ভোট চোরেদের সুরক্ষা দিচ্ছেন জ্ঞানেশ কুমার:রাহুল
রাজন্যা নিউজ ব্যুরো
গণতন্ত্রের হত্যাকারীদের সুরক্ষা দিচ্ছেন দেশের মুখ্য নির্বাচন কমিশনার! বৃহস্পতিবার এমনই বিস্ফোরক অভিযোগ করলেন লোকসভার বিরোধী দলনেতা রাহুল গান্ধি। নিজের অবস্থান থেকে পিছু হটার প্রশ্নই নেই। উল্টে যত দিন যাচ্ছে ততই ‘ভোট চুরি’ ইস্যুতে সপাটে ব্যাট চালাচ্ছেন রাহুল। তিনি যে এভাবেই কমিশনকে এই ইস্যুতে নিশানা করে যাবেন, তা ফের একবার বুঝিয়ে দিলেন রাহুল। এদিন দিল্লিতে সাংবাদিক সম্মেলনে ‘ভোট চুরি’ ইস্যুতে তীব্র আক্রমণ করলেন কমিশন ও তাদের সিস্টেমকে। এদিন রাহুল বলেন, ‘অলন্দ কর্ণাটকের একটি বিধানসভা কেন্দ্র। কেউ কেউ ৬০১৮টি ভোট মুছে ফেলার চেষ্টা করেছেন। আমরা জানি না ২০২৩ সালের বিধানসভা নির্বাচনে ঠিক কত জনের নাম বাদ গিয়েছে। তবে সংখ্যাটি অবশ্যই ৬০১৮-এর থেকে বেশি হবে।’ সাংবাদিক সম্মেলনে জায়ান্ট স্ক্রিনে কয়েকটি ফোন নম্বর তুলে ধরে রাহুল দাবি করেন, বিভিন্ন রাজ্য থেকে ফর্ম পূরণ করে ভোটারদের নাম বাদ দেওয়া হয়েছে। ওই ফোন নম্বরগুলি থেকে কীভাবে ওয়ান টাইম পাসওয়ার্ড বা ওটিপি দেওয়া সম্ভব হল, সেই প্রশ্ন তোলেন তিনি। এরপরই সুর চড়িয়ে বলেন, ‘দেশে স্বচ্ছ এবং অবাধ নির্বাচনের বিষয়টি সুনিশ্চিত করার বদলে পক্ষপাতমূলক আচরণ করছে নির্বাচন কমিশন। যাঁরা দেশের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে খর্ব করার চেষ্টা করছেন, তাঁদের রক্ষা করার চেষ্টা করা হচ্ছে। জ্ঞানেশ কুমারজি ভোট চুরিকে রক্ষা করছেন। এটা নিয়ে এখন আর কোনও সংশয় নেই।’ রাহুলের অভিযোগ বেছে বেছে কংগ্রেস সমর্থকদের নাম বাদ দেওয়া হয়েছে বা বাদ দেওয়ার চেষ্টা চলেছে। দলিত, ওবিসি, সংখ্যালঘু-সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে কংগ্রেস তথা বিরোধী ভোটারদের নাম বাদ দেওয়ার চক্রান্ত করা হচ্ছে কমিশনের মদতে, এমনই চাঞ্চল্যকর অভিযোগ করেছেন রাহুল। তিনি বলেন, ‘পরিকল্পনামাফিক নির্দিষ্ট কিছু কেন্দ্রে বৈধ ভোটারদের নাম বাদ দেওয়া হচ্ছে। কোথাও আবার অবৈধভাবে ভোটারদের নাম ঢোকানো হচ্ছে। যে সমস্ত বুথে কংগ্রেস শক্তিশালী সেখানেই পরিকল্পনা করে ভোটারদের নাম বাদ দেওয়া হচ্ছে।’ শুধু কর্ণাটকের অলন্দ নয়, মহারাষ্ট্রের রাজুরা বিধানসভা কেন্দ্রের ভোটার তালিকা তুলে ধরে রাহুলের দাবি, সেখানে অনলাইনে ৬৮৫০ জন ভোটারের নাম অবৈধভাবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। তিনি অভিযোগ করে আরও বলেন, ‘ভোটারদের নাম দেওয়ার বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ করতে গিয়ে নির্বাচন কমিশনকে ১৮টি চিঠি দিয়েছিল কর্ণাটকের সিআইডি। চিঠিতে অভিযুক্তদের সফটওয়্যার, ফোন নম্বরের আইপি অ্যাড্রেস এবং ওটিপির বিবরণ চাওয়া হয়েছিল। কিন্তু কমিশন ওই বিবরণ দিচ্ছে না। তারা নিশ্চুপ হয়ে রয়েছে। কারণ এই বিবরণ সামনে এলে কান টানলে মাথাও চলে আসবে।’
রাহুল বলেন, ‘কর্ণাটকের অলন্দ বিধানসভা কেন্দ্রে কংগ্রেসের এক বুথস্তরের কর্মী লক্ষ্য করেন যে তাঁর কাকার নাম মুছে ফেলা হয়েছে। তদন্ত করে দেখা যায় নাম মোছা হয়েছে একজন প্রতিবেশীর মাধ্যমে। তবে ওই প্রতিবেশী এবং ভোটার দু’জনেই জানতেন না যে নাম মুছে ফেলা হয়েছে। নাম ডিলিট করার কাজটি কোনও ব্যক্তি নয়, সফটওয়্যার ব্যবহার করে স্বয়ংক্রিয়ভাবে করা হয়েছিল।’ সাংবাদিক সম্মেলনে রাহুল একাধিক ভোটারকে এদিন ডেকে নেন। এক ভোটার বলেন, ‘মোট বারোটি নাম মুছে ফেলা হয়েছে আমার ওখানে। আমি নাম মুছে ফেলার জন্য কাউকে ফোন করিনি বা কোনও বার্তাও পাঠাইনি।’ রাহুল অভিযোগ করে বলেন, ‘ওই বিধানসভা কেন্দ্রে নাগরাজ নামে এক ব্যক্তির জন্য দুটি ফর্ম পূরণ করা হয়েছে মাত্র ৩৬ সেকেন্ডের মধ্যে। অন্য রাজ্য থেকে কেউ ফর্ম পূরণের জন্য একটি ফোন করেন। যা ব্যবহার করে ফর্মগুলি পূরণ করা হয়। আমি এমন কিছু বলব না যা সত্য নয়। আমি আমার দেশকে ভালোবাসি, আমাদের সংবিধানকে ভালোবাসি এবং গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে ভালোবাসি। আমি সেই প্রক্রিয়াটিকে রক্ষা করছি।’ রাহুলের দাবি তাঁর কাছে প্রতিটি অভিযোগের প্রেক্ষিতে একশো শতাংশ প্রমাণ রয়েছে। কিছুদিন আগে সাংবাদিক সম্মেলনে রাহুল বলেছিলেন ‘ভোট চুরি’ ইস্যুতে তিনি শীঘ্রই ‘হাইড্রোজেন বোমা’ ফাটাবেন। তবে কি বৃহস্পতিবার যে অভিযোগ করলেন, ‘হাইড্রোজেন বোমা’ বলতে সেটাকেই বোঝাতে চেয়েছিলেন তিনি? জবাবে রাহুল বলছেন না। অর্থাৎ আরও মারাত্মক অভিযোগ কমিশনের বিরুদ্ধে তিনি আনতে চলেছেন বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন রাহুল। রাহুলের দাবি শুধু কর্ণাটক বা মহারাষ্ট্র নয়, একই কাজ করা হয়েছে উত্তরপ্রদেশ ও হরিয়ানার বিভিন্ন বুথে। যেখানে কংগ্রেস তথা বিরোধীরা শক্তিশালী ছিল সেখানেই এভাবে ‘ভোট চুরি’র চেষ্টা হয়েছে। রাহুল আরও বলেন, ‘এই বিষয়টি প্রকাশ করার সঙ্গে সঙ্গে গোটা দেশ জানতে পারবে যে নির্বাচন কমিশন বিজেপির জন্য ভোট চুরি করছে। মধ্যপ্রদেশ ও মহারাষ্ট্র নির্বাচনের সময়েই আমাদের সন্দেহ আরও বাড়ে।’
যদিও রাহুলের সাংবাদিক বৈঠকের পর কমিশন জানায়, ২০২৩ সালে কর্ণাটক বিধানসভা নির্বাচনে অলন্দ বিধানসভা কেন্দ্রে ভোটারদের নাম বাদ দেওয়ার চেষ্টা হয়েছিল। তখন এফআইআর দায়ের করে তার তদন্তে নেমেছিল কমিশন। কিন্তু কমিশন গোটা বিষয়টি নিয়ে নিশ্চুপ ছিল বলে যে অভিযোগ করেছেন রাহুল, কর্ণাটক সিআইডির সঙ্গে কমিশন যেভাবে অসহযোগিতা করেছিল বলে অভিযোগ করেছেন রাহুল, তা নিয়ে কিন্তু নীরব রয়েছে জাতীয় নির্বাচন কমিশন। একই ভাবে এই সব অভিযোগের ভিত্তিতে বিজেপি রাহুলকে নিশানা করেছে। বিষয়টি নিয়ে রাহুল কেন আদালতে যাচ্ছেন না, সে প্রসঙ্গ তুলেছে তারা।