দিয়ে ছাত্র ও যুবদের ব্যবহারের সংখ্যা বেশি। এতে করে তাঁদের আরও কাছে চলে যাওয়া সম্ভব। মার্চ মাসে লকডাউন শুরুর পর থেকে স্কুল-কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয় সব বন্ধ। মনোনয়ন নিয়ে গন্ডগোল, প্রিন্সিপালকে ঘেরাও করা, নিয়মিত সংঘর্ষ, অশান্তি এখন প্রায় সবকিছুই বন্ধ। কিন্তু ছাত্র-যুব ঠিক কোন দিকে তা জানতে শুক্রবারের সভা অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ।
বছর ঘুরলেই রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচন। লড়াইয়ে তৃণমূলের প্রধান প্রতিপক্ষ বিজেপি। টিম মোদির তীক্ষ্ণ আক্রমণ সামলে লড়াইকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে মমতাকে। বাংলা দখলে বিজেপির থাকবে ত্রিমুখী আক্রমণ। রাজ্যে যত বেশি সম্ভব প্রধানমন্ত্রী কে নিয়ে এসে সভা করার চেষ্টা করবে রাজ্য বিজেপি। দ্বিতীয় মুখ হিসাবে নিয়ে আসা হবে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী তথা দলের প্রাক্তন সর্বভারতীয় সভাপতি অমিত শাহ, প্রতিরক্ষা মন্ত্রী রাজনাথ সিং, উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ, ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী তথা বিজেপির তরুণ ব্রিগেড বিপ্লব কুমার দেব। তৃতীয় টার্গেট জনসংযোগ। সেক্ষেত্রে বিজেপির প্রধান হাতিয়ার রাজ্য বিজেপির নেতারা। কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয় এছাড়া দিলীপ ঘোষের প্রতিদ্বন্দ্বী হতে চলা তথাগত রায়। রাজ্যপালের পদ ছেড়ে সক্রিয় রাজনীতিতে যোগদান করেছেন তিনি। এছাড়া রয়েছেন মুকুল রায় এবং সাংসদ তথা রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ, লকেট চট্টোপাধ্যায়, বিজেপির যুব সভাপতি তথা সাংসদ সৌমিত্র খাঁ। কেন্দ্রীয় সম্পাদক রাহুল সিংহ। তারপর তো রয়েছে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার জেরা!
একুশের লড়াইয়ে বিজেপিকে পর্যুদস্ত করতে ছাত্র-যুব নেতৃত্বের মুখের দিকে চেয়ে রয়েছেন নেত্রী। ছাত্র-যুবকে আন্দোলনের দিশা দেখাতে বিভিন্ন সমাবেশে মমতা বলে থাকেন, ‘মারের পর মার খেয়েছি, আমার শরীরে আর নেই কিছু। তবুও লড়াই চালিয়ে যাচ্ছি। নরমে-গরমে ছাত্রদের পাশে থাকার বার্তা দেন তিনি। গতবার মেয়ো রোডে তৃণমূল ছাত্র পরিষদের সভায় নবীন নেতা দেবাংশু ভট্টাচার্যকে বক্তৃতা দিতে এগিয়ে দিয়েছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ভাইপো অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের তারুণ্য খোঁজার কাজে অন্যতম মুখ বালির বাসিন্দা দেবাংশু। অল্প দিনের মধ্যে ছাত্র-যুবদের কাছে অত্যন্ত কাছের হয়ে উঠেছেন সুবক্তা দেবাংশু। তবে মমতা নোটবন্দি থেকে কেন্দ্রের বিজেপি সরকারের বিরোধিতা শুরু করে আসছেন। তারপর এনআরসি বিরোধিতা। এর পাশাপাশি জিএসটি, পেট্রল-ডিজেলের দাম বৃদ্ধি। সাম্প্রতিক জয়েন্ট এন্ট্রান্স এবং নিট পরীক্ষা স্থগিত করা নিয়ে নরেন্দ্র মোদিকে চিঠি দিয়েছেন। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর কেন্দ্রীয় বিরোধিতা অব্যাহত। যদিও এটা তিনি ট্রেন বন্ধের যুক্তি দেখিয়েছেন। বামেরা এ রাজ্যে দুদুবার বিধানসভা ভোটে গো হারান হেরেছে। তবে তাদের ভোট বিজেপির বাক্সে পড়া আটকাতে মমতা ছাত্র-যুবদের দিকে তাকিয়ে।
আজ শুক্রবার মমতার ভার্চুয়াল সভা একুশের ভোটের আগে বড়ো মঞ্চ। ভোটের আগে দলকে জাগিয়ে দেওয়ার একটা সুবর্ণ সুযোগ। পাশাপাশি একুশের আগে দলে তারুণ্যর সংখ্যা বাড়াতে অত্যন্ত জরুরী। কীভাবে দলকে এগিয়ে নিয়ে যেতে চান এবং ছাত্র-যুবদের কোন কোন দিশা দেবেন সেদিকেই তাকিয়ে থাকবে রাজনৈতিক মহল। একিসঙ্গে বিজেপির প্রতি কি কি আক্রমণ শানান সেদিকে তাকিয়ে দলের নেতা-কর্মীরা।