রবি দুপুরে-ই মমতাকে ‘নিজের মেয়ে’ সম্বোধন করলেন আমতাবাসী
কল্যাণ অধিকারী
হাইলাইটস
❏ মাঝদুপুরের গনগনে রোদে মমতার সভায় কার্যত জন সুনামি
❏ মাইক হাতে নিয়েই খোঁজ নিলেন গ্রামের মায়েদের, ভুলে যাননি তুষার কে
❏ দেড় ঘন্টা অপেক্ষার শেষে মমতাকে সামনে থেকে দেখেই শাড়ির আঁচল দিয়ে চোখের জল মুছলেন গৃহবধূ
আমতা বিধানসভায় রবিবাসরীয় শেষ ভোট প্রচারে সব আকর্ষণ-এর কেন্দ্রবিন্দুতে ছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আমতার বাকসিহাট ফুটবল মাঠে সভা শুরুর কথা সাড়ে এগারোটায় থাকলেও তিনি পৌঁছাতে পৌঁছাতে একটা বেজে গিয়েছে। মাথার ওপর মাঝদুপুরের গনগনে রোদ। ‘কুছ পরোয়া নেহি’ ভাব অব্যাহত। ঠায় অপেক্ষায় থেকে গেলেন প্রায় ত্রিশ হাজার জনতা (তৃণমূলের হিসাব)। হেলিকপ্টার থেকে নেমে হুইলচেয়ারে করে মঞ্চে পৌঁছান মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মাইক হাতে নিয়েই খোঁজ নিলেন গ্রামের মায়েদের। তাঁদের জন্যই তো এসেছেন। শাড়ির আঁচল দিয়ে চোখের জল মুছে বলেন বছর পঞ্চান্নর অষ্টবালা দেবী।
নন্দীগ্রামে বুথে তৃণমূল এজেন্ট দুর্বল থাকার কথা মমতার কানেও পৌঁছে ছিল। এ দিনের সভা থেকে তিনি বললেন এখানে যেন দুর্বল বুথ এজেন্ট না করা হয়। একটু নাক ফেটে গেলেই এলাকা ছেড়ে পালাবে। বিষয়টি নিয়ে মঞ্চেও তখন ইতিউতি। তাহলে কি তৃতীয় দফায় ভোটে পুরোদমে খেলবে তাঁর দল। বাড়তি কোনও ঝুঁকি নেবেন না তাহলে! ৬ তারিখ মঙ্গলবার হুগলি, হাওড়া ও দক্ষিণ ২৪ পরগনার একাংশ মিলিয়ে ৩১ টি কেন্দ্রে ভোট। যা তৃণমূলের গড় বলেই পরিচিত। এদিনের সভা মঞ্চ থেকে জনতার উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, “মায়েরা আপনারাই আমার শক্তি। আপনারা দেখছেন তো বিজেপি কীভাবে গ্যাসের দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। বিনামূল্যে চাল দিচ্ছি তা ফুটিয়ে খেতে হচ্ছে হাজার টাকার গ্যাসে। কিছু বললেই এজেন্সির লোক পাঠিয়ে দিচ্ছে। যেমনটা অভিষেকের বাড়িতে পাঠিয়ে দিয়েছে। পুলকের বাড়িতেও পাঠিয়ে দেবে!”
এরপরেই তিনি বলেন, “আজ প্রচার শেষ হচ্ছে। আগামী ৪৮ ঘন্টা সময় থাকছে আপনাদের কাছে। কেন্দ্রীয় বাহিনী এসে ধমকালে আপনারা ভয় পাবেন না। ওঁরা এসে বলবে বিজেপিকো ভোট দো। আপনারা কোমর বেঁধে জবাব দেবেন। তিনি আরও বলেন বুথে কোন দুর্বল এজেন্ট না হয়। প্রয়োজনে মেয়েদের এজেন্ট করবে। আমার কন্যাশ্রীদের এজেন্ট করবে। ওদের (বিজেপির) বিরুদ্ধে আমার মায়েরা লড়াই করে দেবে। আমার সংখ্যালঘুরা একটা ভোটও যেন আমাদের ছাড়া অন্য কেউ না পায় দেখবেন। মঞ্চে যখন কথাগুলো বলছেন খালনার জবা, সন্ধ্যা, অনিতারা হাততালি দিয়ে ‘দিদি-দিদি’ দিদি আমাদের সব। দিদি ছিল বলেই লকডাউনে ছেলেরা বাইরে থেকে ফিরতে পেরেছে। সাবিনা, জমিলা দুই বোন এসেছে চিতনান থেকে। দিদি মুণ্ডেশ্বরী নদীর উপর কুলিয়া সেতুর কথা বলতেই খুশির ঝিলিক চোখেমুখে। সেই কবে থেকে সেতুর দাবি, অন্তত এবার সেই দাবি পূরণ হবে আশায় দুই বোন।
লোকসভা ভোট বা বিধানসভা ভোট আমতা হোক বা জয়পুর একটি হলেও জনসভা করেন মমতা। এদিন এসেছিলেন বাকসিহাট ফুটবল মাঠে। হুগলির খানাকুলে জনসভা করে ফেরেন তিনি। তবে হেলিপ্যাডে নামার আগে ছাউনি বাঁধা মঞ্চের উপর দিয়ে চলে যায় দক্ষিন-পশ্চিম দিকে। রূপনারায়ণের উপর দিয়ে চিতনান হয়ে ঘুরে হেলিপ্যাডে নামে কপ্টার। পাশে দুতলা ঘরের মাথায় পুলিশ ও কেন্দ্রীয় বাহিনীর সজাগ দৃষ্টি। মঞ্চ থেকে স্বাগতম জননেত্রী বলছেন তৃণমূল কার্যকর্তারা। মাঠজুড়ে কর্পোরেট ধাঁচে পিকের টিমের সদস্যরা উপস্থিত। কিন্তু তিনি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ভুলে যাননি তুষার শীলের কথা। আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন ব্যায়ামবীর তুষার কে প্রার্থী করেছিলেন তিনি। অসিত মিত্রর কাছে হেরে যায়। এবার ভূমিপুত্র সুকান্ত পাল কে প্রার্থী করেছেন। মমতা বলেন, ‘এলাকার মানুষের কথা নিয়েই সুকান্ত কে প্রার্থী করেছি। খুব কাজের ছেলে ও। জিতিয়ে আনবেন তো’! সমস্বরে জবাব আসে ‘হ্যাঁ’। মঞ্চে তখন মাথা ঝুকিয়ে নেত্রীর কাছে আশীর্বাদ নিচ্ছেন সুকান্ত। পাশে বাগনান কেন্দ্রের প্রার্থী অরুনাভ সেন (রাজা), উলুবেড়িয়া দক্ষিণ কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী পুলক রায়।
দুটোর একটু আগে যখন কপ্টার ফিরে যাচ্ছে হাজার হাজার মানুষ মুখ্যমন্ত্রীকে হাত নেড়ে তাঁদের সমর্থন জানিয়েছেন। এই জনস্রোতের মাঝেই নলিনী। উচ্চ মাধ্যমিক দেবে। দিদির দেওয়া দশ হাজার টাকায় নতুন স্মার্টফোন কিনেছে। হেলিকপ্টার এর ছবি তুলে ভাইকে পাঠাচ্ছে। মুম্বইয়ে শ্রমিকের কাজ করে। ভোট দেবার আশায় ও লকডাউনের ঝক্কির আগেই ট্রেন ধরে ফিরছে। দিদির জন্যই গত বছর লকডাউনের মাঝে ফিরে এসতে পেরেছিল। ভাগচাষী বাবার পক্ষে সম্ভব নয় সবার পেট চালানো। তার উপর পড়াশোনার খরচ। উচ্চমাধ্যমিকে ভালভাবে পাস করে দিদির মাধ্যমে যদি একটা চাকরি পাই বাবার অনেকটা সাহায্য হবে। ভিড় ঠেলতে ঠেলতে নলিনী কে তখন অনেকটা দূরে নিয়ে চলে গেছে।