বাবার ইমিটিশন কাজে মাসে ইনকাম হাজার পাঁচেক, উচ্চমাধ্যমিকে ৪৭৫ পেয়ে উচ্চ শিক্ষা নিয়ে চিন্তায় সুস্মিতা
কল্যাণ অধিকারী, এডিটর রাজন্যা নিউজ
পরিবারের আয় বলতে বাবার ইমিটিশন কাজ করে মাসে হাজার পাঁচেক টাকা। তাতেই কোন রকমে সংসার চলে তিনজনের পরিবারের। তবে আর্থিক অনটন ওঁর জেদকে আটকে রাখতে পারেনি। উচ্চমাধ্যমিকে ৪৭৫ নম্বর পেয়ে শিক্ষিকা হওয়ার স্বপ্নের পথে এককদম এগোলেন জেবিপুর থানার নিজবালিয়া গ্রামের মেয়ে সুস্মিতা ভট্টাচার্য। মেয়ের ফলাফলে মুখে হাসি ফুটেছে বাবা-মায়ের। একিসঙ্গে মেয়ের উচ্চশিক্ষার পড়াশোনার খরচ কীভাবে সামলাবেন তাই নিয়ে কপালে চিন্তার ভাঁজ বেড়েছে।
পড়ুয়া মেয়েটির ছোট থেকেই পড়াশোনাই ধ্যানজ্ঞান। বড় হতে হতে শিক্ষিকা হওয়ার স্বপ্নের পাশাপাশি মাথাচাড়া দিতে থাকে ছবি আঁকা। দিনের বেশিরভাগ সময় বই মুখে করে বসে থাকে। আর বাকি সময় ক্যানভাসে ছবি আঁকে। কিন্তু করোনা পরিস্থিতি ও লকডাউন সবকিছু এলোমেলো করে দেয়। প্রায় বছর দুয়েক বাবা ঠিকঠাক কাজে বেরতে পারেনি। আর্থিক পরিস্থিতির চাপে পড়াশোনা কোনরকমে চললেও আঁকা শেখা বন্ধ হয়ে যায়। শিক্ষিকা হওয়ার স্বপ্ন দেখলেও কী ভাবে হবে সেই স্বপ্নপূরণ জানতেন না। তবে ওই কঠিন পরিস্থিতিতে নিজেকে তৈরি করার পাঠ অভ্যস্ত করে তুলতে থাকেন সুস্মিতা। ওঁর কথায়, “বাবা কাজে বের হলেই আমাদের সংসার চলে। লকডাউনে পড়াশোনা ছেড়ে দেবার মতন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল। উচ্চমাধ্যমিক পড়াশোনায় স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকারা সাহায্য করেছেন। তবে চিন্তা হচ্ছে পরিবারের আর্থিক অনটন উচ্চ শিক্ষার ক্ষেত্রে বাধা না হয়ে দাঁড়ায়। আমি চাই পাশে এসে দাঁড়াক কোন প্রতিষ্ঠান বা কোন সহৃদয় ব্যক্তি।”
সুস্মিতা গড় বালিয়া আরসি মান্না ইনস্টিটিউশন থেকে উচ্চমাধ্যমিক দিয়েছে। ওঁর সাফল্যে খুশি স্কুলের শিক্ষক থেকে পড়ুয়ারা। রেজাল্ট দেখে আপ্লুত শিক্ষিকারা। বাবা রাজকুমার ভট্টাচার্যর কথায়, “মেয়ে আমাদের লক্ষ্মী। ওকে ভালো শিক্ষক দিলে আরও ভালো রেজাল্ট করতে পারতো। কিন্তু সম্বল বলতে মাসে হাজার পাঁচেক টাকা ইনকাম, তা দিয়ে কী সবটা সম্ভব হয়! মা গৃহবধূ। মেয়ে এত প্রতিকূলতার মধ্যে থেকেও ভালো রেজাল্ট করায় খুশি তিনি। সুস্মিতা উচ্চমাধ্যমিকে বাংলায় পেয়েছে ৯৬, ইংরেজিতে ৯১, ভূগোলে ১০০, ইতিহাসে ৯০, সংস্কৃতে ৯৮। ছোট বেলা থেকেই ওঁর ইচ্ছা শিক্ষিকা হওয়ার। শিক্ষিকা হয়ে গ্রামের শিশুদের পাশে দাঁড়াতে চায়।