ধূলাগড়ে লিংক রোডে মেয়ে সেজে দেহ ব্যবসা চালাচ্ছে বৃহন্নলাদের একাংশ! অভিযোগ স্থানীয়দের

কল্যাণ অধিকারী

সন্ধে থেকে বৃহন্নলাদের দাপটে ত্রস্ত ধূলাগড় বাসস্ট্যান্ডের পাশে খড়গপুর দিকের লিংক রোড।
বৃহন্নলাদের একটা অংশ মেয়ে সেজে দেহ ব্যবসা চালাচ্ছে অভিযোগ স্থানীয়দের।
রাস্তার পথচলতি সাধারণ মানুষকেও খদ্দের বানানোর চেষ্টা করে।
খদ্দের ভালো পেলে হোটেলে চলে যায়। এমনকি ট্রাকে উঠে পড়ে বৃহন্নলা দেহ ব্যবসায়ীরা।
পুলিশের একটি সূত্র বলছে, নজরদারি সবসময় থাকে। অভিযোগ আসলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

৬নং জাতীয় সড়কের উপর ধূলাগড় টোলপ্লাজা এবং সংলগ্ন এলাকায় বৃহন্নলাদের দাপটে ক্লান্ত সাধারণ মানুষ থেকে চালকরা। লরি, ট্রেলার সহ বিভিন্ন গাড়ি দাঁড়ালেই হাজির হয়ে যাচ্ছে ওঁরা। দিনের বেলায় টাকা দিলে নিলেও সন্ধে নামলে ধূলাগড় বাসস্ট্যান্ডের দক্ষিণ দিকের লিংক রোডে বৃহন্নলাদের একটা অংশ দেহ ব্যবসা চালায়। ভিন রাজ্যের দাঁড়িয়ে থাকা ট্রাক চালক, খালাসীদের সঙ্গে চুক্তি করে হোটেলে, রাস্তায় এমনকি ট্রাকে দেহ ব্যবসা চালাচ্ছে এমনটাই স্থানীয়দের অভিযোগ।

দিনের শেষে সন্ধে নামলে বিভিন্ন প্রান্তের বৃহন্নলারা এসে হাজির হয়। ধূলাগড় বাসস্ট্যান্ড ছাড়িয়ে খড়গপুর দিকের ৬নং জাতীয় সড়কের কানেকটিং রোডে। জাতীয় সড়কের দুই পাশের রাস্তায় শো শো করে গাড়ি ছুটছে। তার পাশেই রাস্তায় সেজেগুজে দাঁড়িয়ে থাকেন প্রচুর বৃহন্নলা। খদ্দেরের চোখে পড়ার জন্য মেয়ে সেজে অপেক্ষায় থাকে। রাত বাড়তে থাকলে দেহ ব্যবসার রমরমা কারবার পুরোদমে চলতে থাকে। জাতীয় সড়কের গায়ে হোটেলেও এইসব অসাধু কারবার চলে এমনটাই স্থানীয়রা জানিয়েছেন। তাঁদের আরও অভিযোগ, রাস্তার পথচলতি সাধারণ মানুষকেও খদ্দের বানানোর চেষ্টা করে। পরিস্থিতি এমন সন্ধের পর ধূলাগড় বাসস্ট্যান্ড থেকে জাতীয় সড়কে টোলপ্লাজার দিকে হেঁটে যেতে ভয় করে। লরির সাইডে দাঁড়িয়ে থাকে ওঁরা। খদ্দেরদের সঙ্গে ওখানে দাঁড়িয়েই টাকার হিসাবনিকেশ চলে।

ওই এলাকা দিয়ে রাতে বাড়ি ফেরা মানুষজন জানান, সাম্প্রতিক করোনা আবহে ভিন রাজ্যের ট্রাক ধূলাগড় ট্রাক টার্মিনালে আসা কমেছে। তবে অসামাজিক কাজ কারবার কমেনি। রাত নামলে ট্রাকচালক খালাসীদের সঙ্গে টাকাপয়সা নিয়ে ঝামেলাও হয়। রাস্তার ধারে দাঁড়িয়ে থাকা ট্রাকের পাশে রঙ-বেরঙের পোশাক পরে এলেমেলো ভাবে দাঁড়িয়ে থাকে। ঝামেলা হলে সব একজায়গায় জড়ো হয়ে যায়। গালিগালাজ শুরু করে দেয় তখন। বৃহন্নলাদের এমন ‘উপদ্রব’ গত কয়েক বছর ধরে চলে আসছে। পুলিশ আসলেই জঙ্গলে গা ঢাকা দেয়। ওঁদের বাড়বাড়ন্তে ওই রাস্তা দিয়ে চলাচল করা অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে। আজগুবি রকমের সাজগোজে দাঁড়িয়ে থাকে। জাতীয় সড়কের গায়ে থাকা হোটেলের সঙ্গেও যোগসাজশ রয়েছে। খদ্দের ভালো পেলে হোটেলে চলে যায়। এমনকি ট্রাকে উঠে পড়ে বৃহন্নলা দেহ ব্যবসায়ীরা। ওঁদের দাপটে ভিন রাজ্যের ট্রাকচালকরা নাজেহাল।

পুলিশের একটি সূত্র বলছে, ধুলাগড় এলাকায় রাতে পুলিশের নজরদারি থাকে। অভিযোগ আসলে যথাযথ ব্যবস্তা গ্রহণ করা হবে। তবে সম্প্রতি নতুন একটি দল ওই এলাকায় এসেছে। নজরদারি সবসময় থাকে। অভিযোগ আসলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

নিত্যযাত্রী যারা প্রতিদিন রাতে ওই রাস্তা দিয়ে বাড়ি ফেরেন, সমস্যার সম্মুখীন হতে হচ্ছে তাঁদের। রাতে চলাফেরা করবার সময় একাধিক মন্তব্য ভেসে আসে। এই পরিস্থিতিতে এলাকার নিরাপত্তা নিয়েও প্রশ্ন উঠছে। ওঁরা বৃহন্নলা কিন্তু মেয়েদের বেশে ঘোরাঘুরি করে। শাসকদলের এক যুব নেতার কথায়, মেয়ে সেজে কিছু জন লরি থেকে টাকা চায় শুনেছি। বাকিটা জানা নেই। রাজ্য সরকার রূপান্তরকামী এবং স্বনির্ভরগোষ্ঠীগুলোর জন্যে একাধিক ঘোষণা করেছে। রাস্তায় দাঁড়িয়ে লরি আটকে টাকা আদায় করবার প্রয়োজন পড়বে না। ইতিমধ্যে ‘স্নেহনীড়’ এর মতন প্রকল্প আয়োজন করেছে রাজ্য সরকার। তবে ওই এলাকার সমস্যা কিছু থাকলে প্রশাসন নিশ্চয়ই ব্যবস্থা নেবে।

স্থানীয় একটি সূত্র জানাচ্ছে, ডানকুনি এলাকা এছাড়া উঃ ২৪ পরগণা থেকেও এসেছে কেউ। কিছু আবার মেটিয়াবুরুজের দিক থেকে এসেছে। ধূলাগড় থেকে সাঁকরাইলের মধ্যবর্তী এলাকায় ভাড়া ঘরে তিন-চারজন করে থাকে। দিনের বেলায় এঁদের দেখা মেলে না। সন্ধে নামলে মেয়ে সেজে ধূলাগড় ট্রাক টার্মিনালের সামনের রাস্তায় চলে আসে। ৬নং জাতীয় সড়কে খড়গপুর মুখে উঠবার ওই রাস্তায় দাঁড়িয়ে যায়। ট্রাকের আড়ালে দাঁড়িয়ে সমস্ত কারবার চলে। প্রথমে তিনজন এই কাজ করলেও এখন টোলপ্ল্যাজা পার করে বিস্তার বেড়েছে। পনেরো জন রয়েছে এই দলে। শনিবার সংখ্যায় আরও বাড়ে। জাতীয় সড়কে পুলিশের নজরদারি থাকে বলে লিংক রোডে দাঁড়ায়। ওখানে আলো না থাকায় সুবিধাও অনেক।

লকডাউন চলাকালীন এঁরা অন্তরালে থাকলেও আনলক পর্ব শুরু থেকে কারবার চলছে। হোটেল, দালাল, প্রশাসন সবার সঙ্গে যোগসাজশ রয়েছে বলে সূত্রের খবর। খদ্দের আকৃষ্ট করতে মেকআপ, মেয়েদের পোশাক পড়ে। অনেক সময় সুরক্ষাবিধি গ্রহণ করে না। ফলে জীবন-মৃত্যুর সীমানায় দাঁড়িয়ে দেহ ব্যবসার কাজ চালিয়ে যায়। প্রসাধনের সৌন্দর্য বৃহন্নলা বলে বুঝতে দেয় না। খদ্দেরকে কাছাকাছি হোটেল বা অন্যত্র ঠিকানায় নিয়ে যায়। ঠকলেও মান-সন্মানের কথা ভেবে প্রতিবাদ না করে টাকা দিয়ে চলে যায় অনেকে। এঁদের কারবার কে লক্ষ্য রাখে দালাল। তাদের চোখের ইশারায় সমস্ত কাজ চলে। গভীর রাত অবধি চলে নিষিদ্ধ কাজ কারবার।

ছবিঃ প্রতীকী।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *