হাওড়ায় ৭০০ কোটি টাকার পরিষেবা প্রদান মুখ্যমন্ত্রীর
কল্যাণ অধিকারী এডিটর রাজন্যা নিউজ
কেন্দ্রীয় বঞ্চনা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে সরব রাজ্য সরকার তথা পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী। ১০০ দিনের কাজ, আবাস যোজনা সহ বিভিন্ন প্রকল্পে বাংলার প্রাপ্য আটকে রেখেছে কেন্দ্রের সরকার। বুধবার হাওড়ার সরকারি পরিষেবা প্রদান অনুষ্ঠান থেকে এবার গুরুতর অভিযোগ তুললেন। মমতার অভিযোগ, “কেন্দ্রীয় প্রকল্পে বাংলা এক নম্বরে ছিল বলেই টাকা বন্ধ করা হয়েছে!”
আর বেশি দেরি নেই প্রায় দুয়ারে লোকসভা ভোট। তার আগে এদিন সাঁতরাগাছি বাসস্ট্যান্ডে সরকারি পরিষেবা প্রদান অনুষ্ঠানে আসেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। রেড রোডে ধর্না মঞ্চে থাকার ফলে শরীর ভালো নেই। ১০১ জ্বর গায়েও একাধিক প্রকল্পের উদবোধন ও শিলান্যাস করেন মমতা। মাঝেমধ্যে বক্তব্য থামিয়ে গ্লাসে রাখা জল খান। মুখ্যমন্ত্রী বলেন “টানা ৪৮ ঘণ্টা ধর্না দিয়ে কাশিটাও বেড়েছে! কাল (বৃহস্পতিবার) আবার বাজেট আছে। আমি একবার কথা দিয়ে দিলে প্রোগ্রাম ক্যানসেল করিনা। এরপরেই কিছুটা আবেগপ্রবণ হয়ে বলেন, আমার জন্ম হয়েছে আন্দোলনের মধ্যে দিয়ে, আমার মৃত্যুও হবে আন্দোলনের মধ্য দিয়ে।”
অসুস্থতার কথা বললেও বাংলার মানুষের জন্য তিনি লড়াইয়ে সবসময় প্রস্তুত। বক্তব্যের মধ্যেও সেই চেনা ছন্দেই দেখা গেল মমতাকে। তিনি বলেন, অসুস্থতা যে তাঁকে কোনওভাবেই কাবু করতে পারে না। বাংলাকে অনেক এগিয়ে দিয়েছি, আরও এগোতে হবে। আমরা ১০০ দিনের কাজে এক নম্বর। আমাদের টাকা বন্ধ করে দেওয়া হল। আসলে, কেন্দ্রীয় প্রকল্পে বাংলা এক নম্বরে ছিল বলেই টাকা বন্ধ করা হয়েছে! আমি মা-বোনেদের কোনও টাকা বন্ধ হতে দেব না। বাংলা কারো কাছে মাথা নত করে না। মনে রাখবেন আমার নাম আন্দোলন, আমার নাম সংগ্রাম। এরপরেই তাঁর বিশ্লেষণ, যখন প্রাপ্য টাকা বন্ধ করে দেওয়া হয় তখন মা-বোনেরা যেভাবে সংসার চালায়, আমিও তেমন ভাবেই সরকার চালাই।
বুধবারের সরকারি মঞ্চে আধঘন্টার বক্তব্যে রাজনীতির কথা বলেননি। হাওড়ায় মা মাটি মানুষ সরকার যে বিস্তারিত কাজ করেছে তার খতিয়ান তুলে ধরেন। বিনিয়োগ ও বেকার ছেলেমেয়েদের চাকরির দিশা দিয়েছে সরকার। হাওড়ায় বিনিয়োগ নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “হাওড়ায় এখন শিল্পে জোয়ার এসেছে। সাড়ে ৫ হাজার শিল্পে বিনিয়োগের পরিমাণ সাড়ে ৫ হাজার কোটি টাকা। উলুবেড়িয়াতে লজিস্টিক হাব তৈরি করছে অ্যামাজন। দেড় লক্ষের বেশি ছেলেমেয়ের কর্মসংস্থান হবে। ইতিমধ্যে হাওড়ায় রয়েছে ৩৫ টি ক্লাস্টার। পাশাপাশি তৈরি হয়েছে ১৭টি ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্ক। বেকারদের চাকরি নিয়ে আগামীর দিশা দেখান। তিনি বলেন, বেকার ছেলেমেয়েদের কর্ম সংস্থানের লক্ষ্যে এবার যোগ্যশ্রী প্রকল্প চালু করতে চলেছে সরকার। আইএএস, আইপিএস, ডব্লুউবিসিএস যারা হতে চায়, তাদের জন্য এই প্রকল্প। যোগ্যশ্রী প্রকল্পে এবার থেকে SC-ST শুধু নয় এবার জেনারেল পড়ুয়াদের জন্যও সুযোগ মিলবে। লোকসভা ভোটের আগে যা ‘মাস্ট্রারস্টোক’ বলেই মনে করছে রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের অনেকেই।
মমতা আরো বলেন, “এদিনের অনুষ্ঠান থেকে বিভিন্ন প্রকল্পে প্রায় ৭০০ কোটি টাকার পরিষেবা তুলে দেওয়া হল। উপকৃত হবেন প্রায় দেড় লক্ষ মানুষ। বক্তব্যের একদম শেষে হাসিমুখে বলেন, ১০১ জ্বর ছিল, আপনাদের কাছে এসে আমার টেম্পারেচার কমে গিয়েছে, আমি ভাল হয়ে গিয়েছি।”