পুজোয় শব্দ তান্ডব! বিপন্ন পশু-পাখিদের ত্রাহি রব
দীপিকা অধিকারী, রাজন্য নিউজ
দুয়ারে বাঙালির বড় উৎসব দুর্গাপুজো। চারিদিকে সেজে উঠছে সুউচ্চ মণ্ডপ, লাগানো হচ্ছে চোখ ধাঁধাঁনো আলোকসজ্জা, মাইক-বক্স। পুজোর আনন্দে মেতে উঠবে রাজ্যের মানুষ। কিন্তু এমন একটি সময়ে শধের তাণ্ডবে একপ্রকার কুঁকড়ে যায় ওরা। দিনের বেলায় এদিকওদিক উড়ে বেড়ালেও রাতে বাসায় যে ফিরতেই হয়। রাত জেগে কাতর আকুতি পৌঁছায় না মানুষের কানে। বহু পাখিদের মৃত্যু পর্যন্ত ঘটে।
জেলার পক্ষীপ্রেমীদের কথায়, গ্রামবাংলায় শালিক, বাবুই, ঘুঘু, কোকিল, দোয়েল থেকে কাঠঠোকরা পাখিগুলি গাছের ডালে বাসা বাঁধে। দিনের আলোয় অন্যত্র চলে গেলেও, সন্ধে নামলে রাস্তার ধারে বড় গাছের পাতার ফাঁকে বাসায় ফিরে আসে। সাম্প্রতিক সময় বড় রাস্তার মোড়ে, বাজারে, খেলার মাঠে বসানো হয়েছে উঁচু বাতিস্তম্ভ। যা উচ্চতায় গাছের মাথার সমান। তীব্র আলোয় পাখিরা বাধ্য হচ্ছে বাসা ছেড়ে অন্যত্র চলে যেতে। স্থানীয় মানুষের অভিযোগ, এক একটা বাতিস্তম্ভে পাঁচ-ছটা করে উচ্চক্ষমতা সম্পন্ন আলো লাগানো হয়েছে। বেশি ঔজ্জ্বল্য আলোয় মানুষের সুবিধা হয়েছে। কিন্তু বাস্তু ও জীবন সঙ্কটে গ্রাম-বাংলার পাখিকুল। তার উপর সামনে শারদীয়া উৎসব। আলোর বহর ও শধের দাপট বাড়বে। এইভাবে চলতে থাকলে ভোরের বেলায় পাখিদের ডাক শোনা ভুলতে হবে।
কলেজ পড়ুয়াদের কথায়, শধ তান্ডবে পাখিদের সমস্যা প্রচণ্ড হয়। ওদের ছোট হৃদপিন্ড ফেটে যেতে পারে। এমনিতেই মোবাইলের টাওয়ারের কারণে পাখিদের জীবন দুর্বিষহ হতে বসেছে। পুজো উদ্যোক্তাদের শধ মাত্রা বিষয় মাথায় রাখা প্রয়োজন। ছোটবেলায় পাখিদের কলকাকলি শুনে ঘুম ভাঙ্গতো। সময় ও আধুনিকতার জেরে বিভিন্ন পাখি এলাকার পথ পরিবর্তন করেছে। মাঠ ও খড়িবন জুড়ে চড়ুই, দোয়েলের দেখা মিলত। কবেই এই শহর ও গ্রাম থেকে চড়ুই ও দোয়েল প্রায় অদৃশ্য। টিয়া-ময়না-চন্দনা ধীরে ধীরে মানুষের খামখেয়ালি জীবন জাপনের শিকার হয়ে ও কীটনাশক ব্যবহারের জেরে এলাকা ছাড়া। জাতীয় একটি চ্যানেলের তথ্য বলছে, প্রতিবছর দেশে পরিযায়ী পাখির সংখ্যা কমছে। তার কারণ শধ তান্ডব ও আলোর ব্যবহার। কমছে শান্ত এলাকার সংখ্যা। তারসঙ্গে যুক্ত হয়েছে অবাধে গাছ কাটা। একটু সদয় হলে রক্ষা পাবে জীবকূল।