সাগরের স্রোতে আদুরে লুকোচুরি

কল্যাণ অধিকারী এডিটর রাজন্যা নিউজ

সাগরে তখন মাঝ রাত। সঙ্গিনীর হাত ধরে বসে চা পান করছেন সত্তোরর্ধ পৌঢ়। বিস্তীর্ণ চরে খবরের সন্ধানে তখন আমরা ক’জন। চায়ের খোঁজ করতে করতে পৌঁছে গিয়েছি। ততক্ষণে কাপ হাতে চায়ের শেষটুকু পান করবার অপেক্ষায় সঙ্গিনী। তারপর!

তার পর, কাপড়ের শেষ খুঁট খুলে, সায়াটাকে বুকটুকু ঢেকে ডুবকি দিতে এগিয়ে চললেন। ঠান্ডা জলে মাথা ডোবালেন। গা কচলে উঠে প্রদীপ ও ধূপ জ্বেলে নিলেন। সঙ্গে নারকেল নিয়ে হাত জড়ো করে শুরু মন্ত্র পাঠ। সাগর পাড়ে তখন চুইয়ে পড়ছে ভক্তি-সংস্কৃতি।

সাগরে ১২ তারিখ প্রথম রাত থেকেই সেইমতন ঠান্ডার দেখা নেই। ভোর-ভোর কম্বলের খোলচে সরিয়ে উঠে পড়া। তার পর বিস্তীর্ণ চরে খাতা-কলম হাতে এদিকওদিক ঘোরাঘুরি। ধীরে ধীরে সাগরতট জুড়ে ছড়িয়ে পড়ে সূর্যের আলো। চারিপাশে তখন ধোঁয়া ওঠা চা সঙ্গে গরমাগরম লিট্টি।আমার রাজ্য পশ্চিমবঙ্গ তখন বিহার-ইউপি, রাজস্থান সকলের সাথে মিলে মিশে একাকার।

সমস্তিপুর জিলা ভাগলপুর, কোরাট, লাখিসরাই, বাগুসরাই একের পর জেলার দেহাতি মানুষদের ভক্তি-সংস্কৃতি সত্যিই অবাক করেছে। আমার দেশজুড়ে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে রয়েছে সহিষ্ণুতা। আর, মানব শরীরের প্রতিটি ভাঁজে লুকিয়ে পুণ্যের মাহাত্ম। যে মেয়ে এক কালে প্রেমের বান ডাকিয়েছে। শরীরের মাদকতায় পুড়িয়েছে প্রেমিকের দেহ-মন। এখন লাঠিতে ভর করে চলা প্রেমিকের হাত ধরে ধার্মিক মত্ততার সন্ধানে পৌঁছেছেন সাগরে।বুড়ো প্রেমিকের হাত ধরেই চার-পাঁচটা ডুবকি। তাতেই চোখ মুখ উজ্জ্বল। টানটান শরীর। অটুট হয়েছে দেহের চেতনা।

সাগরে প্রতি রাতে লুকোচুরি খেলে নেশাতুরো হাওয়া। আদুরে স্রোতের পরশে ভাব জমায়। ফোঁস ফোঁস গর্জনে সৈকত ভরিয়ে তোলে। শিরদাঁড়া জুড়ে বৈশ্বিক উষ্ণতা টেনে ধরে। তারপর…

শাহি স্নান শেষে তৃপ্ত হয়েছে সাগর। বুকের খাঁজে জমেছে পুণ্যতা। আলগা লোমকূপ এখন ভরাট। আগামী এক বছরের জন্য স্বস্তির ছাপ স্পষ্ট।আর ওঁরা! শিরা জেগে ওঠা হাতে শক্ত লাঠি, অন্য হাতে পাঁচ দশকের প্রেমিকা। কপালের শিরা দপদপ করছে। মুখে গঙ্গা মাইয়া কি জয়। ধীরে ধীরে বুচকি মাথায় ফিরে যাচ্ছেন সংসারে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *