নবান্ন অভিযানে বিজেপির বোমাবাজি, অস্ত্র উদ্ধার, পুলিশের লাঠিচার্জ, আহত নেতা-কর্মী, পাল্টা ইটের ঘায়ে ঘায়েল পুলিশ

কল্যাণ অধিকারী

হাইলাইটস
বিজেপির যুব মোর্চার মিছিল নবান্নের দোরগোড়ায় পৌঁছানোর বহুআগে হাওড়া ময়দান রণক্ষেত্র।
মল্লিক ফটকের কাছে এক বিজেপি কর্মীর কাছ থেকে উদ্ধার হয় আগ্নেয়াস্ত্র।
পুলিশের বাধা পেয়ে মিছিল বেকাবু, বোমাবাজি করার অভিযোগ বিজেপির বিরুদ্ধে।
পুলিশের লাঠির ঘায়ে বাদ গেল না সাংবাদিক। হাওড়া ব্রিজের পূর্ব দিকে একটি নিউজ চ্যানেলের মহিলা সাংবাদিক আহত হন।
বিজেপি কর্মীদের ছোঁড়া ইটের আঘাতে হাওড়া ব্রিজের সামনে পায়ে গভীর চোট পেলেন এক পুলিশ আধিকারিক। লাল রক্তে ভিজে গেল সাদা পোশাক।

বিজেপির যুব মোর্চার নবান্ন অভিযান ঘিরে রণক্ষেত্র হাওড়া ব্রিজ, হাওড়া ময়দান এলাকা। ব্যারিকেড ভেঙে এগিয়ে যাওয়া বিজেপি কর্মীদের রুখতে পুলিশের জলকামান, লাঠিচার্জ। আহত হলেন একাধিক বিজেপি কর্মী। বাদ গেল না সাংবাদিকরা। একটি নিউজ চ্যানেলের মহিলা সাংবাদিক লাঠির ঘায়ে আহত হলেন। বিজেপি কর্মীদের ছোঁড়া ইটের আঘাতে সাদা পোশাকের পুলিশ পায়ে গভীর চোট পেলেন। লাল রক্তে সাদা পোশাক ভিজে গেল। হাওড়া ময়দানে পুলিশকে লক্ষ্য করে বোমাবাজি।

এদিন ঠিক ছিল বিজেপি–র রাজ্য সদর দফতর থেকে দিলীপ ঘোষের নেতৃত্বে মিছিল হাওড়া ব্রিজ হয়ে নবান্নের দিকে যাবে। সেইমতন ব্যারিকেড করে বিশাল পুলিশবাহিনী মোতায়েন করা ছিল বড়োবাজার ও হাওড়া ব্রিজে। সংঘর্ষ এবং অপ্রীতিকর ঘটনা রুখতে ব্যারিকেড, লাঠিধারী পুলিশের পাশাপাশি মোতায়েন ছিল জল কামান। পুলিশের বাধা পেয়ে মিছিল বড়বাজারে ছত্রভঙ্গ হয়। বেলা সাড়ে ১২টা নাগাদ হাওড়া ব্রিজের পূর্বপ্রান্তে ধেয়ে আসা বিজেপি কর্মী-সমর্থকদের রুখতে মাইকিং শুরু করে পুলিশ। রাজনৈতিক স্লোগান আর উত্তপ্ত বাক্য বিনিময়ে তপ্ত হয়ে ওঠে এলাকা। বিজেপির অভিযোগ পুলিশ জল-কামান ছোড়ে। বেপরোয়া আচরণ করেছে পুলিশ। একটি রাজনৈতিক দল প্রশাসনকে জানিয়ে মিছিল করছে তারপরও তাদের কর্মীদের উপর যেভাবে লাঠিচার্জ করা হল এমনকি মহিলাদেরও ছাড়া হল না। এটা গণতন্ত্রের জন্য খারাপ দিক।  

হাওড়া ব্রিজের সামনে দাঁড়িয়ে বিজেপি রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ দাবি করেন, “কোনপ্রকার বিক্ষোভ ছিল না। পুলিশ আমাদের কর্মীদের উপর লাঠিচার্জ করেছে। রাজ্যে অগণতান্ত্রিক পরিবেশের সৃষ্টি হয়েছে।”

এদিন নবান্ন অভিযান রুখতে পুলিশ অভিনব উদ্যোগ নিয়েছিল। বিভিন্ন এলাকায় মিছিল আটকাতে পুলিশ নাকা চেকিং করে। কার্যত হাওড়া শহরে আসার বাস চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। আমতা, বাগনান, উলুবেড়িয়া, ধূলাগোড় সহ বিভিন্ন এলাকায় সকাল থেকে পথ আটকে দেয় পুলিশ। রাস্তার মোড়ে মোতায়েন করা হয় লাঠিধারী পুলিশ। সাধারণ মানুষ গাড়ি না পেয়ে সমস্যায় পড়ে। বিভিন্ন জেলা থেকে নবান্ন অভিযান ঘিরে ধূলাগোড় টোলপ্লাজায় প্রচুর সংখ্যায় পুলিশ, র‍্যাফ সহ পুলিশের স্পেশাল টিম প্রস্তুত ছিল। একাধিক গাড়ি আটকা পড়ে। হাজারও কর্মী সমর্থক। নবান্ন অভিমুখে যেতে না পেরে উলুবেড়িয়া মুখি যানচলাচল আটকে দেয়। ঘন্টাখানেক পর পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়। বহু কর্মী-সমর্থক জাতীয় সড়কের ধারে মাংস-ভাত খেতে বসে যান।      

এদিন সকালে কোনা এক্সপ্রেসওয়ের মুখ থেকে গড়ফা সর্বত্র ভারি মাত্রায় লাঠিধারী পুলিশ মোতায়েন রাখা হয়। বিজেপি নেতা রাজু বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে সাঁতরাগাছি থেকে শুরু হয় বিজেপির নবান্ন অভিযান। পুলিশ ত্রিস্তরীয় বাঁশের ব্যারিকেড করে মিছিল আটকাতে প্রস্তুত ছিল। ব্যারিকেডের সামনে মিছিল আসতেই ব্যারিকেড ভাঙার চেষ্টা করেন বিজেপি নেতা-কর্মীরা। এরপরেই মিছিল ছত্রভঙ্গ করতে জলকামান থেকে রঙিন জল স্প্রে শুরু করে পুলিশ। এর জেরে সামনে থাকা রাজু বন্দ্যোপাধ্যায় অসুস্থ হয়ে পড়েন। রক্তবমি করেন বলেও জানা যায়। এরপরেই তাঁকে কলকাতার একটি বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। অন্যদিকে নবান্ন অভিযানে হাওড়া ময়দান এলাকা রণক্ষেত্রের চেহারা নেয়। মল্লিকফটকের কাছে এক বিজেপি কর্মীর কাছ থেকে উদ্ধার হয় আগ্নেয়াস্ত্র। পুলিশ ওই ব্যক্তিকে গ্রেফতার করেছে। পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটবৃষ্টির পাশাপাশি বোমা ছুঁড়েছে বিজেপি কর্মী-সমর্থকরা। আক্রমণাত্মক কর্মী-সমর্থকদের রুখতে পুলিশ লাঠিচার্জ এবং কাঁদানে গ্যাসের শেল ফাটায়। পুলিশের বাধা পেয়ে মিছিল বেকাবু হয়ে পড়ে। তখনি পুলিশকে লক্ষ্য করে আক্রমণাত্মক হয়ে পড়ে বিজেপি নেতা-কর্মীরা।

বছর ঘুরলেই পশ্চিমবঙ্গে একুশের বিধানসভা নির্বাচন। ইতিমধ্যে বামেদের হঠিয়ে বাংলায় দ্বিতীয় স্থানে উঠে এসেছে বিজেপি। প্রায় নিয়ম করে কেন্দ্রীয় নেতা-মন্ত্রীরা রাজ্যে আসছেন। বাংলা জয়ের টার্গেট করে দলের সাংসদদের রণনীতি চূড়ান্ত করে দিচ্ছেন অমিত শাহ। কিন্তু বছর ঘুরবার আগে নবান্ন অভিযান ছিল বিধানসভা দখলের লড়াইয়ে প্রথম প্রস্তুতি বিজেপি-র। সেই লক্ষ্যে বিজেপির যুব মোর্চার আক্রমণাত্মক আন্দোলন যে হবে একপ্রকার নিশ্চিত ছিল পুলিশ প্রশাসন! সেইমতন জল কামান, মোড়ে মোড়ে পুলিশ কর্মী রাখা হয়েছিল। কিন্তু বোমাবাজি, অস্ত্র উদ্ধার হবে এমনটা ভাবেনি পুলিশ আধিকারিক থেকে শাসক দলের নেতারা। কিন্তু বিধানসভা ভোটের আগে কেন এতটা আক্রমণাত্মক বিজেপি ? সদুত্তর নেই খোদ বিজেপি যুব মোর্চার নেতাদের কাছেও।       

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *