সাধারণ ধর্মঘটে জেলায় কর্মী-সমর্থকদের অভাব টের পেল বামেরা!

কল্যাণ অধিকারী

হাইলাইটস
❏ ধর্মঘট সফল করতে বেলা অবধি পথে নেমে লাল পতাকা ওড়াল বাম কর্মী-সমর্থকরা
❏ বিধানসভা ভোটের আগে জেলায় কর্মী-সমর্থকদের অভাব ভালো রকম টের পেল বামেরা
❏ লকডাউন পরবর্তী সময় ধর্মঘটের প্রভাব পড়ল না জেলার বিভিন্ন প্রান্তে

বৃহস্পতিবার দেশ জুড়ে সাধারণ ধর্মঘটের ডাক দিয়েছিল কেন্দ্রীয় ট্রেড ইউনিয়নগুলি। ধর্মঘট সফল করতে বেলা অবধি পথে নেমে লাল পতাকা ওড়াল বাম কর্মী-সমর্থকরা। তবে, বামেদের পূর্বেকার জনসমর্থন সেই অর্থে এখনও মেলেনি। সাধারণ ধর্মঘটে জেলায় কর্মী-সমর্থকদের অভাব ভালো রকম টের পেল বামেরা! বিধানসভা ভোটের আগে যা অনেকটাই আশঙ্কার।

দীর্ঘ সময় লকডাউন শেষে মানুষ কাজের জন্য হন্যে হয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে। এমন সময় ধর্মঘটের ডাক দেওয়ায় কিছু অসন্তুষ্ট কারখানা ও জুট মিলের শ্রমিকরা। যদিও শ্রমিকদের স্বার্থে এবং কেন্দ্রীয় সরকারের শ্রম এবং কৃষি আইন-সহ নানান নীতির প্রতিবাদে দেশজুড়ে সাধারণ ধর্মঘটের ডাক দিয়েছিল ১০টি বামপন্থী ট্রেড ইউনিয়ন। কিন্তু সকাল থেকে কর্মমুখী আম-জনতা। দীর্ঘ সময় লকডাউনে ঘরে থেকে খাদ্যের অভাব, কাজেও চাকরি টিকিয়ে রাখার লড়াই প্রতিনিয়ত লড়তে হচ্ছে। এমন একটি সময় সাধারণ ধর্মঘট শ্রমিকদের কাছেও সমস্যা এনে দিয়েছে এমনটাই মত শ্রমিকদের একাংশের। এই কারণে লকডাউন পরবর্তী সময় ধর্মঘটের প্রভাব পড়ল না জেলার বিভিন্ন প্রান্তে।

চেঙ্গাইল স্টেশনের পাশে পিচ ওঠা রাস্তা চলে গিয়েছে বাউড়িয়া বুড়িখালি। সকালে জুট মিলে কাজে যাওয়ার ভিড় অন্যান্য দিনের মতন বৃহস্পতিবারও ছিল চোখে পড়ার মতন। বাউড়িয়া খেয়া ঘাট, উলুবেড়িয়া কালীবাড়ি লাগোয়া খেয়া ঘাট, আছিপুর যাবার খেয়াঘাট সর্বত্র স্বাভাবিক ভিড়। সাইকেল, বাইক নিয়ে গঙ্গা পাড় করবার ভিড়। উলুবেড়িয়া, বাউড়িয়া, সাঁকরাইল, সাঁতরাগাছি প্রতিটি স্টেশনে মানুষের উপস্থিতি ছিল। সাঁকরাইল স্টেশনে সকাল ৯টা নাগাদ ট্রেন ধরবার জন্য অপেক্ষায় সৌরাশিষ বটব্যাল। শ্রমিকদের জন্য ধর্মঘট করে আসন্ন বিধানসভা ভোটে বিহারের মত জমি পোক্ত করতে চাইছে বামেরা। কিন্তু ওঁরা কি খোঁজ নেয় মাসিক মাইনে দশ তারিখেও মিলছে না! মধ্যবিত্ত কোনকিছু পাবার আশা ছেড়ে-ই দিয়েছে। সেসবের দিকেও নজর দিক জানালেন সৌরাশিষ।

আমতা স্টেশন থেকে ছেড়ে আসা সকালের ডাউন লোকালকে কয়েকটি স্টেশনে আটকে দেওয়া হয়। ডোমজুড় এলাকায় রেল লাইনে গাছের গুঁড়ি ফেলে ট্রেন আটকানোর চেষ্টা করে বেশকিছু যুবক। দক্ষিণ-পূর্ব রেলের খড়গপুর শাখায় উলুবেড়িয়া ও বিরশিবপুর স্টেশনের মাঝে চলে অবরোধ। উলুবেড়িয়া উড়ালপুলের নিচেও রেল অবরোধ করা হয় বাম নেতা কর্মীদের পক্ষ থেকে। শ্যামপুর শশাটি বাজারে বাস রাস্তায় বসে পড়ে বিক্ষোভ দেখায় বাম ও কংগ্রেস সমর্থকরা। সাঁকরাইল সারেঙ্গা খেয়াঘাট সংলগ্ন এলাকায় মিছিল করেন বাম কর্মী-সমর্থকরা। ১৬নং জাতীয় সড়কে নিমদিঘি এলাকায় কিছু সময়ের জন্য জাতীয় সড়ক অবরোধ করে ধর্মঘট সমর্থকরা। আন্দুলের একটি ব্যাঙ্কের কাজকর্ম বন্ধ করে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে ধর্মঘট সমর্থনকারীদের বিরুদ্ধে।

আমতা শহরে কলেজ মোড় থেকে সিটিসি বাসট্যান্ড অবধি ধর্মঘটের সমর্থনে মিছিল করেন বাম কর্মী সমর্থকরা। উলুবেড়িয়া শহরে মিছিল করে এসইউসিআই কর্মী সমর্থকরা। হাওড়া ড্রেনেজ ক্যানেল রোডে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির কুশপুতুল পুড়িয়ে প্রতিবাদ জানায় বাম কর্মী সমর্থকরা। বালি জুট মিল কর্তৃপক্ষ সাধারণ ধর্মঘটের সমর্থনে নোটিশ দিয়ে মিলের কাজকর্ম বন্ধ রাখলো। সকালে হাওড়া স্টেশনে ট্যাক্সি মিললেও বেলা গড়াতেই ট্যাক্সি স্ট্যান্ডে ট্যাক্সি অমিল। হাওড়া বাসস্ট্যান্ডে দুরপাল্লার বাস ধরতে বহু মানুষ আসলেও বাস না মেলার অভিযোগ উঠেছে। অন্যদিকে সাধারণ ধর্মঘটের বিরোধিতায় হাওড়ার বেলগাছিয়ায় পথে নামে তৃণমূল কর্মী সমর্থকরা।

সকাল থেকে বাম-কংগ্রেস যৌথভাবে মিছিল করে বিভিন্ন এলাকায়। কিন্তু মিছিলে কর্মী-সমর্থকদের সেইভাবে দেখা মেলেনি। হাতে গোনা কর্মী নিয়ে লাল পতাকা উড়িয়ে সাধারণ ধর্মঘটের সমর্থনে মিছিল করেছে। আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনে ভালো ফল করতে গেলে প্রয়োজন বিপুল জন সমর্থন। সাধারণ ধর্মঘটে জেলায় কর্মী-সমর্থকদের অভাবটাই সামনে চলে আসল। যা বিধানসভা ভোটের আগে আশঙ্কার সৃষ্টি করল।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *