প্রেমিকা আকাঙ্খাকে খুন করে বেদি বানিয়ে পুজো করা উদয়নের যাবজ্জীবন সাজা

কল্যাণ অধিকারী

*তদন্তকারী পুলিশ অফিসারের কাছে নিজের ফাঁসি চেয়েছিল উদয়ন দাস।
*তিন বছর পর যাবজ্জীবন সাজা ঘোষণা করল বাঁকুড়া ফাস্ট ট্র্যাক কোর্ট।
*প্রেমিকা আকাঙ্খা কে খুন করে বেদি বানিয়ে পুজো করতো উদয়ন দাস।
*২০১০-১১ সালে নিজের বাবা ও মা-কেও খুন করে বাগানে পুতে দিয়েছিল।

বিদেশে চাকরির স্বপ্ন দেখিয়েছিল ফেসবুকের মাধ্যমে পরিচয় হওয়া মধ্যপ্রদেশের ভোপালের উদয়ন দাস। সেই পরিচয় কাল হয়েছিল আদতে বিহারের বাসিন্দা বাবা-মায়ের সঙ্গে বাঁকুড়ায় থাকা ২৮ বছরের আকাঙ্খার। প্রেমিকা আকাঙ্খা কে খুন করে বেদি বানিয়ে পুজো করতো উদয়ন। তিন বছর আগেকার হাড় হিম করা খুনের সাজা ঘোষণা হল বুধবার। যাবজ্জীবনের সাজা শুনেও নির্লিপ্ত থেকে গেল ঠান্ডা মাথার কিলার।

ফেসবুকে পরিচয় থেকে প্রেম। তারপর বাড়ি ছেড়ে পৌঁছে গিয়েছিল প্রেমিকের ভোপালের বাড়িতে। বাবা ব্যাঙ্ক কর্মী। নিজেও স্বপ্ন দেখত চাকরির। সেটাই বুঝতে পেরেছিল স্মার্ট কিলার উদয়ন। ২০১৬ সালের জুলাই মাসের ১৫ তারিখ খুন হয় আকাঙ্খা শর্মা। ২০১৭ সালে তদন্ত চলাকালীন গ্রেফতার হয় উদয়ন। খুনের তদন্ত যত এগিয়েছে একাধিক তথ্য তদন্তকারী অফিসারের হাতে এসেছে। ১০০-র উপর ফেসবুক প্রোফাইল। ২৫০০টি ক্রাইম থ্রিলারের সিডি। আমেরিকায় চাকরির ভুয়ো নিয়োগপত্র তুলে দিয়েছিল প্রেমিকা কে। সেই নিয়োগপত্রটি যে ভুয়ো বুঝতে পেরে গিয়েছিল আকাঙ্খা। উদয়নের মিথ্যে গল্প জেনে যাওয়ায় খুন হতে হয়েছিল আকাঙ্খা শর্মা কে।

২০১৪ সাল থেকে পরবর্তী দু বছরে ১০ বারেরও বেশি আকাঙ্খা কে ভোপালে নিয়ে গিয়েছিল। নিজেও দেখা করতে এসেছিল কলকাতায়। প্রেমিকাকে নিয়ে হোটেলে রাত কাটিয়েছিল। খুনের পর সিমেন্টের চাতাল বানিয়ে ফুল ছড়িয়ে রীতিমত পুজো করতো উদয়ন। বাঁকুড়া জেলা আদালতে ওই মামলার শুনানির সময় ফাঁসির দাবিতে পথে নেমে বিক্ষোভ দেখিয়েছিল সাধারণ মানুষ। ২০১০-১১ সালে বাবা ডি কে দাস এবং মা ইন্দ্রাণী দাস কে খুন করে রায়পুরের বাগানে পুতে দিয়েছিল। কিন্তু সে কথা কোনদিন বলেনি উদয়ন। মিথ্যে গল্প ফেঁদে বলেছিল বাবার হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয়েছে। মা আমেরিকায় থাকে। কিন্তু পাসপোর্ট ও ডেথ সার্টিফিকেট পেয়ে যায় আকাঙ্খা। ২০১৬ সালের ১৫ জুলাই প্রেমিকা আকাঙ্খা কে গলা টিপে খুন করে। দেহ লোপাট করতে সিমেন্টের চাতাল বানিয়ে দিয়েছিল।

প্রেমিকা আকাঙ্খাকে উদয়ন খুব ভালবাসতেন। মিথ্যে গল্পের চাদর সরে যেতেই আকাঙ্খা নিজের ভুল বুঝতে পেরেছিল। কিন্তু ফিরে আসার আগেই খুন হতে হয়। ২০১৭ সালে গ্রেফতার হওয়ার পর বাঁকুড়া সদর থানার পুলিশের কাছে আবদার করেছিল ডিম সিদ্ধ, সিঙ্গাড়া ! পুলিশও না করেনি। আর যাই হোক বাঁকুড়ার জামাই কে তো আর না খাইয়ে রাখতে পারেনি বাঁকুড়া থানার পুলিশ বাবুরা ! প্রেমিকা খুনের ঘটনায় মঙ্গলবার দোষী সাব্যস্ত করা হয় উদয়ন কে। আকাঙ্খার পরিবার চেয়েছিল এমন ঠান্ডা মাথার কিলার কে ফাঁসি তে ঝোলান হোক। বুধবার বাঁকুড়া ফাস্ট ট্র্যাক কোর্ট উদয়ন দাস কে যাবজ্জীবন সাজা ঘোষণা করে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *