পুজোর আগে মঙ্গলবার মঙ্গলা হাট বন্ধ থাকায় ফিরে গেলেন দূরদূরান্তের ক্রেতা-বিক্রেতা
কল্যাণ অধিকারী
বঙ্কিম সেতুর উপর দুই মহিলা বাসের জন্য দাঁড়িয়ে। দুর্গাপুজোর আগে বেচাকেনার কথা ভেবে মঙ্গলা হাটে এসেছিলেন। অল্প দামে জামা-কাপড় কিনে নিয়ে গিয়ে বাদুড়িয়া এলাকায় নিজের পাতা দোকানে বিক্রি করবেন। কিন্তু এদিন বসেনি মঙ্গলা হাট। বেজার মুখে দাঁড়িয়ে থেকেছেন, আর বিড়বিড় করেছেন। তারপর ফিরে যেতে হাওড়া বাসস্ট্যান্ডের দিকে রওনা দিলেন। তখন ফ্লাইওভারের নিচে সিটুর সমর্থকরা সোমবার ও মঙ্গলবার হাট খোলার দাবিতে মাইকে গলা ফাটাচ্ছে।
করোনা আবহে দীর্ঘ লকডাউন শেষে প্রায় ৬ মাস পর মঙ্গলা হাট খুলেছে। কিন্তু মঙ্গলবার নয়। বদলে এশিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তর হাট এখন রবিবার বসছে। কিন্তু দূরদূরান্ত থেকে আসা মানুষজন যারা অল্প দামে জিনিস কিনে লাভের মুখ দেখে তাঁরা এদিন হাটে এসে হতাশ হয়ে ফিরে যাচ্ছেন। মঙ্গলবার বেলায় দেখা গেল হাট চত্বরে নদীয়া থেকে এসেছেন বছর পঞ্চান্নর ব্যবসায়ী নুরুল সেখ। দীর্ঘ ব্যবসায়ী জীবনে পঁচিশ বছর হাটে আসছেন। ঈদ, পুজো প্রতিটি অনুষ্ঠানে এখানের কাপড়জামা কিনে নিয়ে গিয়ে বিক্রি করে সংসার চালিয়েছেন। কিন্তু মার্চ মাস থেকে লকডাউন পর্ব শুরু হতেই সব এলোমেলো হয়ে গেছে। নুরুল সেখ জানান, আনলক পর্ব থেকেই ধীরেধীরে কারবার শুরু করেছি। মঙ্গলা হাট খোলার খবর পেয়ে এসেছি। ঠিক ছিল পুজোর আগে সস্থায় বস্ত্র কিনে নিয়ে গিয়ে ব্যবসা করব। কিন্তু এখানে এসে দেখি আজ মঙ্গলবার হাট বসেনি। ময়দান থেকে কিছু বস্ত্র কিনব কিন্তু দামে পোষাচ্ছে না।
ব্যবসায়ীদের লিখিত আর্জি মেনে প্রশাসন সিদ্ধান্ত নিয়ে হাট খুললেও মঙ্গলবার মঙ্গলা হাট না বসায় সমস্যায় ক্রেতারা। এদিন দেখা গেলে ক্রেতা আছে, বিক্রেতা আছে। কিন্তু মালপত্র নিয়ে বসেনি কেউ। ফলে চাহিদা থাকলেও বিক্রি নেই। দূরে ফ্লাইওভারের নিচে মঞ্চ বেঁধে সিটু নেতারা বক্তব্য দিচ্ছে। অবিলম্বে সোমবার ও মঙ্গলবার মঙ্গলা হাট খোলা রাখার দাবি জানাচ্ছে। দূরদূরান্ত থেকে মহিলারা এসেছেন পরিবারের জন্য কিনতে। দোকান না খোলায় সাধ্যের মধ্যে কিনতে ময়দান চত্বরে বাঁধা দোকানের দিকে যাচ্ছেন। অনিতা রায়, বিনু মণ্ডল, সুষমা মণ্ডল প্রত্যেকে হাট খোলা থাকবে ভেবে এসেছেন মেচেদা থেকে। কিন্তু বাস থেকে নামতেই হতাশ। দোকান বসেনি। পুজোর আগে শতাব্দীপ্রাচীন মঙ্গলাহাট নিদিষ্ট দিনে চালু না থাকায় মাথায় হাত ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের। তাঁদের অভিযোগ, এর আগে নোট বাতিলের ধাক্কা পড়েছিল হাটে বেচাকেনায়। সেই ধাক্কা সামলে ওঠা গেলেও করোনা পর্বে বড়সড় ধাক্কা এসেছে ব্যবসায়ীদের কাছে। যদিওবা হাট খুলল তা আর আগের মতো নয়। শুধুমাত্র রবিবার। ফুটে বসে বিক্রি করাদের ছাড় দেওয়া হয়নি। এমনটার জন্য চরম আর্থিক সমস্যায় পড়েছে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা।
প্রশাসনের যুক্তি, মঙ্গলা হাট কাজের দিন অর্থাৎ মঙ্গলবার হাট বসলে সেখানে ভিড়ের বহর বাড়বে। সেক্ষত্রে সামাজিক দূরত্ব বিনষ্ট হবার আশঙ্কা থেকে যাবে। কোভিড বিধিনিষেধ মেনে পুজোর আগেই হাট চালু হয়েছে। তা সকলে মিলে সিদ্ধান্ত নিয়েই। কোনভাবে করোনা আটকাতে হবে। পুজোর জন্য রবিবারের পাশাপাশি শনিবার হাট বসছে। তবে সময়সীমা বিকেল ৪টে থেকে রাত ১২টা।
মঙ্গলা হাট নিয়ে রাজনৈতিক নেতাদের দর কষাকষি চরমে। প্রায় নিয়ম করে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করছে রাজনৈতিক সংগঠনের ছত্রছায়ায় থাকা নেতারা। এদিন সিটু নেতারা মঞ্চ বেঁধে সোমবার ও মঙ্গলবার হাট খোলার জোরাল দাবি জানিয়েছে। তৃণমূলের একটি অংশ চাইছে হাট খোলা হোক মঙ্গলবার। প্রশাসন পঞ্চমী মঙ্গলবার দিনটা হাট খোলার আবেদন দিক। সেক্ষেত্রে সাধারণ মানুষ কোভিড পরিস্থিতিতেও পুজো দেখার জন্য নিজেদের মতো করে সস্থায় কিছু কিনতে পারবে। অন্যদিকে তাঁতি থেকে মহাজন প্রত্যেকের একটাই মত, ‘যেদিন খোলা হোক হাট, তা যেন সকাল থেকে খোলা হয়’।