অল্প বয়সে নাবালিকাদের বিয়ে নয়, গঙ্গাসাগর মেলায় পাঠ দিচ্ছে মানব পুতুল

কল্যাণ অধিকারী গঙ্গাসাগর থেকে

গঙ্গাসাগর মেলায় মানব পুতুল নাটকের আসরে প্রতিদিন ভিড় করেছেন শতাধিক মানুষ। সোমবার বিকেলেও ব্যতিক্রম হয় নি। পালা শেষ হতেই এগিয়ে এলেন ডায়মন্ডহারবারের বাসিন্দা প্রদ্যুত চক্রবর্তী, খেজুরির শামলী জানা, শীমা মাজিরা। একে একে লোকনাট্যের দলের আবেদনে সাড়া দিলেন তাঁরা। কম বয়সে মেয়ের বিয়ে দেবে না অঙ্গীকার করলেন।

অল্প বয়সে মেয়েদের বিয়ে দেওয়া কতটা ঝুঁকির, বোঝাচ্ছে মানব পুতুল
বীরভূম সংস্কৃতি বাহিনি এ বছর গঙ্গাসাগরে পশ্চিমবঙ্গ শিশু অধিকার সুরক্ষা আয়োগ শিশু বান্ধব কর্নারে এসেছেন। তাঁদের অভিনিত মানব পুতুল নাটকের আসর দেখতে ভিড় করেছেন বিভিন্ন বয়সী মানুষজন। মহিলা অভিনেত্রী রূপা সুদার, সুপর্ণা মিশ্র, অর্পিতা ঘোষ, মৃণ্ময়ী মণ্ডলদের অভিনয় দেখে অনেকেই চোখের জল মুছেছেন।

মহিলা অভিনেত্রী রূপা সুদার জানান, গ্রাম-বাংলায় অভিনয় করে সাড়া মিলছে। গঙ্গাসাগরে এসে যখন এই নাটক করছি তখন মহিলাদের পাশাপাশি অনেক পুরুষ অভিনয় দেখছেন। অভিনয় শেষে এসে বলে যাচ্ছেন ১৮ বছরের নিচে কখনোই মেয়েদের বিয়ে দেবেন না। এটা ভাল লাগছে আমাদের বার্তা নারীপুরুষ উভয়েই নিচ্ছে। আমরা চেষ্টা করব এই নাটক আরো বেশি করে করতে এবং অভিভাবকদের আরো বেশি করে সচেতন করতে।”

বীরভূম লাভপুরের বীরভূম সংস্কৃতি বাহিনীর অন্যতম সদস্যা উজ্জল মুখোপাধ্যায় জানান, “শিশু ও নাবালিকাদের নিয়ে বাবা-মায়েদের কাছে থেকে যায়,অনেকাংশে সমাজ তা চাপিয়ে দেয়। তার থেকে উত্তেরণের বিষয় কি তা মানব পুতুল নাটকের মধ্য দিয়ে দেখানো হল। নারী-নক্ষত্র নামের এই নাটকের ভাবনা বা আঙ্গিক হচ্ছে পুতুল নাচের যে জনপ্রিয় আঙ্গিক সেটা নিয়েই মানব পুতুল নাটক পরিবেশন করা হল।”    

অনেক্ষেত্রে মনে করা হয় মেয়ে মানেই একটা বোঝা। তাকে যত দ্রুত সম্ভব বিয়ে দিয়ে দেওয়া। আবার একটা অংশ আর্থিক টানাপোড়েনের শিকার থেকেই পরিবারের মেয়েদের অল্প বয়সে বিয়ে দিয়ে দিচ্ছেন। সমস্তটাই নাট্য অভিনয়ের মাধ্যমে বোঝাচ্ছে মানব পুতুল। মানুষজন ভিড় করে দেখছেন। মেয়েদের বিয়ে ১৮ না হলে বিয়ে না দেবার অঙ্গীকারবদ্ধ হচ্ছেন কেউ কেউ। এভাবেই গঙ্গাসাগরে আগত মানুষজন বাড়তি সচেতনতা পাচ্ছেন।  

ডায়মন্ডহারবারের বাসিন্দা প্রদ্যুত চক্রবর্তী এদিন স্ত্রী ও কন্যা আহেলিকে নিয়ে নারী-নক্ষত্র নাট্য অভিনয় দেখলেন। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “একজন মেয়ে কখনোই একটা ছেলের থেকে কম নয়। মেয়েরা অনেক বেশি সহনশীল ও শিক্ষিত। এই দেশ গড়ার পিছনে মেয়েদের অগ্রণী ভূমিকা নিতে হবে। একটা জাতি তখনি এগিয়ে যায়, যখন ছেলে আর মেয়েকে সমান ভাবে দেখা হয়।” 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *