বাংলার ‘হোয়াং হো’ দামোদর শুধু কষ্টই দিয়ে গেল, আক্ষেপ জলমগ্ন গ্রামের মানুষদের

কল্যাণ অধিকারী, এডিটর রাজন্যা নিউজ

বাংলার ‘হোয়াং হো’ দামোদর এখনও কতখানি দুঃখের হাড়েহাড়ে টের পাচ্ছেন আমতা-২ ব্লক ও উদয়নারায়ণপুর ব্লকের হাজার হাজার জলমগ্ন মানুষ। দামোদরের বাঁধ ভেঙেছিল রবিবার রাতে। সোমবার সকাল থেকে কুলটিকারি, স্যাওড়াবেড়িয়া, বিনলা গ্রামের বাড়ির দোরগোড়ায় পৌঁছে গেল জল। কি হবে এবার ভেবে পাচ্ছেন না অসীম হাজরা, শ্রীমন্ত বাগ, প্রশান্ত মাজির মতন সহস্র মানুষ।

রবিবার রাত শেষ হয়েছিল উদয়নারায়ণপুর ব্লক এলাকা ডুবিয়ে। সোমবার আমতা-২ ব্লকের পাঁচটি গ্রাম জলমগ্ন হয়েছে। গ্রামের মানুষদের তাড়া করছে দামোদর। দিনভর জল নিয়ে পর্যালোচনা চলে বিডিও অফিসে। দুপুরে জেলাশাসক মুক্তা আর্য এলাকায় পৌঁছে যান। স্যাওড়াবেড়িয়া জলমগ্ন এলাকায় পৌঁছে জল ছবি দেখেন। এরপর সাংবাদিকদের সম্মুখীন হন। তিনি বলেন, “বন্যার্তদের জন্য সমস্ত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। জয়পুরের রামপুর এলাকায় খালের অবস্থা ভালো নয়। ৫টি গ্রাম জলমগ্ন জানান তিনি। পরিস্থিতির দিকে কঠোর নজর রয়েছে প্রশাসনের। জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা দল কাজ করছে।”    

ডিভিসি জল ছাড়লে দামোদর দিয়ে জল পৌঁছে যায় উদয়নারায়ণপুর, আমতার গ্রামের পর গ্রামে। এর থেকে মুক্তি কবে মিলবে বুঝতে পারছে না গ্রামের জমিতে কৃষিজ ফসল ফলানো মানুষগুলো। বিনলা-কৃষ্ণবাটি, সোনাতলা, বিধিচন্দ্রপুর একের পর এক গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় হাজার-হাজার বিঘা জমির ফসল জলের তলায়। বাড়িতে ঢুকেছে জল। পানীয়জলের কল জলে ডুবেছে। যত্রতত্র বিষাক্ত সাপ ঘুরে বেড়াচ্ছে। পরিবার পরিজন নিয়ে বেঁচে থাকাটাই এখন চ্যালেঞ্জ। সরকার বদল হয়, মানুষের ঘরে স্মার্টফোন তারপরেও দামোদর ‘মঙ্গল’ হয়ে উঠলো কোথায়? জলবন্দি অধিকাংশ গ্রামে পানীয় জলের চরম সংকট দেখা দিয়েছে। জলের তলায় পানীয় জলের ট্যাপ। বিদ্যুৎ পরিষেবা স্বাভাবিক থাকলেও ব্যাহত হবার আশঙ্কা করছে গ্রামবাসীরা।

সোমবার দেখা গেল আমতা-২ ব্লকের তরফে জলের গাড়ি পাঠিয়ে পাউচ দিয়ে জল সরবরাহ করা হচ্ছে। মাটির বস্তা দিয়ে রামপুর খালের কাছে জল আটকানোর প্রাণপণ চেষ্টা চলছে। কিন্তু কতক্ষণ জানেন না মাটির মানুষগুলো। আরও দেড় লক্ষাধিক কিউসেক জল ধেয়ে আসছে। গ্রামের পর গ্রাম জলের তলায় চলে যাবার আশঙ্কা করছে হাজারও গ্রামের মানুষ। সোমবার জেলাশাসক জানিয়েছেন উদয়নারায়ণপুরে ১২ হাজার বন্যার্তকে উঁচু এলাকায় সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। কিন্তু আমতা-২ ব্লকের মানুষদের কি হবে? মঙ্গলবার একাধিক গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় প্লাবনের আশঙ্কা রয়েছে। জিবি চিতনান, ভাটোরা জলের তলায়। জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা দল সোমবার থেকে কাজ শুরু করেছে। ত্রাণের জন্য অপেক্ষায় বাসিন্দারা। আমতা-২ পঞ্চায়েত সমিতির সহ সভাপতি দেলোয়ার হোসেন মিদ্যা দ্বীপাঞ্চলের বাসিন্দাদের পাশে দাঁড়িয়েছেন। তবে আশার আলো আকাশ পরিস্কার। বৃষ্টি হচ্ছে না। কিন্তু ডিভিসির ছাড়া জল দেড় লক্ষ জল তাকে রুখবে কীভাবে।

আমতা বিধানসভার বিধায়ক সুকান্ত পাল দিন-রাত এক করে জলমগ্ন এলাকায় রয়েছেন। কেউ ফোন করছেন দাদা ত্রিপল চাই, ত্রাণ মেলেনি এখনও। দ্রুততার সঙ্গে ব্যবস্থা করছেন। নৌকা এনে ডুবন্ত এলাকার মানুষদের সহযোগিতা করছেন। আমতা-২ বিডিও অফিস জলমগ্ন হলে বেতাই গ্রামে বিডিওর কাজকর্মের ব্যবস্থা করা হবে এমনটাই বিডিও সূত্রে জানা যাচ্ছে। 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *