জল নামতেই বেরিয়ে আসছে ভয়াবহ ক্ষত, মাটির বাড়ি তো-বটেই, পাকা বাড়িও বসে গিয়েছে

কল্যাণ অধিকারী, এডিটর রাজন্যা নিউজ  

ডিভিসি জল ছাড়া কমাতেই দামোদর নদে জলস্তর অনেকটাই নেমেছে। উদয়নারায়ণপুর, আমতার বন্যা পরিস্থিতিও কিছুটা হলেও উন্নতি হয়েছে। ক্রমশ জেগে উঠছে এলাকা। জমির ফসল নষ্ট, মাটির বাড়ি তো বটেই, পাকা বাড়ির একতলাও জলের নিচে থাকায় বসে গিয়েছে বহু ঘর। জল কিছুটা কমতেই বন্যার ভয়াবহতা সামনে চলে আসছে।

সেহাগোড়ী থেকে নৌকায় চেপে গন্তব্য ছিল ভাতেঘড়ী, নিশ্চিন্তপুর গ্রাম। রাস্তার দুপাশে দোকানের স্যাটার অর্ধেক অবধি এখনো ডুবে রয়েছে। বৃহস্পতিবারও মাঠের মাঝখানে বাড়ির ছাদের গা অবধি জল ছিল। এদিন দু হাত নেমেছে। দেখা যাচ্ছে জানালা। হাত নেড়ে মহিলারা ত্রাণ চাইছে। ক্যামেরা দেখে চিৎকার করে বলতে থাকে ‘পাইনি কিছুই’। বাচ্চাদের দুধের ব্যবস্থা তো করে দিন। ভাতেঘরি গ্রামের অষ্ট প্রামাণিক, সুনিল মাজি ভেলায় করে জল নিয়ে যাচ্ছে। রেশনের চাল থাকলেই কি হবে আনাজপত্রের তো দরকার। জমির ধান গেছে, ডাঙ্গার সবজিও নষ্ট হয়ে গেছে। বাড়ির সামনে ভেসে বেড়াচ্ছে মরা সাপ। এভাবে কি বেঁচে থাকা যায় প্রশ্ন তুললেন। তিনি একা নন এমন কথা অহরহ শোনা গেল।

জমিতে রাস্তার ধারে মাছ ধরার জাল পেতেছে গ্রামবাসীরা। আস্থানা ডুবে যাওয়ায় এদিক-ওদিক ঘুরে বেড়াচ্ছে সাপ। জালে আটকেও যাচ্ছে। দীর্ঘক্ষণ জালে আটকে থাকায় সাপ মরে যাচ্ছে। সেই সমস্ত সাপ জলে ভাসিয়ে দিচ্ছে। ভেসে চলে যাচ্ছে গ্রামের মানুষদের বাসস্থানে। আতঙ্ক ছড়াচ্ছে। শুক্রবার থেকে হাওড়া জেলা যৌথ পরিবেশ মঞ্চর পক্ষ থেকে সেহাগোড়ীতে সাপ নিয়ে প্রচার করা হচ্ছে। কোনভাবে সাপ যাতে মারা না হয় প্রচার চালাচ্ছেন পরিবেশ কর্মী প্রদীপ রঞ্জন রীতও। জয়পুর থানার এক আধিকারিকের কথায়, ‘গ্রামের মানুষজন মাছ ধরার জাল পাতছে। তাতে সাপ আটকাচ্ছে এমন খবর মিলছে। গ্রামের অধিকাংশ এলাকা ডুবে যাওয়া সম্ভব হচ্ছে না। সচেতনতার প্রচার করা যাচ্ছে না। জল কমলেই বলা হবে’।

চিতনান এলাকার সাকিবুর, সামসেরদের কথায়, ‘দুর্দশার ছবি না দেখিয়ে শুধুমাত্র জলের ছবি দেখানো হচ্ছে। গ্রামের মানুষদের অসহায়তা তুলে ধরা প্রয়োজন। এই কঠিন পরিস্থিতিতে মানুষের জীবন কতটা বিপদের সম্মুখীন তা বুঝবে কবে। এক সপ্তাহ হয়ে গেছে জলে ডুবে এলাকা। কুলিয়া ঘাটের সেতু ভেঙ্গে গিয়েছে। চাইলেও কোথাও যাওয়া যাচ্ছে না। দ্বীপাঞ্চলের মানুষদের জন্য সরকার অনেককিছু করছে। পাকাপোক্ত কুলিয়া সেতু না হওয়া পর্যন্ত দ্বীপাঞ্চলের সার্বিক উন্নয়ন হওয়া মুশকিল। একি যুক্তি কুলিয়ায় দোকান-বাজার করতে আসা মানুষদের। অসহায় মানুষদের পাশে আসছে কোথায়! নদী দিয়ে দ্রুত গতির বোডে করে ঘুরে বেড়াচ্ছেন সবাই। গ্রামের ভিতরের কথাও জানতে হবে।    

আমতা-২ ব্লক ও পঞ্চায়েত সমিতি সূত্রে জানা গেছে, আমতা বিধানসভার বিধায়ক সুকান্ত পালের উদ্যোগে বি.কে.বাটি গ্রাম পঞ্চায়েতের বন্যার্ত তিনশোরও বেশি পরিবারের মাঝে ত্রাণ সামগ্রী তুলে দেওয়া হয়েছে। একি সঙ্গে আমরাগড়ী গ্রাম পঞ্চায়েতের বিভিন্ন প্রান্তে তিনশোরও বেশি বন্যার্ত পরিবারের হাতে ত্রাণ সামগ্রী দেওয়া হয়েছে। জিবি চিৎনানে বন্যার্ত মানুষের পাশে পৌঁছেছেন বিধায়ক সুকান্ত পাল, আমতা-২ ব্লক সমষ্টি উন্নয়ন আধিকারিক মাসুদুর রহমান, দেলোয়ার হোসেন মিদ্যা। ত্রিপল ও ত্রাণ সামগ্রী তুলে দেওয়া হয়েছে। বিধায়কের উদ্যোগে রাজ্যের সেচ মন্ত্রী সৌমেন মহাপাত্রকে কুলিয়ায় এনে সমস্তটা দেখানো হয়েছে। 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *