শিক্ষারত্ন পাওয়া মাস্টারমশাই’কে সন্মানিত করল নিজের গ্রাম
কল্যাণ অধিকারী
❏ মাস্টারমশাই ভালবাসাতেই খুশি। উনি শিক্ষারত্ন পেয়েছেন মল্লগ্রাম গ্রামের গর্ব।
❏ উনি আমাদের গ্রামকে গৌরবান্বিত করেছেন।
❏ শিক্ষারত্ন পুরস্কার, গ্রামে শিক্ষার প্রদীপ কে আরও উজ্জলতায় ভরিয়ে দেবে, জানান অরুণ বাবু।
গ্রামের মাস্টারমশাই অরুণ কুমার পাত্র। এ পাড়ার প্রায় প্রতিটি বাড়ির ছেলে-মেয়েরা ছোটবেলায় ওঁনার কাছে টিউশন পড়েছে। আজ তাঁরা বিভিন্ন ক্ষেত্রে চাকরি করছেন। প্রতি বছর শিক্ষক দিবসে অনেকেই ছোটবেলার টানে মাস্টারমশাই-এর সঙ্গে দেখা করে আসে। গ্রামের কোন অনুষ্ঠান হলে মাইক হাতে তুলে দেওয়া হয়। আবৃত্তি, বিষয়ভিত্তিক বক্তব্য বলে মন ভালো করে দেন। উনি তো ভালবাসাতেই খুশি। এমন মাস্টারমশাই শিক্ষারত্ন পেয়েছেন। উনি আমাদের মল্লগ্রামকে গৌরবান্বিত করেছেন। কথাগুলো আমতা শিবাজী সংঘের প্রভাস মাজি, বিভাস মাজি, অমিত দাস, সরজ পাত্র, অভিজিত মন্ডল, গুরুদাস পাত্র প্রত্যেকে একবাক্যে বলে গেলেন।

শিক্ষারত্ন পুরস্কার পাওয়া গ্রামের মাস্টারমশাই’কে রবিবার সন্ধ্যায় সন্মান জানাল, আমতা মল্লগ্রাম শিবাজী সংঘের সদস্যরা। এই গ্রামে পরিবারের সঙ্গে বড়ো হয়েছেন অরুণ বাবু। চাকরি পাবার আগে গ্রামের ছেলেমেয়েদের টিউশন পড়াতেন। তারপর ১৯৯৭ সালের ২১জানুয়ারি মধ্যকূল প্রাথমিক বিদ্যালয়ে চাকরি পেলেন। তারপর ২০০৮ সালে ১৭এপ্রিল প্রধানশিক্ষক হয়ে সোনামুই সাবালয় প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যোগদান করেন। দীর্ঘ জীবনে সবার ভালবাসাতেই খুশি তিনি। ২৩ বছর শিক্ষাকতা জীবনে পেলেন রাজ্য সরকারের সর্বোচ্চ সন্মান শিক্ষারত্ন। তাঁর সাফল্যে গর্বিত আমতা-১ ব্লকের মল্লগ্রাম শিবাজী সংঘ। শিক্ষারত্ন পুরস্কার পাওয়া গ্রামের শিক্ষক কে রবিবার সন্ধ্যায় সন্মানিত করলেন ক্লাবের সদস্যরা। কপালে চন্দনের ফোঁটা, হাতে ফুলের স্তবক, রজনীগন্ধা মালা পরিয়ে বরণ করতেই আবেগ তাড়িত হয়ে পড়েন মাস্টার মশাই। নিজের গ্রামে এ সন্মান এনে দিতে পেরে অত্যন্ত খুশি। তিনি বলেন, এই গ্রাম তাঁর কাছে সন্মানের এবং শৈশবের স্মৃতি মোড়া। শিক্ষারত্ন পুরস্কার গ্রামে শিক্ষার প্রদীপ কে আরও উজ্জলতায় ভরিয়ে দেবে।
শিবাজি সংঘের হেমন্ত মাজি, গোপাল ঘাটা, সমীর মান্না, সুজিত পাত্ররা জানান, সৌভাগ্যের যে আমাদের গ্রাম পেয়েছে মাটির মানুষ মাস্টারমশাই’কে। গ্রামে শিক্ষাচর্চা একিসঙ্গে সংস্কৃতিচর্চাকে বাড়িয়েছেন উনি। বরাবর সাদামাটা জীবন যাপনে অভ্যস্ত। আমরা ওঁনাকে সন্মান জানাতে পেরে বড্ড তৃপ্ত।
শিক্ষারত্ন পুরস্কার দিয়েছে সরকার, কিন্তু অরুণ বাবু চিরকাল ‘মাস্টার মশাই’ ডাকটির মধ্য দিয়েই গ্রামে থেকে যেতে চান। এ ডাকে গভীর শ্রদ্ধা ও ভালবাসা জড়িয়ে রয়েছে। এই ভালবাসাতেই খুশি গ্রামের ‘মাস্টার মশাই’।