জঙ্গলমহলের মানুষ উজাড় করা ভালোবাসা আর সমর্থন জানাল মমতাকে

কল্যাণ অধিকারী এডিটর রাজন্যা নিউজ

বসন্তের শেষে জঙ্গলে গাছের ডালে নতুন পাতা গজিয়েছে। প্রকৃতি এই সময় উদ্বেল হয়ে ওঠে। গাছের এ ডাল ও ডাল ঘুরে ঘুরে পোস্টম্যান কু-উ-উ-উ ডাক দিচ্ছে। আদিবাসী, শবর সম্প্রদায়ের মানুষজন গাছের শুকনো পাতা আর ডাল কুড়িয়ে মাথায় করে বয়ে নিয়ে আসে। তারপর মাটির উনুনে আগুন জ্বালান। শুরু হয় রান্না। কিন্তু ভোট এসে অনেককিছু এলোমেলো করে দিয়েছে। চারিদিকে অত্যাধুনিক বন্দুক হাতে নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে। শোনা যাচ্ছে বাহিনীর ভারি বুটের শব্দ। গলা শুকিয়ে যায় সুশীল সমাজ থেকে দূরে থাকা মানুষগুলোর। এমন একটি সময় মনের কথা শোনার আর মনের মতন কথা বলা মেয়ের কাছেই ছুটে গিয়েছে ওঁরা। উজাড় করে দিয়েছে ভালোবাসা আর সমর্থন।

জঙ্গলে পায়ের কাছে শুকনো খরখরে স্তূপাকার পাতা। কোন এক গোপন গ্রাম ঘেঁষা জঙ্গলে রাতের পর রাত কাটিয়ে দেওয়া লোকগুলোর এখন আর অস্তিত্ব নেই। রাস্তা কেটে পেটের লড়াইয়ে নামতে হয় না। চাপচাপ রক্তে ভেজা রাস্তার পাশ দিয়ে সাপ্তাহিক একদিন দু ঘন্টার জন্য খোলা বাজারে যেতে হয় না। দুমুঠো ভাতের জন্য থালা হাতে ঘুরতে হয় না এদিক-ওদিক। তারপরও অনন্ত বেলায় তাঁদের কথা শুনেছিল ওঁরা। স্বপ্ন বুনেছিল হয়তোবা আরও কিছু দেবে। মহিলার থেকেও বেশি। পাকা ঘর, বিনি পয়সার বিদ্যুৎ, গ্যাস। ছেলে-মেয়েরা চাকরি পাবে। ঝটকা খেতে সময় লাগেনি বিস্তর। এবার আর কোন সিদ্ধান্ত বদল নয়। বাংলার কাছে বাংলার মেয়ে রয়েছে। ঝড় হোক বা লকডাউন, দিন বা রাত, দুয়ারে এখন সরকার। এক জায়গায় সমস্তকিছু। বাঁশির সুরে কু-উ-উ-উ ডাকে আর সাড়া নয়। জঙ্গলের পোস্টম্যানের কু-উ-উ-উ ডাক পছন্দের।

ভাঙা পায়ে বিভিন্ন সভা মঞ্চ থেকে কাতর আর্তি মেয়েটির। “মা গো আমি আপনাদের পাহারাদার। এবার আমাকে ভোটটা দিন। সরকার দুয়ারে চলে আসবে।” এমন ডাক শুনে চুপ-থাকাটা কি সম্ভব! কদিন আগে পর্যন্ত পাহাড় আর জঙ্গল ছিল তাঁদের দখলে। রবিবার ভোটের বাক্স খুলতেই রীতিমতো বিস্মিতই থেকে গেছে শহরের মানুষ। জঙ্গলে ঘাসফুল ফোটাতে উজাড় করে ভোট দিয়েছেন জঙ্গলমহলের মানুষ। ভোটের সময় ওঁরা শুনেছে যে এত কোম্পানি বাহিনী আসছে। তার মধ্যে কে সিআরপি, এসএসবি, বিএসএফ, আইটিবিপি, কে-ই বা সিআইএসএফ জানেও না বোঝেও না। একজনকেই শুধু চেনে আর বোঝে তিনি মমতা। তাঁদের মাটির ঘরের সামনে খাটিয়ায় বসে অনায়াসে মনের কথাগুলো শুনে যায়। আদিবাসীদের মাটির ঘরের মেঝেয় বসে কলাপাতায় তৃপ্তির ভোজ সেরেছিলেন অমিত শাহ। কিন্তু মনের কাছে পৌঁছাতে পারেননি। সেই কাজটাই সেরেছেন মমতা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *