ট্রলারের কেবিনে ঘুমানোই কাল হল! ফ্রেজারগঞ্জে দেহ আসতেই কান্নার রোল
কল্যাণ অধিকারী এডিটর রাজন্যা নিউজ
ট্রলারের কেবিনে ঘুমানোই কাল হল। ৯ জন মৎস্যজীবীর দেহ উদ্ধারের পরেই এই প্রশ্ন ঘুরছে বকখালিতে। শোকের আবহ সর্বত্র। এলাকায় পৌঁছে মৃতদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানান সুন্দরবন উন্নয়নমন্ত্রী বঙ্কিমচন্দ্র হাজরা। তাঁদের ছেলে-মেয়েদের পড়াশোনার দায়িত্ব নেবেন বলে জানান তিনি।
বৃহস্পতিবার ভোর রাতে ডুবন্ত এফবি হৈমবতী নামে ট্রলারটিকে ফ্রেজারগঞ্জ মৎস্য বন্দরে নিয়ে আসা হয়। জল ছেচে ফেলতেই কেবিনে জালের মাঝে দেহ গুলি আটকে থাকতে দেখা যায়। উদ্ধার হয় এক এক করে ৯জনের দেহ। এখনও মেলেনি এক জন মৎস্যজীবীর দেহ। তাঁর সন্ধানে চলছে সমুদ্রে খোঁজাখুঁজি। মৃতদের শঙ্কর শাঁসমল, বুদ্ধদেব মাইতি, অনাদি শাঁসমল, নারায়ন শাঁসমল, গোপাল জানা, রবীন বর, অজিৎ বেরা, গৌতম পারুই, সন্তোষ মণ্ডল এবং গৌরহরি দাস। মৃত মৎস্যজীবীরা মহারাজগঞ্জ, পাতিবুনিয়া, হরিরামপুর, দেবনিবাস, শিবপুর, রাধানগরের বাসিন্দা।

বুধবার ভোররাতে রক্তেশ্বরী চরের কাছে ট্রলারডুবির ঘটনার পরেই নিখোঁজদের উদ্ধারে সচেষ্ট ছিল প্রশাসন। জেলাশাসক পি উলগানাথন, সুন্দরবন পুলিশ জেলার সুপার ভাস্কর মুখোপাধ্যায়-সহ প্রশাসনের আধিকারিক এবং মৎস্যজীবী সংগঠনের সদস্যরা প্রথম থেকে তদারকি করেন। হোভারক্র্যাফ্ট সাহায্যে সমুদ্রে তল্লাশি চালানো হয়। ডর্নিয়ের বিমানের মাধ্যমেও আকাশপথে নজরদারি চালানো হয়। খোঁজ মেলেনি দেহ। ক’দিন ধরেই পরিবেশটা ছিল শোকাচ্ছন্ন। বৃহস্পতিবার ট্রলার উদ্ধারের পরেই ভোরে নিয়ে আসা হয় ফ্রেজারগঞ্জ মৎস্যবন্দরে। ছুটে আসেন বহু মানুষজন। দেহ উদ্ধারের সঙ্গে সঙ্গে চতুর্দিকে কান্নার রোল। গত দুই দিন ধরে চোখের পাতা এক করেনি গ্রামের মানুষজন। দেহ উদ্ধারের পর একটাই প্রশ্ন কি হবে সংসারগুলোর। দিন আনা দিন খাওয়া পরিবারের মাথা নুইয়ে গেল। পরিবারের লোকজন থেকে পাড়া-পড়শি প্রত্যেকের চোখের জল বারবারই গাল উপচে পড়েছে।

মৃত মৎস্যজীবীদের পরিবারের হাতে ২ লক্ষ টাকার চেক তুলে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এতে কি চোখের জল মুছবে অসহায় পরিবারগুলোর। জীবন বিপন্ন করে গভীর সমুদ্রে মাছ ধরতে যায় ওঁরা। কেউবা ফিরে আসে আবার কারও সলিলসমাধি হয় বঙ্গোপসাগরে। এভাবেই জীবন-জীবিকা চলতে থাকে ফ্রেজারগঞ্জ, নামখানা সহ একাধিক অঞ্চলের মৎস্যজীবীদের।