বাম ঘরানার রাজনীতিতে বিশ্বাসী পারেননি মতাদর্শ বদলাতে, গান স্যালুটে শেষ বিদায় সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়কে
কল্যাণ অধিকারী
হাইলাইটস
❏ না, এবার আর গুজব নয়। ৮৫ বছর বয়সে প্রয়াত সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়।
❏ বাংলা চলচ্চিত্র জগতকে সর্বশক্তি দিয়ে আঁকড়ে ধরেছিলেন তিনি।
❏ বাংলা সিনে দুনিয়ার সঙ্গে ‘সৌমিত্র’ অভ্যাস থেকে বাঙালির বেরিয়ে আসাটা সম্ভব নয় কোনদিন।
❏ ২০১৭ সালে মুখ্যমন্ত্রীর আমন্ত্রণ ফেরাতে পারেননি। তাঁর হাত থেকে বঙ্গবিভূষণ পুরস্কার নিয়েছিলেন ফেলুদা।
❏ তাঁর চলে যাওয়া বাংলা সিনেমায় এক অপূরণীয় শূন্যতার সৃষ্টি করল।
শনিবার সন্ধে থেকে একটি পোস্ট ঘুরছিল হোয়াটসঅ্যাপ সহ সোশ্যাল মিডিয়ায়। গুজব বলে অনেকেই উড়িয়ে দিয়েছিল। কিন্তু রবিবার দুপুর ১২টা ১৫ মিনিটের কিছু পর থেকে বিভিন্ন নিউজ চ্যানেলের পর্দায় ভেসে উঠতে থাকে। সত্যি কি ঠিক দেখছেন? কোনও গুজব হচ্ছে না তো? না, এবার আর গুজব নয়। প্রয়াত সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়। হেমন্তের পাতা ঝরা শহরটা কয়েক মুহূর্তের জন্য থমকে গেল।
প্রয়াত অভিনেতার সঙ্গে দীর্ঘ সম্পর্ক ছিল চলচ্চিত্র জগতের। পুরনোদের পাশাপাশি নতুনদের কাছে তিনি ছিলেন আইকনিক অভিনেতা। বাংলা চলচ্চিত্র জগতকে সর্বশক্তি দিয়ে আঁকড়ে ধরেছিলেন তিনি। দশকের পর দশক ধরে যে সম্পর্কের বন্ধন তৈরি হয়েছিল, রবিবার থেকে সেই সম্পর্ক চিরতরের জন্য ছিন্ন হয়ে গেল। কিন্তু এত সহজে কি ছিন্ন হয় সম্পর্ক! বাংলা ‘চলচ্চিত্রের সঙ্গে সৌমিত্র’ অভ্যাস থেকে বাঙালির বেরিয়ে আসাটা সম্ভব ছিল না কোনদিন। না থাকবে আগামীতে।
প্রিয়জন হারানোর যন্ত্রণায় আবারও বিদ্ধ ভারতীয় সিনেমা। অভিভাবক সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়কে হারিয়ে শোকপ্রকাশ বাংলার চলচ্চিত্র জগতের শিল্পীদের। শোকাহত মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। অভিনেতার জীবনাবসানের পড়েই তিনি বেলভিউতে ছুটে গিয়েছেন। সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় প্রয়াণে শোক প্রকাশ করেছেন দেশের সর্বস্তরের মানুষজন। রাষ্ট্রপতি থেকে প্রধানমন্ত্রী, মুখ্যমন্ত্রী থেকে রাজনৈতিক ব্যাক্তিবর্গ। প্রত্যেকে অত্যন্ত মর্মাহত। বাংলায় টুইট করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। তাঁর সৃষ্টিকে সন্মান জানিয়েছেন বাংলা ও বাঙালি। ছোট বয়স থেকে তাঁর অভিনয় দেখে বড় হয়েছে সিনেপ্রেমীরা। কিংবদন্তি অভিনেতার চলে যাওয়াটা মেনে নিতে পারছে না আম-জনতা।
ভাল-মন্দের লড়াইয়ে কেটেছে চল্লিশ দিন। সেই কঠিন লড়াইয়ে ইতি পড়লেও তিনি ছিলেন, তিনি থাকবেন। তাঁর অভিনীত অপুর সংসার, গণদেবতা, চারুলতা সহ একাধিক সিনেমা দর্শকদের কাছে যুগের পর যুগ স্মরণীয় হয়ে থাকবে। একাধিক পুরস্কার পেয়েছেন তিনি। অন্যতম ‘বঙ্গবিভূষণ’, ‘পদ্মভূষণ’, ‘দাদাসাহেব ফালকে’ পুরস্কার তাঁর অভিনয় জীবনকে সন্মানিত করেছে। তবে রাজনৈতিক দিক দিয়ে বাম ঘরানার রাজনীতিতে বিশ্বাসী ছিলেন। বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের অত্যন্ত কাছের ছিলেন তিনি। পরিবর্তনের সরকার আসার পর নিজেকে দূরে রেখেছিলেন। তবে ২০১৭ সালে মুখ্যমন্ত্রীর আমন্ত্রণ ফেরাতে পারেননি। মুখ্যমন্ত্রীর হাত থেকে ‘বঙ্গবিভূষণ‘ পুরস্কার নিয়েছিলেন অভিনেতা সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়।
প্রখ্যাত সাহিত্যিক সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের প্রয়াণে শ্রদ্ধা জানাতে রবীন্দ্রসদনে এসেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ব্যাঙ্গালুরুতে গিয়ে মান্না দে’কে ‘মহাসঙ্গীত’ পুরস্কার দিয়ে এসেছিলেন তিনি। চলচ্চিত্র জগত হোক বা সাহিত্য-সঙ্গীত জগতের নক্ষত্র মুখ্যমন্ত্রী তাঁর পাশে সর্বদা ছুটে যান। এ দিন হাসপাতালে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী জানিয়ে দেন, গান স্যালুটের মাধ্যমে পূর্ণ মর্যাদায় শেষকৃত্য সম্পন্ন হবে বর্ষীয়ান অভিনেতা সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের। সেইমতন কেওড়তলা মহাশ্মশানে গান স্যালুটে শেষ বিদায় জানানো হল বাংলার অপুকে। ৮৫বছর বয়সে তাঁর চলে যাওয়া বাংলা সিনেমায় এক অপূরণীয় শূন্যতার সৃষ্টি করল।