মাধ্যমিকে দশম দুই ছাত্রী সহ ৯৫ শতাংশ পেয়েছে ৭৬ জন চোখ ধাঁধিয়ে দেওয়া সাফল্য আল-আমিন মিশনের

কল্যাণ অধিকারী, এডিটর রাজন্যা নিউজ

মাধ্যমিক পরীক্ষার প্রথম দশে রাজ্যের অন্যান্য ছাত্র-ছাত্রীদের সঙ্গে আল আমিন মিশনের দুই কৃতি ছাত্রী। মোনালিসা পারভীন এবং আফরিন খাতুন মাধ্যমিকে রাজ্যের মেধা তালিকায় ৬৮৪ নম্বর পেয়ে দশম হয়েছে। তাদের সাফল্যে উচ্ছ্বাস আল আমিন মিশনে। এমন সাফল্যে খুশি মিশনের সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম।

ছোট থেকেই পড়াশোনায় ভালো আফরিন। স্বপ্ন দেখত ডাক্তার হয়ে গ্রামের মানুষের সেবা করবে। মাধ্যমিকে দশম হয়ে সেই লক্ষ্যে পৌঁছানোর এক ধাপ পার করল এমনটাই জানিয়েছে সে। নিট দেবার প্রস্তুতি শুরু করেছে আর এক কৃতি মোনালিসা। ইচ্ছে ডাক্তার হওয়ার। শুক্রবার আল আমিন মিশনে ওদের দুজনের মুখেই সাফল্যের প্রাণখোলা হাসি। ফুলের স্তবক দিয়ে শুভেচ্ছা জানান নুরুল ইসলাম। নিয়ম করে প্রতিদিন দশ-বারো ঘন্টা পড়াশোনা করেছে, মালদহের মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়ে আফরিন। বাবা ছোটখাট ব্যবসায়ী ব্যস্ত থাকেন, মা গৃহবধূ। মেয়েকে ডাক্তার করে তোলার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। প্রকৃতি দেখতে ভালবাসে। আর একটা ভালবাসা ফারাক্কা ব্রিজ। সময় পেলেই কালিয়াচক থানার ভাগলপুর থেকে মায়ের সাথেই দেখতে যায় আফরিন। গণিত ও জীবন বিজ্ঞানে একশোয় একশো পেয়েছে। এবার নিট পরীক্ষায় বসবে।

দক্ষিণ ২৪ পরগনার জয়নগরের কৃতী ছাত্রী সোনালিসার মা অঙ্গনওয়াড়ি কর্মী। ডাক্তার হওয়ার ইচ্ছে নিয়েই পড়াশোনা এগিয়েছে মোনালিসা। সবসময় বাবা সাহস যুগিয়েছে। গণিত ও ভৌতবিজ্ঞানে পেয়েছে ১০০। এবার নিট পরীক্ষায় বসবে। এদের মতো মোট ১৮৯০ জন আল আমিন মিশন থেকে এ বছর মাধ্যমিক দিয়েছিল। প্রত্যেকেই উত্তীর্ণ। ৯৫ শতাংশ নম্বর পেয়েছে ৭৬ জন। ৯০ শতাংশ ৬৩৬ জন। ৮৫ শতাংশ বা তার বেশি নম্বর পেয়েছে ৬৩ দশমিক ৬৫ শতাংশ ছাত্রছাত্রী৷ ৮০ শতাংশ বা তার বেশি নম্বর পেয়েছে ৭৯ দশমিক ৮৪ শতাংশ৷ অত্যন্ত ভালো ফল করা ছাত্রছাত্রীরা ডাক্তার হতে চায় বলে জানিয়েছে এমনটাই মিশন থেকে কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন।

আল আমিন মিশনের সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম জানান, “আল-আমিন মিশনের রাজ্যজুড়ে থাকা কৃতী ছাত্র-ছাত্রীদের মাধ্যমিকে অত্যন্ত ভালো ফল করার জন্য শুভেচ্ছা জানাই। ছাত্রছাত্রীদের সাফল্যে আমরাও গর্বিত।”

মুসলমান ছেলেমেয়েদের জন্যে যে লক্ষ্য নিয়ে পথ চলা শুরু করেছিলেন প্রতিষ্ঠাতা নুরুল ইসলাম তাতে আলোর দিশা পেয়েছে আল আমিন মিশনের হাজার-হাজার আফরিন, মোনালিসা। এই মিশনেই পড়াশোনা করে উচ্চমাধ্যমিক দেবে ফাইজ মাসুদ, ইমদাদুলরা। ইতিমধ্যে শুরু করে দিয়েছেন পড়াশোনা। মিশনের নিয়ম মেনে ৬-৭ ঘন্টা পড়াশোনা করছে। কৃষক ও নিম্ন-মধ্যবিত্ত পরিবারে সন্তানরা আল আমিন মিশনের মধ্য দিয়ে নিজেদের সাফল্যের লক্ষ্যে এগিয়ে চলেছে।  

ডিহিভুরসুট-উদয়নারায়ণপুর সড়কের ধারে মস্ত গেট। ভিতরে বিশাল ফুটবল মাঠ, তার বিভিন্ন প্রান্তে স্কুলবাড়ি আর হস্টেল। এখানেই অধ্যাবসায় আর প্রচেষ্টায় সাফল্য মিলছে ছাত্র-ছাত্রীদের। এই লক্ষ্যে পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন প্রান্তে আল আমিন মিশনের শাখায় ডাক্তার হবার আগে মেধার পাঠ নিচ্ছে ছাত্র-ছাত্রীরা। এভাবেই নীরবে শিক্ষিত সমাজ গড়ার কাজটাই করে চলেছেন আল আমিন মিশনের প্রতিষ্ঠাতা নুরুল ইসলাম৷ 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *