রবিবার ছুটি, সোমবার লকডাউন, সপ্তাহান্তে বাস দুর্ভোগে জেলার বাসিন্দারা
কল্যাণ অধিকারী
০ পরপর দু’দিন ছুটি , শনিবার সন্ধে থেকে দূরপাল্লার বাস পেতে নাজেহাল জেলার বাসযাত্রীরা।
০ ভাড়ার থেকে তিনগুন বাসভাড়া চাওয়া হচ্ছে।
০ সাঁতরাগাছি বাসস্ট্যান্ডে দূরপাল্লার বাসের জন্য দীর্ঘ সময় অপেক্ষায়।
০ বাসের ছাদে উঠে জীবন হাতে নিয়ে যাত্রা করছে যাত্রীরা।
০ মানা হচ্ছে না স্বাস্থ্যবিধি, দর্শকের ভূমিকায় পুলিশ।
সপ্তাহান্তে বাড়ি ফিরতে নাজেহাল যাত্রীরা। সন্ধের পর হাওড়া থেকে উধাও দূরপাল্লার বেসরকারি বাস। ফলে দুর্ভোগে নাজেহাল পূর্ব মেদিনীপুর জেলার কোলাঘাট, মেচেদা, নন্দকুমারের বাসিন্দারা। তাঁদের অভিযোগ, সোমবার রাজ্যে লকডাউন। কাল রবিবার ছুটি। বাড়ি ফিরবার জন্য সন্ধে থেকে বাসের প্রত্যাশায় দীর্ঘ অপেক্ষায় থেকেও যদিও বা বাস মিলল তিনগুণ ভাড়া চাইছে। ফলে সমস্যায় পড়তে হচ্ছে তাঁদের।
কোলাঘাটের বাসিন্দা জীবন খেঁটে, অসীত খেঁটে, দীপু সামন্ত বলেন, সন্ধে থেকে বাসের জন্য অপেক্ষা করছিলাম হাওড়া পোস্ট অফিসের সামনে। একটি দিঘার বাস আসলো উঠতে পারিনি। একি অবস্থা পরের আরও দুটি মেচেদাগামী বাসের। তারপর বঙ্কিম সেতু দিয়ে হেঁটে হাওড়া বাসস্ট্যান্ডে যাচ্ছি একটি নন্দকুমারের বাস আসছে দেখে হাত দেখাতে দাঁড়িয়ে গেল। উঠতে যাচ্ছি কনডাক্টর বলছে কোলাঘাট যেতে প্রতিজনের ১০০টাকা করে ভাড়া লাগবে। কিন্তু এতটাকা ভাড়া বলায় পিছিয়ে আসি। ৪০টাকা ভাড়া নেয়। সেখানে পঞ্চাশ টাকা নিক। তাই বলে একশো টাকা কেন?
যাত্রীদের আরও অভিযোগ, সকাল থেকে রাত পর্যন্ত কোলাঘাট-মেচেদা রুটে শ’য়ে শ’য়ে বাস চলে। লকডাউন শুরুর পর থেকে সেই বাসের সংখ্যা অনেকটাই কমে গিয়েছে। পরিস্থিতি এমন সন্ধের পর থেকে বাস কম থাকায় বাসগুলি দ্বিগুণ কখনও তিনগুণ ভাড়া নেয়। শনিবার বাড়ি ফেরার জন্য দুপুর থেকে বাস ধরতে আসলে তবেই ঠিকঠাক বাস মেলে। হাওড়া শহরের বহু কারখানা বন্ধ হতে ৬টা বেজে যায়। ট্রেন পরিষেবা চালু না হওয়ায় কোলাঘাট, মেচেদা, কাঁথি, তমলুক, পাঁশকুড়া, ঘাটাল, গোপীগঞ্জ এলাকার মানুষজন সপ্তাহান্তে বাড়ি ফিরবার বাস ধরতে বেরিয়ে বিভ্রান্ত হতে হচ্ছে। যাত্রীরা বাসের দেখা না পেয়ে যেকোন ভাবে বাড়ি ফিরবার গাড়ি ধরছে।
এদিন সন্ধে সাড়ে সাতটার সময় সাঁতরাগাছি বাসস্ট্যান্ডের কাছে দেখা গেল, বহু মানুষ দূরপাল্লার বাসের অপেক্ষায় রাস্তার ধারে দাঁড়িয়ে। দীর্ঘ সময় অপেক্ষার পরেও বাস না পাওয়ার জন্য ভিড় বেড়েছে। এগরা-সাতমাইল এলাকার একটি বাস আসতেই ছোটাছুটি শুরু হয়ে যায় অপেক্ষারত যাত্রীরা। বাসের ছাদে উঠে পড়েন প্রায় ত্রিশ-চল্লিশ জন ব্যক্তি। বাসের ভিতরেও যাত্রী ঠাসা। কোনও স্বাস্থ্যবিধি মানা হচ্ছে না। অধিকাংশ যাত্রী ভিড় বাসে মাস্ক খুলে ফেলেছেন। সংক্রমণ ছড়ানোর আশঙ্কা থেকে যাচ্ছে প্রবল। রাস্তার ধারে দাঁড়িয়ে থাকা অন্য এক ব্যক্তি জানান, ওঁদের এইভাবে যাতায়াত করা অভ্যেসে পরিণত হয়ে গেছে। শ্যামপুরের বাসিন্দা ওই ব্যক্তি আরও জানালেন, তবুও তো মেচেদার দিকে বাস মিলছে। শ্যামপুর, গাদিয়াড়া এলাকার মানুষের দূর্দশা আরও করুণ। বাগনান থেকে অটো চেপে বাড়ি ফিরতে ভাড়া ও সময় অতিরিক্ত লাগছে। বাধ্য হয়ে অনেকে মোটর সাইকেলে হাওড়া কলকাতা যাচ্ছে।
সাঁতরাগাছি এলাকার ট্র্যাফিক সামলানো সাদা পোশাকের এক পুলিশ কর্মী বাসের ছাদে যাত্রী ওঠার দৃশ্য সমস্তটা দেখলেন। কিন্তু আশ্চর্যভাবে নির্বাক থেকে গেলেন। হয়তো পরিস্থিতির কথা ভেবেই! কিন্তু ১১৭নং জাতীয় সড়ক পার করে ৬নং জাতীয় সড়কে গাড়ির সংখ্যা ও গতিবেগ দুটিই থাকে বেশি। দুর্ঘটনা ঘটলে তার দায় কার উপর বর্তাবে প্রশ্নের কোনও উত্তর নেই।