ডিভিসি-র ‘অভিশাপে’ দু’মাসে দু বার বন্যা! পাকাপোক্ত ব্যবস্থা হোক চাইছে বিধ্বস্ত আমতা উদয়নারায়ণপুর
কল্যাণ অধিকারী, এডিটর রাজন্যা নিউজ
ডিভিসি-র ছাড়া জলে দামোদর শুক্রবার ডুবিয়েছে উদয়নারায়ণপুর। শনিবার ডুবছে আমতা। ডিভিসি-র অভিশাপে দু’মাসে দু বার বন্যা! এবার পাকাপোক্ত ব্যবস্থা হোক চাইছে গ্রামের অসহায় মানুষগুলো। ‘ত্রাণ আর ত্রিপল’ দিয়ে ক’দিনের ক্ষোভ আটকে দেওয়া যায়। কিন্তু শরীরে আটকে যাওয়া গভীর ক্ষত কে মুছতে পারা সম্ভব? রাজনীতি দূরে সরিয়ে জলাধারে জলধারণ ক্ষমতা বাড়ানো এবং নদী বাঁধকে শক্তপোক্ত করা প্রয়োজন, জানাচ্ছেন গ্রামবাসীদের।
ঝিকিরায় মুন্ডেশ্বরী নদী, দামোদর, রূপনারায়ণ, রামপুর খাল, সেহাগোড়ী-বাকসি ক্যানেল একের পর কে নদী বিপদসীমার উপর দিয়ে বইছে। পরিস্থিতি এতটাই ভয়ঙ্কর যে জয়পুর থানার রামপুর খাল এলাকায় খালের জল সেতুর উপর দিয়ে বইছে। জয়পুর থানার পক্ষ থেকে রামপুর খাল এলাকায় ঝিকিরা-সেহাগোড়ী রাস্তার উপর মাটির বস্তা ফেলা হয়েছে। বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে যান চলাচল। নিচু এলাকার মানুষজন অন্যত্র চলে যাচ্ছে। স্যাওড়াবেড়িয়া-উদয়নারায়ণপুর সড়ক জলের তলায়। শুক্রবার রাতে ঘোষপাড়ার কাছে একটি লরি উল্টে যায়। চালকের খোঁজ মিলছে না এমনটাই স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে। বিকেবাটি ও থলিয়া গ্রাম পঞ্চায়েতের ১০টি গ্রাম জলমগ্ন। প্লাবিত ভাটোরা-ঘোড়াবেড়িয়া-চিতনান। ইতিমধ্যে ৩২টি ত্রান শিবির করা হয়েছে। প্রস্তুত রাখা হয়েছে মেডিক্যাল টিম।
আমতা বিধানসভার বিধায়ক সুকান্ত পাল জানান, “ডিভিসির হিসেব অনুযায়ী ২ লক্ষ ৩০হাজার কিউসেক এর বেশি জল ছেড়েছে যার জেরে ইতিমধ্যে উদয়নারায়ণপুর ও আমতা বিধানসভার একাধিক গ্রাম পঞ্চায়েত প্লাবিত হয়েছে। ঘোরাবেড়িয়া-চিতনান-ভাটোরা প্লাবিত হয়েছে। যেভাবে জল আসছে তাতে করে বহু গ্রাম পঞ্চায়েত প্লাবিত হতে পারে এমনটাই আশংকা করা যাচ্ছে। পানীয়জলের পাউচ, খাবার সহ মেডিকেল টিম প্রস্তুত করা হয়েছে। ত্রাণ শিবিরে অনেকে চলে আসছেন। ইতিমধ্যে জেলাশাসক মন্ত্রী বিধায়ক, আধিকারিকদের নিয়ে বৈঠক করেছেন। সমস্ত প্রকার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।”
উদয়নারায়ণপুর ডুবেছে। লক্ষ কিউসেক জল এবার ডোবাচ্ছে আমতার একাধিক পঞ্চায়েত এলাকা। গ্রামের মানুষদের অনুযোগ একরাশ। ঝাড়খণ্ডে বৃষ্টি হয়েছে তার জল ছেড়ে আমাদের ডোবান হবে কেন? রাজ্য এক বলবে ডিভিসি অন্য কথা বলবে আর তার জেরে ঘরদোর ছেড়ে বারেবারে অন্যত্র উঠে যেতে হচ্ছে তো আমাদের। এবার একটা বিহিত করুক সরকার। এইভাবে দুর্ভোগ কত বার সইতে হবে ? কথাগুলো শোনাচ্ছিলেন গ্রামবাসীরা। শনিবার ঘুম থেকে ওঠার পর থেকেই ঘরের সামনে জল। টিউবওয়েল ডুবে গিয়েছে। যেগুলো জেগে জল পার করে আনতে যেতে হচ্ছে পানীয়জল। জমির ধান, পটল সহ বিভিন্ন সবজি ডুবে গিয়েছে। আগের বন্যার কৃষিজ ফসলের ক্ষতির টাকার জন্য আবেদন জমা পড়েছে। এখনও আসেনি টাকা! তারপর আবারও চাষ করে সব ডুবে গেল। চোখের জল আর রেশনের চাল এখন সম্বল। কে শুনবে গ্রামের ডুবে যাওয়া মানুষদের কষ্টের কথাগুলো? উদয়নারায়ণপুর, ঘোষপাড়া, সোনাতলা, আমতা-২ ব্লকের স্যাওড়াবেড়িয়া, নিশ্চিন্দপুর, ভাতেঘড়ি সর্বত্র মানুষের মুখে ঘুরছে এসব প্রশ্ন।