২১-এর মমতাই ২৪-এ জাতীয় মুখ

কল্যাণ অধিকারী, এডিটর রাজন্যা নিউজ

বুধবার দুপুরের পর আক্ষরিক অর্থে জাতীয় স্তরে মোদী বিরোধী রাজনীতির নতুন অধ্যায় রচিত করে দিলেন বাংলার মেয়ে মমতা। সর্বভারতীয় রাজনীতিতে দোদুল্যমান বিরোধীদের এক সুতোয় বাঁধতে একুশের মঞ্চকে ব্যবহার করলেন তিনি। অনলাইন প্ল্যাটফর্ম-এর মধ্য দিয়ে দেশের তাবড় নেতাদের জোট রাজনীতিতে সক্রিয় ভাবে তুলে ধরার প্রয়াস শুরু করে দিলেন। তাঁর কথায়, ‘নির্বাচনের সময়ে জোট করে লাভ নেই। এখন থেকেই তৈরি হতে হবে’।

কালীঘাট থেকে দিল্লির কনস্টিটিউশন ক্লাব, উত্তরপ্রদেশের লখনউ, গুজরাট, ত্রিপুরা, অসম, পঞ্জাব, তামিলনাড়ু সর্বভারতীয় রাজনীতিকে একসূত্রে বাঁধলেন। কখনও বাংলা, কখনওবা বাংলার ভাঁজে ভাঁজে মেশাচ্ছেন হিন্দি, ইংরাজি তিন ভাষায় বক্তব্য রাখলেন। সকল ভাষার মানুষদের কাছে পৌঁছান ছিল উদ্দেশ্য। সর্বভারতীয় নিউজ চ্যানেলে একটানা মমতার বক্তব্য তুলে ধরাটাও ছিল এক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। রাজ্যে কংগ্রেস এবং বামেদের সঙ্গে জোট নেই। দিল্লি কিন্তু মমতার সঙ্গে রয়েছে। এদিন মমতার বক্তব্যের আগে থেকেই দিল্লির কনস্টিটিউশন ক্লাবে ছিলেন প্রাক্তন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পি চিদম্বরম, আর এক কংগ্রেস নেতা দিগ্বিজয় সিং ছিলেন এনসিপি নেতা শরদ পাওয়ার ছাড়াও একাধিক দলের নেতারা। ভিন রাজ্যের মানুষ যাতে বুঝতে পারেন, তার জন্য সেখানে অনুবাদের ব্যবস্থা করা হয়েছিল। সমস্ত বক্তব্য তাঁরা শোনেন। মমতার লক্ষ্য ছিল বিরোধী দলগুলিকে সঙ্গে নিয়ে জাতীয় স্তরে তৃণমূলকে ও নিজেকে প্রতিষ্ঠা করা। অনেকাংশেই যা সফল এমনটাই দাবি রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের একাংশের।

অদূর ভবিষ্যতে জাতীয় রাজনীতির মুখ হয়ে ওঠা স্রেফ সময়ের অপেক্ষা তা তিনিও বুঝে গিয়েছেন। নরেন্দ্র মোদীকে সরাসরি চ্যালেঞ্জ জানানোর জন্য দেশে মমতার বিকল্প হয়ে উঠতে পারেনি রাহুল। সদ্য বিধানসভা ভোটে বিজেপিকে মুতোর জবাব দিয়েছেন মমতা। মূলত তাঁর একার লড়াইয়ে সামনে মোদি-অমিত শাহ- যোগীর ডেলি-প্যাসেঞ্জারিও কাজে আসেনি। ২৪-এর লোকসভা ভোটে এনডিএ-র সামনে প্রতিপক্ষ হয়ে উঠতে গেলে একজনকে মুখ করে লড়াই করা প্রয়োজন। তারজন্য অন্যতম মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কৃষকদের পাশে থেকে লড়াইকে সমর্থন জানানো, মূল্যবৃদ্ধি, ভ্যাকসিনের অভাব নিয়ে কেন্দ্রকে লাগাতার আক্রমণে এগিয়ে মমতাই। এদিন বক্তব্যেও তীক্ষ্ণ আক্রমণ শানানেল তিনি। ধারাবাহিক আক্রমণে অনেকটাই কোণঠাসা দিল্লীর কেন্দ্রীয় সরকার। বাদল অধিবেশন চলছে। একাধিক বিল আনার প্রস্তাব রয়েছে মোদী সরকারের তাও বক্তব্যে তুলে ধরেন তিনি। ওঁরা দেশের কথা ভাবে না। ওঁরা মানুষের কথা ভাবে না। ওঁরা বিজেপির কথা ভাবে বলেও কটাক্ষ করেন তিনি।

আগামী বছরের গোড়ায় উত্তরপ্রদেশ নির্বাচন। জাতীয় রাজনীতি যা বড় ফ্যাক্টর। উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথের ম্যাজিক গত কয়েক বছরে অনেকটাই থিতিয়ে গেছে। পাশাপাশি কোভিড মোকাবিলায় ব্যর্থ তিনি এমনটাই অভিযোগ। মানুষের মধ্যে ক্ষোভও প্রকাশ্যে এসেছে। এমন একটি সময়ে মমতার একুশের মঞ্চ ছিল বিজেপি বিরোধী দলের কাছে অক্সিজেন। তাতে তিনি অনেকটাই সফল।

জ্যোতি বসুর পর মমতাই একমাত্র যিনি কলকাতা থেকেই জাতীয় রাজনীতির এক গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র হয়ে উঠছেন। তবে ২৪-এর লড়াই বৃহৎ। সেক্ষেত্রে একজোট হয়ে লড়াইয়ে নামতে হবে আঞ্চলিক দলগুলিকে। ২৭ তারিখ মমতার দিল্লি সফর অনেক কথাই বলবে। সর্বভারতীয় রাজনীতির জলের মাপ ওদিন অনেকটাই স্পষ্ট হয়ে যাবে।

ছবি সংগৃহীত।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *