লকডাউনে শাপে বর! দূষণ কমা রূপনারায়ণে মিলল এক কেজি সাইজের ইলিশ, দাম উঠলো ২২০০টাকা
কল্যাণ অধিকারী
*রূপনারায়ণে মৎস্যজীবীদের জালে এক কেজি সাইজের ইলিশ।
*পদ্মার ও গঙ্গার ইলিশের পরেই নাম আসে রূপনারায়ণের।
*ইলিশের পাতুরি, সরষে ইলিশ, ভাপা, রূপনারায়ণের ইলিশে স্বাদের জুড়ি মেলা ভার।
*দাম বেশি থাকায় ইলিশ কিনতে এসেও ব্যাজার মুখ ক্রেতাদের।
*মৎস্যজীবীদের কাছ থেকে চড়া দামে কিনতে হয়। তাছাড়া ইলিশ যত বড় হবে, ততই স্বাদ বেশি হয়। এমনটাই যুক্তি বিক্রেতাদের।
বেশ কয়েক বছর মুখ ফিরিয়ে থাকার পর রূপনারায়ণে দেখা মিলল ইলিশের। কোলাঘাট, মানকুরের মৎস্যজীবীদের জালে উঠছে রূপোলী শস্য। সপ্তাহখানেক আগেও নৌকা নিয়ে ইলিশ না পেয়ে ফিরে আসতে হয়েছে মৎস্যজীবীরা। শুক্রবার জালে ধরা পড়ল এক কেজি সাইজের ইলিশ। দাম বেশি থাকায় ইলিশ কিনতে এসেও ব্যাজার মুখ ক্রেতাদের।
সপ্তাহান্তে অথবা বৃষ্টির দিনে ইলিশ ছাড়া বাঙালির জমে নাকি? আর সেই ইলিশ ঘরের কাছের রূপনারায়ণের হলে তো কথাই নেই। দই ইলিশ, ইলিশ পাতুরি, ছাড়াও ইলিশের ঝোল, সরষে ইলিশ, ঝাল, ভাপা ইলিশ। ভোজনরসিক বাঙালি ইলিশ পেলে আর কিছুই চায় না। কিন্তু করোনা আবহে পকেটের কথাটাও তো ভাবতে হবে। ১ কেজি ওজনের ইলিশের দাম প্রতি কেজি ২১০০-২২০০ টাকা। ৭০০-৮০০ থেকে ১২০০ টাকা দরে বিকোচ্ছে। কোলাঘাটে রূপনারায়ণের ইলিশ মেলার খবর শোনামাত্রই বাইক নিয়ে বাজারে চলে আসেন অনেক ক্রেতা। সেখানেও দাম শুনে কিছুটা হলেও হতাশ তাঁরা।
উলুবেড়িয়ার বাসিন্দা অতিমা দাস ও তাঁর স্বামী প্রীতম দাস এসেছিলেন ইলিশ কিনতে। দরদাম করে ২০০০টাকা কেজি দরে একটি ইলিশ কিনে ফিরবার আগে জানিয়ে গেলেন, “রূপনারায়ণের ইলিশ বরাবরের পছন্দের। কথায় আছে ইলিশ যত বড় হবে, ততই স্বাদ বেশি হয়। তাছাড়া সারাবছর তো আর কেনা হয় না। একবার একটু কষ্ট করে কিনি। একসময় সেচ দপ্তরে কাজ করতেন শ্বশুর। রূপনারায়ণের ইলিশ ব্যাগে করে কিনে নিয়ে আসতেন। তিনি এখন রিটায়ার্ড। স্বাদে তো আর বদলানো যায় না।” অতিমা দাসের মতন মাছের রানি ইলিশ কে কিনতে এসেছিলেন অমিয় পাছাল। মেচেদার বাসিন্দা তিনি। বাকসি তে আত্মীয়ার বাড়িতে এসেছিলেন। সেখানেই শুনেছেন মানকুরে মিলছে রূপনারায়ণের ইলিশ। ফিরবার সময় চলে এসেছেন মাছ কিনতে। ৮০০ সাইজের ইলিশ ১২০০ টাকা কেজি বলায় অমিয়বাবু দুপস্থ দরদাম করেও দাম কমাতে পারেননি। পরিবারের জন্য ১২০০ টাকা কেজি দরেই কিনেছেন ইলিশ। আবার কবে আসবো তাই কিনেই নিলাম।
মাছ বিক্রেতাদের কথায়, “আমরা কি করি! আমাদের তো মৎস্যজীবীদের কাছ থেকে চড়া দামে কিনতে হয়। কোলাঘাট, মানকুর সব জায়গার ইলিশ মাছ ধরতে যাওয়া মৎস্যজীবীদের মোবাইল নম্বর রয়েছে। মাছ পড়লে ফোন করে দেয়। বাইক নিয়ে পৌঁছে যাই। কিনে এনে বাজারে বিক্রি করি।” তবে স্থানীয় মানুষদের কানাঘুষো অনেক সময় বরফ দেওয়া ইলিশ নৌকায় করে নিয়ে চলে যায়! কয়েক ঘন্টা পরে ফিরে এসে বলে জ্যান্ত ইলিশ। তবে এমনটা হয় না বললেও সব মৎস্যজীবীদের কথা তো জোর দিয়ে বলা যায় না।
পদ্মার ও গঙ্গার ইলিশের সুখ্যাতি রয়েছে। তারপর নাম আসে রূপনারায়ণের। দাম চড়া হওয়ায় কিছুটা হতাশ হলেও রূপনারায়ণে বড় মাপের ইলিশ পড়ছে এটাই আশার আলো দেখাচ্ছে পরিবেশ প্রেমীদের। তাঁদের দাবি, নদীতে নাব্যতা কমে যাওয়া, চড়া পড়া, সেতুতে স্রোত বাধা পাওয়া, জলে দূষণের মাত্রা বেড়ে যাওয়ায় সমস্ত অভিযোগ সঙ্গে করে বইছিল রূপনারায়ণ। যে কারণে মুখ ঘুরিয়েছিল ইলিশ। আবারও ইলিশ ফিরে আসায় পরিবেশ প্রেমীদের পাশাপাশি দীর্ঘনিঃশ্বাস ফেলা স্থানীয় মানুষজন আশার আলো দেখছেন। লকডাউনের কারণে দূষণ কমে যাওয়া শাপে বর ! রূপনারায়ণে দেখা মিলছে ইলিশের। আগামীদিনে আরও ইলিশ পড়বে মৎস্যজীবীদের জালে।
ছবিঃ প্রতীকী।