পাহাড়ে এসেছেন মুখ্যমন্ত্রী ঘরে থাকি কেমনে! ঘর ছেড়ে পাহাড়ি পথে মানুষজন আতিথেয়তায় মুগ্ধ মুখ্যমন্ত্রী
কল্যাণ অধিকারী এডিটর রাজন্যা নিউজ
তৃতীয় দিনে পড়ল মুখ্যমন্ত্রীর পাহাড় সফর। ২০১৭ সালের পর পাহাড় এখন অনেকটাই শান্ত। গোর্খালান্ড আন্দোলন ছেড়ে স্বাভাবিক ছন্দে দার্জিলিং-মিরিক সহ গোটা পাহাড়ি উপত্যকা। দেড় বছর পর মুখ্যমন্ত্রী দার্জিলিং এসেছেন। পাহাড়ি পথে তাঁকে একটিবার দেখতে রাস্তায় মানুষের ঢল। মুখ্যমন্ত্রীর জয়ধ্বনি দিচ্ছেন, পাহাড়ি বাদ্যযন্ত্র বাজিয়ে মুখ্যমন্ত্রীকে বরণ করছেন পাহাড়ের মানুষজন। কেউ বলছেন
উত্তরের জমিতে ফুটেছে ঘাসফুল। পাহাড়েও একটু একটু করে জমি শক্ত করেছে, সংগঠনও বিস্তার করেছে তৃণমূল। দেড় বছর পর পাহাড়ে পৌঁছেছেন মুখ্যমন্ত্রী। বাগডোগরা হয়ে পৌঁছান কার্শিয়ং তারপর সন্ধেয় দার্জিলিং। তবে দার্জিলিং পৌঁছাতে মমতার কনভয় বহুবার গতিরুদ্ধ হয়েছে। জনতার উচ্ছ্বাস দেখে হাসি ফুটেছে স্থানীয় নেতৃত্বের। সাড়া দিয়েছেন মমতাও। কখনো হাত নেড়ে, কখনো গাড়ি থেকে নেমে জনসংযোগ করেছেন। দার্জিলিঙে সকাল-সকাল বেরিয়ে বিভিন্ন জায়গায় জনসংযোগ করেছেন। পথচলতি মানুষের সঙ্গে কথা বলেছেন। স্থানীয় মানুষদের সঙ্গে কথা বলে রাস্তা-জল এবং এলাকার উন্নয়নের কাজ কতটা হয়েছে তা জানার চেষ্টা করেছেন।
পাহাড়ে জিটিএ এবং ১৫টি উন্নয়ন বোর্ড তৈরি করে পাহাড়কে সাজানোর কাজ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। পাহাড় সফরের দ্বিতীয় দিনে রিচমন্ড হিলে লেপচা, তামাং সহ সমস্ত উন্নয়ন বোর্ডের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। দার্জিলিংবাসীর সামগ্রিক উন্নয়নে তিনি যে লাগাতার কাজ করে যাবেন তাও প্রতিনিধিদের বুঝিয়ে দিয়েছেন। উন্নয়নমূলক প্রকল্পের অগ্রগতির উপর নজরদারির জন্য ‘মনিটরিং সেল’ তৈরি করার সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছেন তিনি। এই বৈঠকে ছিলেন জিটিএ, দার্জিলিং ও কালিম্পং জেলা প্রশাসন। পাহড়ের যুবকদের কাজের অগ্রাধিকার দেবার বিষয়টি তাঁর নজরে রয়েছে। বৈঠকে তিনি বলেন, পাহাড়ে অনেক প্রতিভাবান ছেলেমেয়ে রয়েছে। ওঁদের কর্মসংস্থানের লক্ষ্য়ে এবার সরকারি পোর্টাল চালু হবে। স্কিল ডেভেলপমেন্টের জন্য সরকারি তরফে চারটি সেন্টারও চালু করা হবে। এমনটা ঘোষণা পাহাড়ের যুব সম্প্রদায়কে অনেকটাই প্রভাবিত করবে মনে করছে পাহাড়ের রাজনৈতিক নেতাদের একাংশ।
মুখ্যমন্ত্রীর হাত ধরে সেজে উঠেছে দার্জিলিং-কালিম্পং মিরিক। বছরের প্রতিটি দিন পাহাড়ে পর্যটকদের ভিড়। সোমবার থেকে পাহাড় সফরে রয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। বুধবার তৃতীয় দিন সকালে বহু মানুষের সঙ্গে জনসংযোগ করেন মুখ্যমন্ত্রী। তাঁকে দেখতে পেয়ে ভিড় জমে যায়। শিশুদের আদর করতেও দেখা যায়। এরপর ম্যাল রোডে পৌঁছানোর আগেই পৌঁছে যান দার্জিলিঙের পদ্মজা নায়ডু জ়ুলজিক্যাল পার্কে। সেখানে দুই তুষারচিতা শাবকের নামকরণও করলেন। একটির নাম ‘ডার্লিং’, অন্যটির নাম রাখলেন ‘চার্মিং’। চিড়িয়াখানায় তুষারচিতার নাম মুখমন্ত্রী রাখায় খুশি পার্ক কর্তৃপক্ষ। বিকেলে দার্জিলিং-এ সরস মেলার উদ্বোধন করেন মুখ্যমন্ত্রী। তাঁকে পেয়ে আপ্লুত পাহাড়ি শিল্পীরা। পাহাড়িয়া ছন্দে তাল মেলালেন তিনি। এরপর বলেন, শুধু পর্যটনের জন্যই কেন পাহাড়ের নাম হবে, কেন নিজেদের মেধার প্রতি আরও যত্নবান হবেন না। হতাশ হবেন না। অলওয়েজ বি এনার্জেটিক। ইয়ওরস বিউটি হ্যাভ ইওর সেলফ। তিনি আরও বলেন আমরা পাহাড়ে শান্তি চাই, অশান্তি বরখাস্ত নয়।
মুখ্যমন্ত্রীর এবারের পাহাড় সফর পাহাড়ের তৃণমূলের জন্য অনেকটা অক্সিজেন এনে দিয়েছে। তৃণমূলের একাংশের কথায়, রাজ্যের সাম্প্রতিক পরিস্থিতি কিছুটা হলেও ব্যাকফুটে ঠেলেছে রাজ্যের শাসক দলকে। তারপরে ডিভিসির ছাড়া জলে বন্যা ও পুজোর মরশুমে জনসংযোগ কিছুটা হলেও ক্ষতে মলমের কাজ করেছে। যদিও পাহাড়ের মানুষ এসব নিয়ে মনোনিবেশ করেন না। ওঁদের কাছে মূল সমস্যা অনুন্নয়ন। রাজ্যে তৃণমূল ক্ষমতায় আসার পর পাহাড়ে উন্নয়নে জোর দিয়েছে। এই উন্নয়নের কাজ করেই পাহাড়ের মানুষের মুখে হাসি ফুটিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। পর্যটকের ভিড়ে ঠাসা দার্জিলিং জুড়ে এখন চর্চার কেন্দ্রবিন্দুতে বাংলার দিদি। তাঁকে একটিবার দেখতে বিভিন্ন জায়গায় উপচে পড়া ভিড়। যা অনীত থাপার মতো জিটিএ প্রধানের মুখেও গালভরা হাসি ফুটিয়েছে।