বিজেপিতে যোগ দিলে কোন দায়িত্ব দেওয়া হতে পারে শুভেন্দুকে, প্রশ্ন সর্বত্র

কল্যাণ অধিকারী

হাইলাইটস
❏ সপ্তাহ ঘুরতে চলল মন্ত্রিত্ব ছেড়েছেন দলের সঙ্গে সব সম্পর্ক ছিন্ন হওয়ার আশঙ্কা
❏ প্রবীণ সাংসদের দিকে যেভাবে আঙুল তুলেছেন শুভেন্দু, ভালো ভাবে নিচ্ছে না দল
❏ গেরুয়া নেতাদের স্নেহের আবেদন বিজেপি-র দিকে যাওয়া সময়ের অপেক্ষা
❏ এখনি তাঁকে মুখ্যমন্ত্রী পদপার্থী করবার সম্ভাবনা কম
❏ বিজেপিতে যোগ দিলে দায়িত্ব পাবেন একাধিক জেলার, সঙ্গে সর্বদা কেন্দ্রীয় বাহিনী,

সপ্তাহ ঘুরতে চলল মন্ত্রিত্ব ছেড়েছেন পূর্ব মেদিনীপুর জেলার তরুণ তুর্কি নেতা শুভেন্দু অধিকারী। আগামী পরিকল্পনা মুখে কিছু না বললেও বিজেপিতে যোগ দেওয়া এখন সময়ের অপেক্ষা! দীর্ঘদিনের দলের ‘সম্পদ’ শুভেন্দুকে দলে রাখতে চেষ্টার কসুর করেননি প্রবীণ সাংসদ সৌগত রায়। কিন্তু রফাসূত্রের মাঝে প্রবীণ সাংসদের দিকে-ই আঙুল তুললেন শুভেন্দু। তাতে করে দূরত্বটা বোধহয় মাপতে ভুল করেছে তৃণমূল এমনটাই রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের একাংশের মত।

পূর্ব মেদিনীপুর জেলার প্রবল প্রতিপক্ষ লক্ষ্মণ শেঠের বিরুদ্ধে চোখে চোখ রেখে লড়াই করেছেন। নন্দীগ্রামে ১৪ জন জলজ্যান্ত মানুষের মৃতদেহ আর অসংখ্য মহিলাদের ওপর ধর্ষণের ঘটনায় অভিযুক্তদের কঠিন সাজার দাবিতে লড়াইয়ে প্রথম সারিতে ছিলেন শুভেন্দু। নন্দীগ্রামের কলঙ্ক মুছতে মমতার আন্দোলনে সর্বদা সঙ্গী ছিলেন তিনি। দিদির আশীর্বাদ প্রাপ্ত ও স্নেহধন্য শুভেন্দু দেড় দশকে তৃণমূলের প্রথম সারিতে পৌঁছে গিয়েছিলেন। দিদির মন্ত্রীসভায় গুরুত্বপূর্ণ পরিবহণ দফতর তাঁর হাতে ছিল। তারপরও সন্মানের খোঁজে পা বাড়িয়েছেন বক্তব্য তৃণমূলের একাংশের। সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর বিরুদ্ধে মুখ খুললেও দলের বাকি সাংসদ বিধায়করা এখনও নীরব। তবে সাতগাছিয়ার জনসভা থেকে শুভেন্দু’র প্যারাসুটে নামা আর লিফটে ওঠা মন্তব্যের কড়া জবাব দিয়েছেন ডায়মন্ড হারবার লোকসভা সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। লিফটে ওঠা’র প্রসঙ্গে তাঁর সাফ জবাব তাহলে ৩৫টা পদের অধিকারী হতাম।

