রাজীব বাবু সেদিন তৃণমূলের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে ৮৫৮ ভোট কেন পেয়েছিলেন তীব্র কটাক্ষ জেলা সভাপতির
কল্যাণ অধিকারী
হাইলাইটস
❏ শুভেন্দু বাবু গেছেন, রাজিব বাবু গেছেন, অনেক আগেই যাবার কথা ছিল, ভালো হয়েছে বিদায় নিয়েছে।
❏ অধীর চৌধুরীকে হারাতে পারেননি, আপনি সেইদিনই বিজেপির হয়ে প্রচার শুরু করেছিলেন!
❏ রাজীব বাবু ভুলে যাবেন না মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দৌলতে এই বাংলার মানুষ আপনাকে চিনল বললেন গৌতম দাস।
তৃণমূল দল ছেড়ে তাঁরা এখন বিজেপিতে। প্রায় নিয়ম করে তৃণমূলের বিরুদ্ধে ক্ষোভ ঝড়াচ্ছেন। তৃণমূলের নেতাদের নাম করে বিষাদগার করতেও ছাড়েন না। এবার রাজীব-শুভেন্দু কে এক আসনে বসিয়ে তীব্র আক্রমণ শানালেন দক্ষিণ দিনাজপুর জেলা সভাপতি গৌতম দাস। সদ্য বিজেপিতে যাওয়া রাজীব ব্যানার্জিকে তীব্র আক্রমণ শানালেন তিনি। বাদ গেলেন না শুভেন্দু। তাঁকেও কটূক্তি করলেন।
তৃণমূলের কর্মী সম্মেলন ছিল। সেখানে একাধিক কার্যকর্তা উপস্থিত ছিলেন। তৃণমূল কংগ্রেসের চেয়ারম্যান বিপ্লব মিত্রও ছিলেন। সেখানে গৌতম বাবু বলেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বুঝতে পেরেছেন যারা দলে থেকে দলটাকে লুট করছে তাঁদের বিরুদ্ধে কোথাও একটু আটকে দিতে হবে। আর যখনই আটকানো শুরু হয়েছে তারা বুঝেছে এখানে থেকে আর ঘাবলাবাজি করা যাবে না। তাই তাঁরা বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন। এরপর শুভেন্দু অধিকারী কে আক্রমণ শানালেন। তিনি বলেন, বাড়িতে দু’টো এম.পিএ, একটা এমএলএ, একটা চেয়ারপার্সান একটা কাউন্সিলর। হলদিয়ার চেয়ারম্যান, কো-অপারেটিভ এর চেয়ারম্যান আর থাকা যাবে না। তাই বিজেপির কাছে নতুন শেল্টার খুঁজে নিয়েছেন।
এরপরেই পরিবারতন্ত্র নিয়ে আক্রমণ করেন। তিনি বলেন, শুভেন্দু বাবু পদের কথা বলেন। মেদিনীপুরে আমিও দুবার গিয়ে ঘুরে এসেছি। চায়ের দোকান বলুন, রাস্তার ধারে বলুন, মানুষ অন্তত মান খুলে যে কথাটা বলে। এই পরিবারতন্ত্রের দাপটে এই বাংলাতে মেদিনীপুর একটা জেলা যেখানে আমরা মাথা তুলে কথা বলতে পারি না। সমস্ত ক্ষমতা তাঁরা দখল করে নিয়েছে। ছেলে-বৌমা আর বাবার মধ্যে ভাগ করে, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কে ব্যবহার করে। সেই শুভেন্দু বাবু কপালে গেরুয়া তিলক কেটে বড় বড় কথা বলছেন। মনে পরে মুর্শিদাবাদের মাটিতে দাঁড়িয়ে আপনি বলেছিলেন, অধীর চৌধুরীকে হারাতে না পারলে আপনি দল ছেড়ে দেবেন। আপনি ঠিকই বলেছিলেন আপনি সেইদিনই বিজেপির হয়ে প্রচার শুরু করেছিলেন! তাই তো সৌমিত্র খাঁ বলেছে, যে শুভেন্দু বাবু না থাকলে বিষ্ণুপুর লোকসভা সিটে জিততে পারতাম না। মালদা, মুর্শিদাবাদ, উত্তর দিনাজপুর ক’টা সিট আপনি জেতাতে পেরেছেন? মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তখনি যদি ঘাড় ধরে শুভেন্দু কে বের করে দিত, তাহলে অন্তত মালদা তে আমরা হারতাম না। উত্তর দিনাজপুরে হারতাম না। দক্ষিণ দিনাজপুরে আমরা লড়াই করেছি। সামান্য ভোটে আমরা হেরেছি। কোথাও হয়তো আমাদের কাজ করবার মধ্যে ত্রুটি ছিল।
এরপরেই রাজীব ব্যানার্জি কে তীব্র আক্রমণ শানালেন। গৌতম বাবু বলেন, আজকে রাজীব বাবু খুব বড় বড় কথা বলছে মঞ্চে দাঁড়িয়ে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দৌলতে এই বাংলার মানুষ যাকে চিনল। এই দক্ষিণ দিনাজপুর জেলায় যাকে আমরা হাত ধরে নিয়ে এসছিলাম। এই দক্ষিণ দিনাজপুরের জেলায় যার জন্য পরিচিতি তৈরি হয়েছিল। রাজীব বাবু ভুলে যাবেন না। তৃণমূলের বিরুদ্ধে আপনি একবার দাঁড়িয়েছিলেন। ওই ডোমজুড় বিধানসভা জুড়ে ৮৫৮ ভোট পেয়েছিলেন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দৌলতে ওই ডোমজুড় বিধানসভায় এম.এল.এ হয়েছিলেন। মন্ত্রী হয়েছিলেন। ইতিহাস কখনও মিথ্যা কথা বলে না। রাজীব বাবু আপনি অত বড় নেতা তা হলে ডোমজুড় বিধানসভায় সেদিন ৮৫৮ ভোট পেয়েছিলেন কেন? অনেক ইতিহাস। শুভেন্দু বাবু, রাজীব বাবুদের তৃণমূল কংগ্রেস জেনে ফেলেছে। মুখের আড়াল, মুখোশের আড়ালে মুখকে ঢাকিয়ে রাখা সম্ভব নয়। সেটা বুঝতে পেরেছিল তৃণমূল কংগ্রেস। তাই তাদের কে চিহ্নিতকরণ করেছিল। আর তাই তারা তরিঘরি ভারতীয় জনতা পার্টিতে নাম লিখিয়েছিল।
তৃণমূল তৃতীয় বারের জন্য ক্ষমতায় আসছে দৃঢ় ভাবে বললেন দক্ষিণ দিনাজপুর জেলা তৃণমূল সভাপতি। তিনি বলেন, চিন্তা করবেন না মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তৃতীয় বারের জন্য মুখ্যমন্ত্রী হবেন। ২০১১ সাল যখন এই বাংলার মাটিতে বামফ্রন্ট নামক জগদ্দল পাথরটা কে উৎখাত করবার জন্য বাংলার জনতা সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছিল। সেদিন কিন্তু বামফ্রন্ট নেতাদের মধ্যে কোন বিভাজন ছিল না। তাঁরা উপরতলায় হাত ধরে একসঙ্গে ছিল। সাধারণ মানুষ ঠিক করেছিল যে না, আমরা সুস্থ হয়ে নিঃশ্বাস নিতে পারছি না। বাংলা ক্রমান্ন পিছিয়ে পরছে। ২০১১ সালে বামফ্রন্ট নামক জগদ্দল পাথরটা কে উৎখাত করতে হবে। কারা সিদ্ধান্ত নিয়েছিল সেদিন বাংলার মানুষ, বামফ্রন্টের নেতারা নয়। ২০২১ কিন্তু তার উল্টো চিত্র দেখাচ্ছে। কিছু সুবিধাভোগী নেতা দল বদলাচ্ছে। এদিক-ওদিক যাচ্ছে। গেরুয়া জামা পরছে। আর তত বেশি করে গ্রাম-বাংলার মানুষ একত্র হচ্ছে। সংঘবদ্ধ হচ্ছে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যাকে তৃতীয় বারের জন্য মুখ্যমন্ত্রী করতে হবে। সিদ্ধান্ত নিয়েছে গ্রাম-বাংলার মানুষ। এই একুশে নির্বাচন ভারতবর্ষের সংবিধানকে রক্ষা করবার নির্বাচন। তারজন্য মুখ্যমন্ত্রী কে তৃতীয় বারের জন্য ক্ষমতায় আনবে পশ্চিমবাংলার মানুষ।