দার্জিলিং আসছেন, ঘুরে যান পাহাড়ি গ্রামে

কল্যাণ অধিকারী, এডিটর রাজন্যা নিউজ

রুমে রাখা টেলিফোনে ম্যানেজারের সঙ্গে কথা শেষ হবার আগেই দরজার বেল বাজা শুরু। দরজা খুলতেই বাইরে কাঞ্চা দাঁড়িয়ে। সঙ্গে আনা দুই পেয়ালা গরম চা। শরীরের উষ্ণতা বাড়িয়ে গাড়ির গেট খুলেই উঠে পড়া। গন্তব্য ছিল পাহাড়ি গ্রাম। অনেকেই আসেন আমরাও এসেছি দার্জিলিং। কিন্তু অফবিট এলাকায় পৌঁছে যাওয়ার ইচ্ছে ছিল সর্বদা। ভোরের ফুটতে থাকা আলোয় গাড়ি ছুটে চলেছে। পাহাড়ের গা বেয়ে একের পর এক চা বাগান পার করে পৌঁছে যাওয়া অচেনা এক গ্রামে। পথে গাড়ির কাঁচ নামিয়ে শরীর ভরিয়েছি মাদো গন্ধে। এ গ্রামের মানুষজন সদাসর্বদা হাসি মুখে আমন্ত্রণ জানায় অতিথিদের। যদিও এখানে এসে কেউ আর রাত কাটায় না। গাড়ি চালক শচিনের পরামর্শেই আসা।

এই গ্রামের নাম চিংরাবতি। অখ্যাত গ্রাম। নেই থাকার ব্যবস্থা। পাহাড়ের গায়ে ধাক্কা খেয়ে দিনভর ফিরে যায় মেঘ। চিংলু, আর্চেন, মুংরি, মাতিলা প্রতিটি নাম বেশ খটমটে। এই সমস্ত নাম না শুনে থাকলে দোষের কিছু নেই! একটা সময় পূর্বপুরুষেরা থাকতেন সিকিমে। মাঝে পাহাড়ে আন্দোলনের সময় ফিরে গিয়েছিল সিকিমে! পরে আবার ফিরে এসে পাহাড়ের কোলে ঘর বানিয়ে থাকতে শুরু করেন। এই কয়দিন ঠান্ডা কনকনে না হলেও আমাদের পড়তে হয়েছিল জ্যাকেট ও সোয়েটার। মুংরির ছেলে চক বাজারে মুটের কাজ করে। এবছর বিয়ে করেছে। কথার মধ্যেই পরিবারের বয়সে ছোট হিংলা এনে দেয় মোমো। স্যুপ দেয়নি। ঝাল চাটনি দিয়েছে তা দিয়েই খাচ্ছিলাম। জিটিএ পানীয়জলের ব্যবস্থা করেছে। পাহাড়ি পিচ ঢালা পথে পায়ে হেঁটেই বাজারে যেতে হয় ওঁদের। বাইক নেই কারোর। বাড়ির সামনে নাম না জানা সব পাহাড়ি ফুলের গাছে রং বেরঙের ফুটেছে ফুল। মাঝেমধ্যেই মেঘ কুয়াশায় মুড়ে যাচ্ছে পাশের পাহাড়। আবার কিছুক্ষণ পরেই পরিস্কার।

আপনি যদি পাহাড়ি গ্রাম ভালোবাসেন তবে মন তৃপ্ত হবেই। সবুজ গাছে ঢাকা পাহাড়। নীল আকাশ। একিসঙ্গে নেপালি খাবারে স্বাদ ভরে যাবে। হাঁটতে পছন্দ লাগলে আপনার আদর্শ জায়গা। এ রাস্তায় খুব বেশি পর্যটক পা মাড়ায় না। টাইগার হিল, রক গার্ডেন সহ পরিচিত স্থানগুলিই পছন্দের। ওঁরাও বোধহয় চায় পর্যটকরা ভিড় জমাক ওঁদের গ্রামে। বহুক্ষণ সময় কাটিয়ে ফিরবার আগে মনখারাপ বইকি! দুর্বল ইন্টারনেট হলেও চাইলে বই নিয়ে চলে আসুন এই গ্রামে। পাহাড় দেখতে দেখতে আর বই পড়ে কাটিয়ে দিন একটা মস্ত দিন। দুপুরের মুরগির মাংস ভাত অথবা মোমো, ম্যাগি খেয়ে নিন। তবে করতে হবে না প্রাপ্তির হিসেব। আপনার হৃদয় ও মন বছরভর প্রচন্ড চাপের মধ্যে থাকলেও এখানে আসলেই ক্লান্তি থেকে এক্কেবারে মুক্তি। তবে হ্যাঁ আসলে কিন্তু একটা বই নিয়ে আসবেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *