হাসপাতালে চারদিনের লড়াই শেষ মারা গেল ‘পুলিশ’ হবার স্বপ্ন দেখা অর্পিতা

কল্যাণ অধিকারী, এডিটর রাজন্যা নিউজ

পুলিশ হবার স্বপ্ন অধরাই থেকে গেল। কথাগুলো বলতে বলতে কান্না আটকাতে পারলেন না মা। চারদিনের লড়াই চালিয়েও মেয়েকে নিয়ে ফিরতে না পারার আক্ষেপ বাবাকে কুড়ে কুড়ে খাচ্ছে। পাড়ার সামনে মানুষের জটলা। মানতে পারছে না তাঁরাও। সবে কলেজে ভর্তি হয়েছে, পথ দুর্ঘটনায় চারদিনের লড়াইয়ে সব শেষ। কাঁদছে গ্রাম।

গ্রামীণ হাওড়ার জয়পুর থানার সেহাগোড়ী গ্রাম। এই গ্রামের মেয়ে অর্পিতা পাত্র। খড়িয়প উচ্চ বিদ্যালয় থেকে উচ্চমাধ্যমিক পাশ করার পর ভর্তি হয়েছিল জয়পুর পঞ্চানন রায় কলেজে। গত বৃহস্পতিবার প্রথম দিন কলেজে গিয়েছিল। বিকেল কলেজ থেকে বাড়ি ফিরবে বলে রাস্তার ধারে অপেক্ষা করছিল। জয়পুর পঞ্চায়েত এলাকা থেকে ছেড়ে আসা অটোয় পিছনের দিকে উঠতে যেতেই সজোর মারুতি এসে ধাক্কা দেয় অটো সমেত অর্পিতাকে। আছড়ে পড়েন রাস্তায়। পিচ রাস্তায় মাথা সজোরে ধাক্কা লাগে। ডান পায়ের উপর উঠে যায় মারুতির সামনের চাকা। এমন ভয়াবহ দুর্ঘটনাইয় হতচকিত হয়ে যায় স্থানীয়রা। ছুটে আসেন স্থানীয় দোকানদাররা। নিয়ে যাওয়া হয় অমরাগড়ী বিবিধর গ্রামীণ হাসপাতালে। সেখান থেকে স্থানান্তর করা হয় এসএসকেএম হাসপাতালে। চারদিনের লড়াই থেমে গেল রবিবার রাত আটটা নাগাদ। পুলিশ হবার স্বপ্ন দেখত মেয়ে সেই স্বপ্ন চিরদিনের মতন শেষ হয়ে গেল।

বাড়িতে পৌঁছে দেখা গেল একদিকে মা মামনি পাত্র হাউমাউ করে কাঁদছে। আর একদিকে অর্পিতার বাবা মাথায় হাত দিয়ে বসে রয়েছেন। পড়শিরাও বুঝতে পারছেন না কিভাবে সব শেষ হয়ে গেল। বাবা তপন পাত্রের কথায়, “মেয়ে রবিবার সকালেও কথা বলেছে। সবকিছু ঠিকঠাকই ছিল। বারেবারে বলছে কলেজ যেতে হবে বাবা। কবে ছুটি দেবে বলোতো। ডাক্তার, নার্সরা একটু বুঝলো না মেয়ের মাথায় চোটটা ছিল গভীর। শুধু পায়ের চিকিৎসাই করে গেছেন! রবিবার মুখ দিয়ে রক্ত বের হওয়ায় নার্সদের বলি। শুনলো না ওঁরা। এরপর বমি করে যাচ্ছে দেখে জানাতেই দুপুরে আইসিইউ তে নিয়ে যায়। রাত ৮টা নাগাদ সব শেষ হয়ে গেল। পাশে বসে মা মামনি পাত্র জানান, “ওঁরা আমাকে একটা কাগজে সই করতে বারেবারে বলছিল। আমি সই করিনি। ওঁরা কিছু লিখিয়ে নিতে চাইছিল। আমার মেয়ে পুলিশ হবার জন্য পড়াশোনা করছিল। ওকে তো মেরেই দিল ওঁরা!”

মামাকে বলেছিল তোমরা এখনি দেখাশোনা করে বিয়ে দেবার কথা বলবে না। কলেজে ভর্তি হয়েছি। পুলিশ হই বাবা-মাকে দেখব। তারপর বিয়ে বা অন্যকিছু। চোখের জল মুছতে মুছতে জানালেন মামা। দুই বোনের মধ্যে বড় ছিল অর্পিতা। ছোট থেকেই পড়াশোনার প্রতি বড্ড আগ্রহ। উনিশ বছর বয়সেই কত স্বপ্ন দেখতো ও। প্রথম দিন কলেজ গিয়েছিল। ফিরল না আর ঘরে। ওর বাবা চারদিন হাসপাতালেই দিন-রাত পড়েছিল। মেয়েকে ফিরিয়ে আনতে পারল না। থলিয়া গ্রাম পঞ্চায়েত থেকে দেহ আনার জন্য কাগজপত্র লিখে দিয়েছে। জয়পুর থানা থেকে কাগজপত্র লেখালিখি করা হয়েছে। দেহ আনতে যাচ্ছেন গ্রামের দাদা-কাকারা। গ্রামের মেয়ের এমন মর্মান্তিক খবরে গ্রামের কেউ কাজে যায়নি। 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *