২৮টাকা কেনা আলু পুলিশ বলছে ২৫টাকায় বেচতে! কিন্তু কীভাবে প্রশ্ন বিক্রেতাদের
কল্যাণ অধিকারী
¤ ১৪০০ টাকা দিয়ে পঞ্চাশ কেজি আলুর বস্তা কিনেছে। কেজি প্রতি দর পড়ছে আঠাশ টাকা।
¤ ২৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি করলে লাভ তো দূর দামের টাকাও উঠবে না।
¤ গোলা থেকে দাম কম নিলে খোলা বাজারে আলুর দাম কমবে।
¤ ফোঁড়েদের হাত ফেরাফেরি বাড়িয়ে দিচ্ছে আলুর বস্তার দর।
¤ প্রশাসন মজুতদারদের পাকড়াও করলেই সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে!
ঘড়িতে তখন বেলা সাড়ে এগারোটা। আমতা থানার পুলিশের একটি টিম আমতা বাজারে হাজির। শেষের দিকে তখন বাজার। ফাঁকা বাজারে ব্যবসায়ীদের ইতিউতি। চুরি ছিনতাই বা পকেটমারির খবর নেই তবে কি! হন্তদন্ত হয়ে আলুর দোকানের সামনে দুই পুলিশ আধিকারিক সঙ্গে এক সিভিক ভলেন্টিয়ার। আলু কেজি কতো করে, প্রশ্ন শুনে ব্যবসায়ী আমতা আমতা করছেন। ২৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি করতে হবে নইলে কিন্তু বাকিটা বলতে বলতে অন্যের কাছে চলে গেলেন।
১৪০০টাকা দিয়ে পঞ্চাশ কেজি আলুর বস্তা কিনেছে। কেজি প্রতি দর পড়ছে আঠাশ টাকা। ২৫টাকা দামে বিক্রি করলে লাভ তো দূর কেনার টাকাও উঠবে না যে। তাহলে বাকি টাকা কোথা থেকে আসবে। এ প্রশ্ন একাধিক বিক্রেতার। খুচরো বিক্রেতারা জ্যোতি আলু ৩০টাকা দরে এবং চন্দ্রমুখি একপ্রকার ৩২টাকা এবং আর একপ্রকারের ৩৪টাকা দরে বিক্রি করছে। ফোঁড়েদের প্রশ্ন না করে কেন সাধারণ বিক্রেতাদের আলু বিক্রির দাম ধার্য করে দেওয়া হচ্ছে ! গোলা থেকে দাম কম নিলে খোলা বাজারে আলুর দাম কমবে। প্রশাসন বলছে আলুর জোগান রয়েছে। তাহলে কেন বাজারে আলুর দাম আয়ত্তের বাইরে এ প্রশ্ন ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়ের।
নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক এক আলু ব্যবসায়ী জানান, হিমঘর থেকে আলু সরাসরি বাজারে চলে আসে। কিন্তু এখন চলে যাচ্ছে অজানা ঠিকানায়। তারপর হিসাব করা আলুর বস্তা আসছে গোলায়। তা খোলা বাজারে পৌঁছাচ্ছে। বিক্রি হচ্ছে ৩২-৩৫ টাকা কেজি দরে। মাঝের হাত ফেরাফেরি বাড়িয়ে দিচ্ছে আলুর বস্তার দর। পাশাপাশি বাজারে এমনও বলা হচ্ছে আলুর যোগান নেই। এর ফলে একটা কৃত্রিম অভাব তৈরি করার চেষ্টা হচ্ছে। সম্পূর্ণ কাজটা করছে একশ্রেণির অসাধু আলু ব্যবসায়ীরা। প্রশাসনের উচিৎ তাদের খুঁজে বের করে গ্রেফতার করা। খুচরো বিক্রেতারা দু-চার টাকা লাভ রেখে বিক্রি করে। হিমঘর টু গোডাউন তারমধ্যেই ফোঁড়েদের মোটা টাকার হিসাবনিকাশ সম্পূর্ণ হয়ে যাচ্ছে।
সূত্রের খবর, উদয়নারায়ণপুর, হুগলির চাঁপাডাঙা এলাকার হিমঘরে টন টন আলু রাখেন হাওড়ার বিস্তীর্ণ এলাকার কৃষকরা। অনেকক্ষেত্রে দেখা গেছে, সময়ে আলু উঠবার কয়েক সপ্তাহ আগেই দামের জন্য আলু তুলে ফেলেছেন কৃষকরা। ফলন সঠিক মাপের হচ্ছে না। তা বিক্রি করে দেওয়া হয়। তারপর বন্যা বা রোগে আলু নষ্ট হয়ে যাবার সম্ভাবনা থেকে যায়। পেট্রোল-ডিজেলের দাম বেড়ে যাওয়া এবং করোনা আবহে পরিবহণ খরচ অনেকটাই বেড়ে গেছে। তাছাড়া ফোঁড়েদের উৎপাত তো রয়েছেই। যে কারণে আলু নিয়ে সমস্যার তৈরি হচ্ছে। প্রশাসন মজুতদারদের পাকড়াও করলেই সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে ! প্রশাসন বাজারে বাজারে ঘোরাঘুরি করলেই চাপ পড়বে গোডাউনে। দাম অনেকটাই নাগালের মধ্যে চলে আসবে।