দলের কঠিন সময়ে সেই শুভেন্দুর মতন তরুণ নেতার প্রয়োজন। তারপরও মন্ত্রিত্ব ছাড়তেই দাদার অনুগামী দিদির অনুগামীদের মধ্যে শুরু হয়েছে সোশ্যাল মিডিয়ায় জোড় বাগবিতন্ডা। দিদির অনুগামীদের কথায়, তৃণমূলের প্রায় জন্মলগ্ন থেকে মমতার অনুগামী হয়ে থাকা শুভেন্দু কি পারতো না দিদির সঙ্গে বসে আলচনার দ্বারা সমস্তটা মেটাতে। এতগুলো সরকারি পদে থেকেও উনি বঞ্চিত কীভাবে! একাধিক জেলার দায়িত্ব ছিল দাদার দায়িত্বে। তারপরও মন্ত্রিত্ব ছাড়তে হল। তাহলে কি মানতে হবে উনি চললেন সম্মান অর্জন করতে! কিন্তু যেখানে যাবেন সেখানে কি আদৌ সন্মান মিলবে! ‘একসঙ্গে কাজ করা’ সম্ভব নয় কথাটার মধ্যেও বিদায়ের ‘বিবাগী’ সুর। পাল্টা যুক্তি দাদার অনুগামীদের। তাঁদের দাবী, কলকাতায় বৈঠকের আলোচ্য বিষয় সংবাদমাধ্যমে বলে দেওয়াটা প্রয়োজন ছিল। একি সঙ্গে মন্তব্য, রাজনীতিতে ধৈর্য ও অধ্যবসায় উভয়ই জরুরি। অর্থাৎ একদিকে যেমন আক্রমণ করা হচ্ছে তৃণমূল শিবিরকে। পাশাপাশি শুভেন্দুর রাজনৈতিক জল্পনা নিয়েও ধীরে চলার বার্তা দিচ্ছে। তবে সোশ্যাল মিডিয়ায় দাদার অনুগামীদের একাংশের বক্তব্য, “দীর্ঘদিন আমরা দাদার অনুগামী। যতক্ষণ পর্যন্ত দাদার মুখে কোনকিছু না শুনছি গত কালও যেমনটা বিশ্বাস করিনি এবং আজও করবো না।” অন্য পক্ষের যুক্তি, “আমরাও দাদার অনুগামী। তবে যতক্ষণ দলে আছেন ততক্ষন। দল ছাড়লে আমরাও দাদাকে ছাড়বো। সর্বপরি আমরা দলের সৈনিক।”

এই মুহূর্তে শুভেন্দুকে নিয়ে জল্পনার অন্ত নেই। মুকুল রায় জানিয়ে দিয়েছেন, “শুভেন্দু এখন আমার ছোট ভাই। যখন সহ সভাপতি হয়েছিলাম ও শুভেচ্ছা জানিয়েছিল।” শুভেন্দুকে দলে স্বাগত জানিয়ে রেখেছেন বিজেপি রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষও। শুভেন্দু অধিকারী বিজেপিতে এলে স্বাগত, ইঙ্গিতেপূর্ণ বক্তব্য দিয়েছেন হুগলির বিজেপি সাংসদ লকেট চট্টোপাধ্যায়। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে শুভেন্দু বিজেপিতে যোগ দিলে তাঁকে কোন দায়িত্ব দেওয়া হবে! একুশে বাংলায় বিজেপির মুখ কে হবে দল জেতার পর সিদ্ধান্ত গৃহীত হবে এমনটাই ইঙ্গিত দিয়ে রেখেছেন খোদ অমিত শাহ। তবে বিজেপিতে যোগ দিলে শুভেন্দুর নিরাপত্তায় সর্বদা থাকবে কেন্দ্রীয় বাহিনী। কেন্দ্রীয় পদমর্যাদার কোন দায়িত্ব থাকবে তাঁর উপর। পূর্ব মেদিনীপুর সহ অন্তত ৬টি জেলার বিধায়ক পদে টিকিট বণ্টনের দায়িত্ব তাঁর হাতে। রাজ্যের বিভিন্ন জেলার বুথ স্তরের কর্মী তুলে আনতে মুকুল রায়ের সঙ্গে একত্রে দায়িত্ব পালন করবেন তিনি এমনটাই সূত্রের খবর।

সমস্তটা এখন নির্ভর করছে শুভেন্দু যতক্ষণ না নিজে মুখে কোন কথা বলছে। ৬ তারিখ সাংবাদিকদের মুখোমুখি হবেন, দেবেন কী আগামীর বার্তা। তিনি কিছু বললেও খবর। চুপ থাকলেও খবর। সব মিলিয়ে বাংলার রাজনীতির সমস্তটা নিজের দিকে টেনে নিয়েছেন পূর্ব মেদিনীপুর জেলার তরুণ তুর্কি নেতা শুভেন্দু অধিকারী।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *