পরীক্ষা-নিরীক্ষা ছেড়ে মোদি-ম্যাজিকে ‘বাংলা জয়’ দেখছে বঙ্গ বিজেপি !
কল্যাণ অধিকারী
হাইলাইটস
❏ ২০০ আসন জোগাড় করতে বছর শুরুতে উত্তরবঙ্গে ও জঙ্গলমহলে ঘর বানাবেন কেন্দ্রীয় নেতারা
❏ দিলীপ-মুকুল দ্বন্দ্ব মিটিয়ে, পদ হারানো রাহুলকে এক সঙ্গে নিয়েই লড়াইয়ে নামছে বঙ্গ বিজেপি
❏ ১৯-এর ফর্মুলাকে সামনে রেখে একাধিক কেন্দ্রীয় নেতা বঙ্গে ভিড় জমাবেন
একুশের বিধানসভা নির্বাচনে বাংলা জয় করতে ২০০ আসন জয়ের লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে ময়দানে নেমেছে বিজেপি। একপ্রকার পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেই বঙ্গ বিজেপির উপর এই লক্ষ্যমাত্রা চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু বঙ্গ বিজেপির পক্ষ থেকে শাসকের সঙ্গে লড়াই করে ২০০ তো বহু দূর একশোটি আসন জোগাড় করাই কঠিন হয়ে দাঁড়াচ্ছে। এমনটা বিজেপির প্রায় প্রতিটি কার্যকর্তা মানছেন! সেক্ষেত্রে ১৯-এর ফর্মুলাকে কাজে লাগাতে চাইছে বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব।
বাংলায় ২০০ আসন জয়ের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করা কতটা সম্ভব বিজেপি-র? রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের একাংশের মতে ১৯-এর লোকসভা ভোটে বাংলায় বিজেপি ৪২ টি আসনের মধ্যে ১৮ টিতে জয়লাভ করবে এমনটা বঙ্গ নেতাদের কাছেও বিশ্বাসযোগ্য ছিল না। ২২ দশমিক ২৫ শতাংশ ভোট বাড়িয়েছে তাঁরা। তা সম্ভব হয়েছে ধর্মীয় মেরুকরণের রাজনীতির জন্য! লোকসভা ভোটে ২২টি আসন পেয়ে সার্বিক ভাবে তৃণমূল এগিয়ে। তবে বিধানসভা ভোটের আগে দলকে একজোট হয়ে লড়াই করতে হবে। ঘর ভাঙলে খুঁটি নড়বড়ে হয়ে যাবে। সেক্ষেত্রে রাজনৈতিক ফায়দা তুলবে বিজেপি, তা বিলক্ষণ বোঝেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু বিদ্রোহের আঁচ ছড়াচ্ছেন শুভেন্দুর মত নেতারা। তা বুঝে দলের রাশ নিজের হাতে নিয়েছেন ‘সুপ্রিমো’।
২০১৬-র পর পাঁচ বছরে বঙ্গে মাথা তুলতে পারেনি সিপিএম-কংগ্রেস। রাজ্য রাজনীতিতে ক্রমশ প্রাসঙ্গিকতা হারাচ্ছে। বিহার ভোটে বামেরা ফুটে উঠলেও কংগ্রেস থেকে গেছে পিছনের সিটে। ইতিমধ্যে ভোট ব্যাঙ্ক দখলে রাখতে বিভেদ ভুলে একসঙ্গে ছুটে বেড়াচ্ছেন অধীর-মান্নান। ১৬-র মতন একুশের বিধানসভা নির্বাচনে জোট করে লড়াই করবে কংগ্রেসের সঙ্গে বামেরা। তাঁরা জানেন বিজেপি বড় শত্রু হলেও রাজ্যে লড়াই করতে গেলে প্রতিপক্ষ ভাবতে হবে তৃণমূল কংগ্রেসকে। তবে বাম-কংগ্রেস মাথা চাড়া দিলে আখেরে লাভের মুখ দেখবে শাসক তৃণমূল। তৃণমূল যুব কংগ্রেসের এক নেতার কথায়, বঙ্গে সিপিএম-কংগ্রেস ছেড়ে কর্মীরা বিজেপিতে নাম লিখিয়েছে। তাঁদের জন্য লম্ফঝম্প শুরু করেছে বিজেপি। এই অহঙ্কার ভাঙতে সংঘবদ্ধ ভাবে লড়াই করতে হবে। বিজেপি অন্যের ঘর ভেঙে দলের ভোট বাড়াতে যাতে না পারে তাই সবাইকে একজোট হতে হবে।
বঙ্গ বিজেপিতে দিলীপ ঘোষ ও মুকুল রায় দুই গোষ্ঠীর লড়াই সর্বজনবিদিত। একদিকে বিজেপি-র সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি মুকুল রায় ঘনিষ্ঠ যুব মোর্চার রাজ্য সভাপতি সৌমিত্র খাঁ। অন্যদিকে রাজ্য বিজেপি সভাপতি দিলীপ ঘোষ এবং হুগলির সাংসদ লকেট চট্টোপাধ্যায় ও পুরুলিয়ার সাংসদ জ্যোতির্ময় সিং মাহাতো সহ অন্যান্যরা একসূত্রে বাঁধা। দলে পদ হারিয়ে ‘কোণঠাসা’ রাহুল সিনহা! বেশ কিছুদিন দূরেই রয়েছেন। সবাইকে একত্র হয়ে লড়াই চালিয়ে যাবার কথা রাজ্যে এসে জানিয়ে গিয়েছেন খোদ অমিত শাহ। দিল্লি ফিরে যাবার আগে ২০০ আসন জেতার লক্ষ্যমাত্রা দিয়েছেন তিনি। রাজ্যে কয়েকটি নির্বাচনে বিজেপি আশানুরূপ ফলাফল করলেও ২৯৪ আসনের বিধানসভা নির্বাচনে জেতার মতন পরিস্থিতি এখনও তৈরি হয়নি এমনটাই রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের একাংশের মত। সেক্ষেত্রে দিল্লির নেতাদের দিকে মুখাপেক্ষী থাকতে হচ্ছে বঙ্গ বিজেপিকে।
বিহারে বিধানসভা নির্বাচনে দেশ দেখেছে মোদি-ম্যাজিক। প্রধানমন্ত্রীর ১২টি সভায় পদ্মফুল ভালো ফলাফল করেছে। এ রাজ্যে ভোটে জিততে প্রধান মুখ হয়ে উঠবেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। তাই একুশের লড়াইয়ে বঙ্গ বিজেপির রাশ সম্পূর্ণভাবে থাকছে দিল্লির। নতুন বছর শুরু হলেই কেন্দ্রীয় নেতারা উড়ে আসবেন বঙ্গে। উত্তরবঙ্গ ছাড়াও জঙ্গলমহলের মাটিতে ঘর বানাবেন তাঁরা। বিজেপির লক্ষ্য গ্রামের ভোট এককাট্টা করা। শহরের মানুষের মধ্যে গেরুয়া প্রভাব বাড়লেও গ্রামের দিকে মমতা ম্যাজিক এখনও অটুট। তবে দলের প্রতি মানুষের ক্ষোভ প্রতিষ্ঠা হচ্ছে। সেই ক্ষোভ কাজে লাগাতে চাইছে বিজেপি। সেই লক্ষ্যে ঘাঁটি গাড়তে চলেছে বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতা ও কার্যকর্তারা। পাশাপাশি বুথ স্তরের কর্মীদের চাঙ্গা করতে গ্রামে যোগদান মেলা, ধর্মীয় অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে নিবিড় যোগাযোগ গড়ে তোলার চেষ্টা চলছে। একদিকে নিচুতলার কর্মীদের চাঙ্গা করা। অন্যদিকে বছর শেষ হওয়ার আগে পুরোদমে দলকে বঙ্গে নামানো। সেই লক্ষ্যে চলেছেন অমিত শাহ – জেপি নাড্ডারা।