‘কৃষকের জীবন রক্ষায়’ পায়ে হেঁটে দেশজুড়ে বার্তা দিয়ে জেলায় ফিরলেন কৃষক ঠাকুরদাস
কল্যাণ অধিকারী
হাইলাইটস
❏ ৯৯ দিনে ৬হাজার কিমি পায়ে হেঁটে দেশ ঘুরে কৃষক রক্ষার বার্তা দিলেন
❏ বিভিন্ন রাজ্য ঘোরার সময় সোশ্যাল মিডিয়ার পরিচিতরা পাশে এসে দাঁড়িয়েছে
❏ প্রতিদিন ৫৫-৬০ কিমি পথ ১৫ ঘন্টায় অতিক্রম করেছেন
❏ কৃষক আন্দোলনের মাঝে দৃষ্টান্ত গ্রামীণ হাওড়ার ঠাকুরদাস (দাসু দা)
পাঞ্জাব ও হরিয়ানা থেকে আসা হাজার হাজার কৃষকের কব্জায় দেশের রাজধানী দিল্লি। খোলা আকাশের নিচে তাঁবু খাটিয়ে কৃষি আইন বাতিলের দাবি জানাচ্ছেন তাঁরা। ঠিক সেই সময় বাংলার এক কৃষক পায়ে হেঁটে দেশ ঘুরে ফিরে এলেন বাংলায়। বার্তা দিলেন ‘কৃষকের জীবন রক্ষার’।
হাওড়ার উদয়নারায়ণপুর থানার সিংটি গ্রামের কৃষক ঠাকুরদাস শাসমল। অল্প জমি আর ভাগচাষী এবং অন্যের জমিতে খেত মজুরের কাজ করে দুই মেয়ের বিয়ে দিয়েছেন। এক পুত্র কৃষকের কাজ করে। গত ১৮ অগাস্ট ফেসবুকে লেখেন ‘সাইকেলে সোনালী চতুর্ভুজ করেছি, পায়ে হেঁটে করলে কেমন হবে’! এই একটা লাইন লিখতেই সহানুভূতি পেতে শুরু করেন। তারপর আর দেরি করেননি। দিন দশেকের মধ্যে সমস্তকিছু ঠিক করে নেন। ঘরে স্ত্রী-পুত্র এবং বৌমাকে রেখে গ্রামের এক ব্যক্তির সাইকেলে দৈনন্দিন সামগ্রী তুলে ২৪ তারিখ বেরিয়ে পড়লেন পায়ে হেঁটে দেশ ভ্রমণে ঠাকুরদাস শাসমল ওরফে দাসু দা।
ঠাকুরদাস শাসমল এদিন উলুবেড়িয়া পৌঁছে জানালেন, ২৪ অগাস্ট বর্ধমানের উল্লাস মোড় থেকে যাত্রা শুরু করে ঝাড়খন্ড, বিহার, উত্তরপ্রদেশ, হরিয়ানা হয়ে দিল্লি পৌঁছে যায়। তারপর রাজস্থান, গুজরাট, মহারাষ্ট্র, তামিলনাড়ু, কর্নাটক একের পর এক রাজ্য অতিক্রম করে ব্যাঙ্গালোর হয়ে পৌঁছান চেন্নাই। ওখান থেকে অন্ধপ্রদেশের বিজয়ওয়াড়া হয়ে তেলেঙ্গানা। তারপর ওড়িশার ভুবনেশ্বর হয়ে পশ্চিমবঙ্গের খড়গপুরে পৌঁছাই। ৯৯ দিনের মাথায় আজ এসে পৌঁছালাম উলুবেড়িয়া। প্রতিদিন গড় ৫৫-৬০ কিমি পথ হেঁটেছি। বৈকালের দিকে রাস্তায় জ্যাম থাকে তাই বেরতাম না। সন্ধের দিকে রেস্ট নিয়ে ঘুমিয়ে পড়তাম। রাতে যখন ঘুম ভাঙতো তখনি হাঁটা শুরু করে দিতাম। রাত সাড়ে ১২ টার কোনদিন দেড়টার সময় হাঁটা শুরু করে পরের দিন দুপুর অবধি হেঁটে চলেছি। গড়ে ১৫-১৬ ঘন্টা হেঁটেছি।
ট্রাক্টর ও ট্রলিতে রেশন ভরে রাজধানী দিল্লির পথে পাঞ্জাব ও হরিয়ানা থেকে আসা হাজার হাজার কৃষক। এমন একটি সময় ত্রিপল, চাল, আলু, স্টোভ ও অন্যান্য সামগ্রী সঙ্গী মনোজ মান্নার সাইকেলে চাপিয়ে হেঁটে দেশ ঘুরে ফিরলেন নিজের মহকুমা উলুবেড়িয়ায়। তিনি আরও জানান, সবসময় পাশে পেয়েছেন ফেসবুক বন্ধুদের। যে রাজ্যে পৌঁছেছেন পাশে পেয়েছেন সোশ্যাল মিডিয়ার বন্ধুদের। খাওয়া দাওয়া সাহায্যে সব বন্ধুদের দ্বারাই সম্ভব হয়েছে। পুনের এক ম্যাডাম ৫ হাজার টাকা দিয়েছেন। ভিলেজ বাইকার্স-এর সদস্যরা, গ্রামের মানুষজন সাহায্য করেছেন। সকলের সাহায্যে পায়ে হেঁটে পাড়ি জমিয়েছেন ৬হাজার ২৫০ কিমি পথ। কিন্তু এদিন বাড়ি ফেরা সম্ভবপর হচ্ছে না। কারণ শুরু করেছেন বর্ধমান থেকে শেষটাও সেই বর্ধমানে করবেন।
এদিন ১৬নং জাতীয় সড়ক ধরে রানিহাটি হয়ে হেঁটে চলেছেন। পরনে সাদা রঙের গেঞ্জি, পাতলা একটা জ্যাকেট। পায়ের জুতোটাও নামি-দামি কোম্পানির নয়। হাঁটতে হাঁটতেই কথাগুলো বলে চলেছেন। ২০১৮ সালে সাইকেল নিয়ে ঘুরে এসেছেন দেশ। বার্তা দিয়ে ছিলেন মরণোত্তর দেহ দান। এবার পায়ে হেঁটে দেশ ঘুরে ফিরলেন ঠাকুরদাস শাসমল। মনটা টানছে কৃষি জমির প্রতি। আলু বসানো সহ শীতকালীন সবজি চাষের সময় হয়ে আসলো। স্ত্রী সুলেখা শাসমল এবং পুত্রকে নিয়ে জমিতে চাষের কাজ করতে হবে যে। দ্রুত পা চালিয়ে বুধবার বাড়ি ফিরতে চায় গ্রামীণ হাওড়ার কৃষক ঠাকুরদাস শাসমল তথা সোশ্যাল মিডিয়ার পরিচিত হয়ে ওঠা দাসু দা।