বাম-কংগ্রেসে সুর নরম প্রধানমন্ত্রীর কড়া নিশানায় তৃণমূল ও পরিবারবাদ

কল্যাণ অধিকারী

চব্বিশের লোকসভা ভোটে বঙ্গে তৃণমূলের সঙ্গে চোখে চোখ রেখে টক্কর দিতে প্রধানমন্ত্রীর চপার আরামবাগের পর শনিবার পৌঁছায় কৃষ্ণনগর। সভা মঞ্চে থেকে কংগ্রেস-বামেদের নিয়ে সুর নরম থাকলেও কড়া নিশানায় তৃণমূল এবং পরিবারবাদ। বাদ যায়নি সন্দেশখালি। কিন্তু কৃষ্ণনগর কলেজ ময়দানে মহুয়া মৈত্র কে নিয়ে কিছু না বলায় জেলা নেতৃত্ব-সাধারণ কর্মীর এ-ওর মুখ চাওয়া চাওয়ি করতে থাকেন। সিএএ নিয়ে মোদীর বার্তা শুনতে এসে হতাশ হয়ে ফিরলেন মতুয়া সম্প্রদায়ের মানুষজনও।

শনিবার বারবেলা তখনও পড়েনি। কৃষ্ণনগর গভর্মেন্ট কলেজের ছোট মাঠে দেখা গেল বিপুল ভিড়। সকাল থেকে মিছিলের স্রোত ছিল কৃষ্ণনগরের রাস্তায়। বিজেপির জেলা নেতারা মঞ্চের আশেপাশে ঘন ঘন স্মার্ট ফোনে কথা বলে খবর নিতে থাকেন। কৃষ্ণনগরের জেলা স্টেডিয়ামের পাশে গাবতলা মাঠে পরিষেবা প্রদান অনুষ্ঠান সম্পূর্ণ করে, হুড খোলা জিপে চড়ে রোড শো করতে করতে জনসভা মুখি হন নরেন্দ্র মোদি। ওই সময় সভামঞ্চে সুকান্ত-শুভেন্দু একসঙ্গে মহুয়ার কিছু মন্তব্য তুলে ধরে সভায় উপস্থিত জনতার সামনে রাখেন। দুপুর এগারোটা চল্লিশ মিনিট নাগাদ পৌঁছান মোদি। সভাস্থলে মোদি মোদি স্লোগান বিজেপি কর্মী-সমর্থকদের।

কৃষ্ণনগরের মাটি রাজনৈতিক দিক দিয়ে দখল নিতে বাম-তৃণমূল লড়াই বহুদিনের। বহু বছর আগে সাংসদ ছিলেন হরিপদ চট্টোপাধ্যায়। তারপর এই কেন্দ্রে সাংসদ ছিলেন বামেদের রেনু পদ দাস, অজয় মুখোপাধ্যায়, সত্যব্রত মুখোপাধ্যায়, জ্যতির্ময়ী সিকদার। ২০০৯ সালে পর্দার তাপস পাল কৃষ্ণনগরে রাজনীতির জমি এনে দেয় তৃণমূলকে। তারপর থেকে দুবারের সাংসদ ছিলেন তাপস। উনিশে সাংসদ হন মহুয়া মৈত্র। তবে এই কেন্দ্রে আবারও পদ্ম ফোটাতে বিজেপি চেষ্টার কসুর করেনি। ২০২০ সালে প্রাক্তন সিপিএম সাংসদ জ্যোতির্ময়ী শিকদার তৎকালীন বিজেপি রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষের হাত ধরে বিজেপিতে নাম লেখান। তারপর জলঙ্গী দিয়ে বহু জল গড়িয়েছে। বঙ্গ বিজেপিতে এখন সুকান্ত-শুভেন্দু দাপট। ক্রমশ পিছনের সারিতে দিলীপ ঘোষ। প্রধানমন্ত্রীর জনসভায় কার্যত তিনি ব্রাত্য! চব্বিশের লোকসভা ভোটে কৃষ্ণনগর লোকসভা আসন জিততে প্রধানমন্ত্রীকে দিয়ে সভা করালেন বঙ্গ বিজেপি।

কৃষ্ণনগরের তৃণমূলের নেতাদের একাংশের কথায়, প্রধানমন্ত্রী মহুয়া দির কেন্দ্রে সভা করছেন এর অর্থ উনি মহুয়া দিকে ‘গুরুত্বপূর্ণ’ ভাবেন। তাছাড়া উনি জানেন, মানুষের ভোট বিজেপিতে নেই। তাই তিনি নতুন করে বহু প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন। এর আগেও উনি ভোটের সময় বাংলায় এসেছেন। বাংলার মাটিতে দাঁড়িয়ে বহু প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। সেই প্রতিশ্রুতি কতটা রেখেছেন একটু পাতা উল্টে উনি দেখুক! উনি মণিপুর নিয়ে কিছুই বললেন না, হাথরস নিয়ে ওঁনার হৃদয় কাঁদল না, ফসলের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত ও কৃষিঋণ মুকুফের দাবিতে রাজপথে নেমে বারবার আন্দোলন করতে হচ্ছে কৃষকদের। এসব নিয়ে ভাবা দরকার প্রধানমন্ত্রীর।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *