শর্তসাপেক্ষে হলেও স্নানের অনুমতি মেলায় ভিড় বাড়ার আশায় অর্জুন-সুজাতারা
কল্যাণ অধিকারী, গঙ্গাসাগর
হাইলাইটস
❏ ভিড় না হওয়ায় কারবার মার খাচ্ছে
❏ স্নানের অনুমতি মেলায় ভিড় হবার আশায় ব্যবসায়ীরা
❏ শর্তসাপেক্ষে হলেও স্নানের অনুমতি মেলায় খুশি মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়
গঙ্গাসাগরে স্নানের অনুমতি মিলেছে জানত না ওঁরা। বুধবার সন্ধের সময় সাগরতটে ২ নম্বর রাস্তায় ব্যবসায়ীদের মুখোমুখি হয়ে সুখবরটা দিলেন দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা প্রশাসনের এক মহিলা আধিকারিক। অর্জুন-সুজাতাদের চোখেমুখে তখন খুশির ঝিলিক। ওঁরা তো চাইছিল জাগতিক আশ্চর্য ঠিক দেখাবে বাবা কপিলমুনি। লোকে ভোরে যাবে সাগরতট। বিক্রি-বাট্টা আবারও শুরু হবে।
৯ বছর কম্বল বিক্রির ব্যবসা করছেন ওঁরা। মূলত ঠান্ডা আর ভিড় বেশি হলে ওঁদের লাভের টাকা বেশি ঘরে পৌঁছায়। সাগর তটে অস্থায়ী দোকান থেকেই পাশের দোকানদার গোসাবার বাসিন্দা অষ্ট সামন্তর মেয়ে সুজাতার সঙ্গে চোখাচুখি। তারপর চারহাত এক হয়। সেটাও ছিল সাগর মেলার শেষে। বিয়ের পর থেকে স্বামী-স্ত্রী দুজনে একসঙ্গে চলে আসেন অস্থায়ী দোকান বানিয়ে কম্বল বিক্রি করতে। এ বছর রঙিন ছাপা কাপড় বিক্রি করবে বলে নিয়ে এসেছে স্ত্রী সুজাতা। কিন্তু বিহার উত্তরপ্রদেশ থেকে আগত পুণ্যার্থীদের ঢল নামেনি সাগরে। এতেই সিঁদুরে মেঘ দেখছে ওঁদের মতন বহু ব্যবসায়ী। মাধ্যমিক উত্তীর্ণা সুজাতা জানান, “ভিড় না হওয়ায় কারবার মার খাচ্ছে। একজন ক্রেতা আসলে সব দোকানদার ডাকাডাকি করছে। অন্য সময় হলে ডবল ভিড় হতো। কিভাবে ঋণের টাকা উঠবে বুঝে উঠতে পারছি না।”
শর্তসাপেক্ষে হলেও স্নানের অনুমতি মেলায় খুশি মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়। তিনি সন্ধের সাংবাদিক সম্মেলনে জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উদ্যোগে পশ্চিমবঙ্গ সরকার গঙ্গাসাগর মেলার আয়োজন প্রথম থেকেই নিদিষ্ট নিয়ম মেনে করছে। ইতিমধ্যে ৭ লাখ ৮হাজার পুণ্যার্থী এসেছেন। সবরকম ব্যবস্থা করা হয়েছে। এই রায় শুনে আরও বহু পুণ্যার্থী এসে পৌছাবেন। সমস্ত আয়োজন সম্পূর্ণ। আইল্যান্ডে করোনার প্রকোপ কম। কোন চিন্তা নেই। ২৩ হাজার ২১০ জনের অ্যান্টিজেন টেস্ট হয়েছে। পজিটিভ রিপোর্ট নেই। ইতিমধ্যে ৪৫৬৭ জন হারিয়ে যাওয়া মানুষদের তাঁদের পরিবারের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। ১২০ জন পকেটমার গ্রেফতার হয়েছে। ২০০০ ভল্যান্টিয়ার কাজ করছেন সাগরে। রণপারাও সচেতনতার প্রচার করছে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মেলার সমস্ত বিষয় ব্যবস্থা নিয়েছেন।
করোনা অতিমারির জেরে এ বছর ভিড় নেই সাগর মেলায়। ফলে ভিড় থেকে বেরিয়ে ভিড়ের মধ্যে মিশে যাওয়ার মাথাব্যথা নেই। এ কারণে নিখোঁজ ব্যক্তিদের মাইকিং হচ্ছে না বললেই হয়। মাইকে বাজছে গান। এক দশকের মধ্যে সবথেকে কম ভিড় এবারের সাগর মেলায়। কি আশ্চর্য এক মায়াময় শব্দ ‘করোনা’। গত বছরটা পুরোটা কারবার বিনষ্ট করেছে। এ বছরের শুরুতে ছন্দ হারানো সাগর মেলা। তারপরও মহামান্য বিচারপতি সাগরে স্নানের অনুমতি দেওয়ায় স্বস্তি ফিরেছে সাগর মেলায় আগত অর্জুন-সুজাতাদের মতন ব্যবসায়ীদের। সুজাতা ক্রেতাদের হাঁক দেয় ‘ই কম্বল কম দাম গো বাবু। লিয়া যাও। তুমাদের ওখানে মিলবে নাই।’
শুধু বলছে না ‘ফুরায়ে গেল! ফুরায়ে গেল!’