লকডাউনে সচেতন মানুষ, শিথিল নজরদারিতে মিলছে ঘুগনি, মুড়ি, ডিমভাজা থেকে মাংস
কল্যাণ অধিকারী
¤ মাসের প্রথম সাপ্তাহিক লকডাউনে মানুষ থেকে গেল অন্তরালে।
¤ পুলিশের নজরদারি শিথিল! সেই সুযোগে ঘুগনি, মুড়ি, ডিমভাজা, মাংসের দোকান কেউ কেউ খুললেন।
¤ গেঞ্জি বারমুন্ডা পড়ে একটি বাইকে তিনজন যুবক। প্রশ্ন করতেই এটিএম যাওয়ার সাফাই।
¤ বাইক চেকিং করার কাজ তাদের এক্তিয়ারে নয়, জানালেন জনৈক সিভিক।
¤ বহু এলাকায় মাস্ক না পড়ে লকডাউনে যত্রতত্র ঘুরলেন স্থানীয়রা।
ঘুগনি, মুড়ি সঙ্গে পেঁয়াজ, কাঁচা লঙ্কা কুচি। চাইলে মাঝারি আঁচে স্টিলের প্যানে তেল ছড়িয়ে পেঁয়াজ, লঙ্কা কুচি দিয়ে গরম-গরম ডিম ভেজে দেবে। সেপ্টেম্বর মাসের প্রথম লকডাউনে মুন্সিরহাট-পানপুর রোডে হরিশ দাদপুর এলাকায় দোকান খুলে বেঞ্চ পেতে ঘুগনি, মুড়ি, ডিম ভাজা, গরম চায়ে চুমুক দেওয়ার সুযোগ। সবকিছু পসরা মিলে বিক্রি হচ্ছে। অথচ ওই এলাকা থেকে ৫০০মিটারের মধ্যে চন্দ্রপুর পুলিশ ফাঁড়ি। কোন হেলদোল নেই দোকানদারের। মুখে মাস্ক না পড়ে দিব্যি বিক্রি করছেন।
মার্চ মাসের লকডাউন শুরু হতে দেখা গিয়েছিল জটলা হবার আগেই যে পুলিশ শক্তিমানের মতো লাঠি হাতে তেজিয়ান হয়ে ছুটে যেত। কোন অজানা কারণে তাঁরা এখন অনেকটাই শিথিল। প্রশাসন রাস্তায় অযথা ঘোরাঘুরি করতে কাউকে দেখলে বুঝিয়ে ঘরে পাঠিয়ে দেওয়ার কাজ করছে। তবে সাধারণ মানুষ চেষ্টা করছে নিজেদের মতন করে জীবন যাপন করবার। লকডাউনের আগের দিন প্রয়োজনীয় খাদ্যদ্রব্য কিনে রাখছে। তারপরও কিছু ব্যবসায়ী লকডাউনের নিয়মনীতি কে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে দোকান খুলে রেখেছে। সাধারণ মানুষজনও বাইক-সাইকেল নিয়ে প্রয়োজন ছাড়া ঘোরাঘুরি করছে। বিঘ্নিত হচ্ছে লকডাউন নিয়মনীতি।
৬নং জাতীয় সড়কের মুখ ঘুরে রানিহাটি-আমতা রোড। মোড়ের মাথায় পুলিশ ও সিভিক ভলান্টিয়ারদের নজরদারি। নাবঘরা মোড় থেকে ডোমজুড় যাবার রাস্তায় বেশকিছু বাইক ঘোরাঘুরি করছে। কিছুটা দূরে দোকানের অর্ধেকটা খুলে মাংস বিক্রি চলছে। লকডাউনে মানুষকে ঘরে রাখার চ্যালেঞ্জ প্রশাসনের। কিন্তু সাধারণ মানুষ প্রয়োজন ছাড়া বাইরে বের হলে নাকাচেকিং করার প্রবণতা কমে আসছে। এই সুযোগে দোকান খোলা থাকছে। বিক্রি হচ্ছে ঘুগনি, মুড়ি, ডিমভাজা থেকে মাংস। লকডাউন সফল করতে কড়াকড়ি নজরদারি রাখতে হবে পুলিশকে, এমনটাই মত স্থানীয়দের। লকডাউনে শহরের গুরুত্বপূর্ণস্থানে কঠোর থাকছে পুলিশ। কিন্তু গ্রামীণ এলাকায় রাস্তায় বেরোনো বাইক, গাড়ির কাগজপত্র চেকিং হচ্ছে না। সাহস বাড়ছে বাইক গ্যাংয়ের। মাস্ক না পড়ে লকডাউনে যত্রতত্র ঘুরে বেড়াচ্ছে।
রানিহাটি-আমতা রোডে দশনম্বর মোড়ে গেঞ্জি বারমুন্ডা পড়ে একটি বাইক নিয়ে তিনজন যুবক। মুখে মাস্ক নেই। লকডাউনে বাইরে বের হবার কারণ জিজ্ঞাসা করতেই জানালেন, মানিকপির থেকে এটিএম কাউন্টারে টাকা তুলতে এসেছেন ওই যুবকরা। মোড়ের মাথায় নজরদারি চলছে প্রশাসনের। তার সামনে দিয়েই একটি বাইকে তিনজন যুবক অবাধে চলে গেলেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সিভিক ভলেন্টিয়ার জানান, তাঁদের বলা হয়েছে দোকান খোলা থাকলে বন্ধ রাখার কথা। বাইরে বের হওয়া মানুষদের বুঝিয়ে বাড়িতে পাঠিয়ে দেওয়া। বাইক চেকিং করার কাজ তাদের এক্তিয়ারে নয়। তাহলে কে চেকিং করবে? প্রশ্ন শুনেই মুখ ঘুরিয়ে এগিয়ে গেলেন। গুজারপুর এলাকার ইন্ডাস্ট্রিয়াল এলাকায় চলছে নির্মান কাজ। পনেরো-কুড়ি জন শ্রমিক একযোগে কাজ করছে। জেসিবি মেশিন দিয়ে কাজ চলছে। রাস্তার ধারে চলছে কাজ। নজরদারি না থাকায় সাহস আরও বেড়েছে। রাস্তার উপর জটলা করে বসে টিফিন করা হচ্ছে। তারপর আবার কাজে যোগ দেওয়া। প্রশাসনের কাজ প্রশাসন করছে, সাধারণ মানুষ নিজেদের কাজটা সন্তর্পণে করে যাচ্ছে।