মণীশ শুক্লকে খুনের ঘটনায় জয়পুরে সভা থেকে সিবিআই তদন্ত চাইলেন দিলীপ ঘোষ

কল্যাণ অধিকারী

মণীশ শুক্লকে থানার কাছে প্রকাশ্যে স্টেনগান দিয়ে গুলি করা হল। সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দিন। তৃণমূলের সমস্তটা সামনে চলে আসবে।
মানুষ খুন হলে কেস নেই, আন্দোলন করলে কেস দেওয়া হচ্ছে, অভিযোগ বিজেপি রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষের।
মোদিজি এক হাজার কোটি টাকা দিয়েছেন। সেই টাকা মুখ্যমন্ত্রী কি করলেন তা কেউ জানেনা।
আমফানে টাকা পেয়েছে বীরভূম। আপনারাই বলুন বীরভূমে কি আমফান হয়েছে।
উনি কৃষি আইনের বিরোধিতা করে ফড়েদের নিয়ে রাস্তায় মিছিল করছেন। যারা ওঁকে ভোটে জেতাবে।

ব্যারাকপুরের বিজেপি নেতা মণীশ শুক্লকে গুলি করে খুন করার ঘটনায় সিবিআই তদন্তের দাবি জানালেন বিজেপি রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ। সোমবার আমতা-২ ব্লকের জয়পুরে প্রকাশ্য সভায় এসে ঘটনায় তৃণমূলের দিকে আঙুল তুললেন তিনি।

আমফান দুর্নীতির বিরুদ্ধে বিজেপির ডাকে ‘বিডিও চলুন’ ডাক দিয়েছিল আমতা-২ ব্লক বিজেপি কার্যকর্তারা। প্রধান বক্তা দিলীপ ঘোষ। এদিন মেদিনীপুর থেকে সরাসরি আসেন জয়পুরে। রবিবার তমলুকে বিজেপি রাজ্য সভাপতিকে কালো পতাকা দেখিয়েছিল তৃণমূল! তবে এদিন তৃণমূলের বাধার মুখে পড়তে হয়নি। মঞ্চে ওঠার আগে প্রায় ১১ কিমি বাইক র‍্যালি করেন দিলীপ ঘোষ! হুডখোলা গাড়িতে পাশে প্রাক্তন গ্রামীণ সভাপতি অনুপম মল্লিককে বসিয়ে আসলেন। সামনে পিছনে তখন শতাধিক বাইক। রাজ্য সভাপতি যখন মঞ্চের কাছাকাছি পৌঁছলেন তখন বক্তব্য রাখছেন হাওড়া গ্রামীণ বিজেপি সভাপতি শিব শংকর বেজ। মঞ্চের চারিদিকে ঠাসা ভিড় থেকে চিৎকার ওঠে ‘দিলীপ ঘোষ জিন্দাবাদ’। মঞ্চ’র পাশ থেকে এক যুব নেতা বলে ওঠেন ‘একুশের মুখ্যমন্ত্রী দিলীপ ঘোষ জিন্দাবাদ’। ওই যুব নেতার দিকে হাসিমুখে তাকিয়ে মঞ্চে ওঠেন তিনি। কিছু সময় পরে আসেন বিজেপি নেতা জয় ব্যানার্জি। মাইক হাতে ‘গুরুদেব’ বলে রাজ্য সভাপতিকে সম্বোধন করেন। জয়পুরে সভামঞ্চে এসে ‘একুশের মুখ্যমন্ত্রী দিলীপ ঘোষ জিন্দাবাদ’ আওয়াজ রাজ্য রাজনীতিতে অন্যমাত্রা এনে দিচ্ছে।

ভাষণ শুরু করেন তৃণমূলের আমফান দুর্নীতি নিয়ে। কখনও উপস্থিত জনতাকে জিজ্ঞাসা করেন, কখনও সরাসরি আঙুল তোলেন তৃণমূলকে। দিলীপ ঘোষ বলেন, “আমফানের পর দিদিমণি(মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়) ঘোষণা করলেন যার-যার ক্ষতি হয়েছেন তাঁকে ২০হাজার টাকা করে দেওয়া হবে। এরপরেই জনতাকে প্রশ্ন করেন আপনারা পেয়েছেন ? সমস্বরে জনতা বলে ওঠে ‘না’। তারপর দিলীপ ঘোষ বলেন, আমফানে ক্ষতি হয়েছে হাওড়া, মেদিনীপুর, উত্তর ও দক্ষিণ ২৪পরগনা, নদীয়া মুর্শিদাবাদ জেলায়। কিন্তু টাকা পেয়েছে বীরভূম। আপনারাই বলুন বীরভূমে কি আমফান হয়েছে ? সমস্ত টাকা গেছে, পঞ্চায়েত, পঞ্চায়েত সমিতি, প্রধান, জেলা সভাপতি, তাঁর পরিবারের লোকজন। সব ত্রিপল রয়েছে পঞ্চায়েত, পঞ্চায়েত সমিতি, প্রধান, জেলা সভাপতিদের খাটের তলায়। আবাস যোজনার টাকা, শৌচালয়ের টাকা, আমফানের ক্ষতিপূরণের টাকা কোথায় গেল তার হিসাব চাইতে এখানে এসেছি। আমফানের পর মোদিজি এসে হেলিকপ্টারে মুখ্যমন্ত্রীকে নিয়ে ঘটনাস্থলে দেখে এসেছেন। ছিলেন রাজ্যপালও। বসিরহাটে একটি স্কুলে অফিসারদের সঙ্গে কথা বলেছিলেন মোদিজি। তারপর মুখ্যমন্ত্রীকে এক হাজার কোটি টাকা দিয়েছেন। সেই টাকা কি করলেন মুখ্যমন্ত্রী তা কেউ জানেনা।

কৃষি আইন নিয়ে তিনি বলেন, “আলুর দাম কৃষকেরা পাচ্ছেন না। সব টাকা কালীঘাটে যাচ্ছে। যে চাষি আলু উৎপন্ন করেছে তিনি টাকা পাননি সব টাকা পেয়েছে দিদির ভাইয়েরা। কৃষকরা এতদিন শোষিত হয়েছেন। অত্যাচারিত হয়েছেন। অপমানিত হয়েছেন। তাঁদের দালালদের হাত থেকে রক্ষা করার জন্য প্রধানমন্ত্রী আইন এনেছেন। আর দিদিমণি বিরোধিতা করছেন। দিদিমণি ফড়েদের নিয়ে কলকাতায় মিছিল করছেন।” এরপরেই তিনি বলেন, “ব্যারাকপুর এলাকায় থানার কাছে প্রকাশ্য রাস্তায় মণীশ শুক্লকে স্টেনগান দিয়ে গুলি করে খুন করা হল। মনে রাখবেন এই চক্রান্তের মধ্যে আপনার সরকার, আপনার পুলিশ আছে। এই ঘটনায় সিবিআই তদন্ত হলে তৃণমূলের সমস্তটা সামনে চলে আসবে। পাশের এলাকা খানাকুলে জাতীয় পতাকা তুলতে গিয়ে বিজেপি কর্মীকে খুন করা হল। মানুষ খুন হলে কেস নেই, আন্দোলন করলে কেস দেওয়া হচ্ছে। বিজেপির ১২০ জন কর্মীকে হত্যা করা হয়েছে। দরকার হলে আরও ১২০ জন প্রাণ দেবে। এই সরকারকে বঙ্গোপসাগরে ফেলব।”

উত্তরপ্রদেশে হাথরস কান্ডে মুখ্যমন্ত্রী’র প্রতিবাদ করা নিয়ে দিলীপ ঘোষ বলেন, উনি উত্তরপ্রদেশ নিয়ে কথা বলছেন। কিন্তু উনি কি জানেন উত্তরপ্রদেশে ডিএম, ডিএসপি, আইসিকে সাসপেন্ড করেছে ওখানের সরকার। উনি এখানে ফড়েদের নিয়ে রাস্তায় মিছিল করছেন। যারা ওঁকে ভোটে জেতাবে। ক্ষমতা থাকলে দিদিমণি সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দিন। তৃণমূলের সমস্তটা সামনে চলে আসবে। এভাবেই জয়পুরে প্রায় বাইশ মিনিট চাঁচাছোলা ভাষায় আক্রমণ শানালেন দিলীপ ঘোষ। বক্তব্য শেষ করে কাকদ্বীপের উদ্দেশ্যে রওনা দেন তিনি।

মনীশ শুক্লর হত্যা কান্ড নিয়ে রাজ্যের মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম সাংবাদিকদের জানিয়েছেন,” মণীশ তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যেতে চাননি, বাইরে থেকে দুষ্কৃতীদের এনে চাপ দিয়ে তাঁকে বিজেপিতে যোগ দিতে বাধ্য করা হয়। সম্প্রতি মণীশ আবার তৃণমূলে ফেরার জন্য বার্তা পাঠাচ্ছিলেন এবং তখনই তাঁকে খুন হতে হল। তবে আমি আশ্চর্য হয়ে যাচ্ছি, সব ব্যাপারে কেন তৃণমূলের নাম জড়ানো হচ্ছে! আমরা গাঁধীবাদী দল। আমরা হিংসায়, দাঙ্গায় বিশ্বাস করি না।’’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *