টানা বৃষ্টি কান ফাটানো বজ্রপাত, বিদ্যুৎহীন সুখিয়ায় মৃত ৪ রাত জেগে পর্যটকরা

দীপিকা অধিকারী, রাজন্যা নিউজ

শনিবার সকাল থেকেই বৃষ্টি শুরু হয়েছিল। দুপুরের পর থেকে রবিবার ভোররাত পর্যন্ত একটানা বৃষ্টি। শনিবার থেকেই বিদ্যুৎ নেই। সকাল হতেই হোটেলে খবর আসলো পাহাড়ের ওপ্রান্তে ধসে মৃত্যু হয়েছে ৪ জনের। আহত অনেকে। পুজোর ছুটিতে পরিবার-পরিজন নিয়ে সুখিয়া পাহাড়ে ঘুরতে আসা মানুষজন, এমন দুর্যোগের মুখে পড়বেন স্বপ্নেও ভাবেনি। কীভাবে বাড়ি ফিরবে সেই চিন্তায়।

দার্জিলিং ভ্রমণে আসা পর্যটকদের একটা বড় অংশ সুখিয়া পোখরি আসেন। এখানকার সবুজ পাহাড়, নির্মল চা বাগান এবং একটি প্রাণবন্ত স্থানীয় সংস্কৃতির মনোমুগ্ধকর দৃশ্য উপভোগ করেন। এছাড়াও অনেকে আসেন ট্রেকিং করতে। হাওড়া ও পূর্ব মেদিনীপুর থেকে অনেকে এসেছেন। অতনু মন্ডল নামে হাওড়ার আমতার এক বাসিন্দা ফোনে জানালেন তাঁদের অবস্থার কথা। পুজোর ছুটিতে দার্জিলিং ও সুখিয়া এসেছেন। মনোমুগ্ধকর প্রাকৃতিক দৃশ্য দেখে মুগ্ধ। ট্রেকিং করার ইচ্ছে নিয়ে বহুবার পাহাড়ে এসেছেন অতনু। কিন্তু শনিবার দুপুর থেকে একটানা বৃষ্টি ও বাজ পড়ার বীভৎস আওয়াজ প্রথমবার সাক্ষী থাকলেন। শনিবার থেকেই এলাকায় বিদ্যুৎ নেই। ইনভার্টার দিয়ে কোনক্রমে চলছে। তাও রবিবার রাতটুকু কাটবে কিনা সংশয়। লোকজন বলছে দুদিন সময় লাগবে বিদ্যুৎ আসতে।

অতনু আরও বলেন, সুখিয়ায় মৃত্যু হয়েছে ৪ জনের। মিরিক থেকে সাত জনের দেহ উদ্ধার হয়েছে বলে হোটেল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে। সব থেকে সমস্যা এখানকার যোগাযোগ ব্যবস্থা। একটা গাড়ি চড়ে কয়েকজন এসেছিলেন খোঁজ খবর নিতে। দুর্যোগের জেরে বন্ধ বহু রাস্তা। এখান থেকে যে অন্যত্র যাব তার কোন পথ পাচ্ছি না। হোটেলের বাইরে রাস্তার উপর কাদায় মাখামাখি। হুহু করে পাহাড় থেকে জল নামছে। পরিস্থিতি ভাল না। বজ্রবিদ্যুৎ-সহ বৃষ্টির পূর্বাভাস পাচ্ছি। কীভাবে ফিরব বুঝে উঠতে পারছি না। একি কথা শোনালেন দার্জিলিং-এ যাওয়া কাঁথির বাসিন্দা জগদীশ ও সোনিয়া। সরকারি চাকরিজীবী হওয়ায় পুজোর ছুটিতেই হানিমুন কাটাতে দার্জিলিং এসেছেন। নীল আকাশে কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখে বেশ কাটছিল। কিন্তু এমন বর্ষণ দেখবেন ভাবেননি। জগদীশ বলেন, এখন ভালোয় ভালোয় বাড়িতে ফিরতে পারলে বাঁচি। শিলিগুড়ি যাবার গাড়ি ভাড়া হাঁকছে দশ হাজার টাকা।

পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে মিরিক সহ বিভিন্ন এলাকায় পৌঁছে যাচ্ছেন উত্তরবঙ্গের আইজি রাজেশ কুমার যাদব। বিপর্যস্ত মিরিকেও পরিদর্শনে যান আইজি। সেখানে উদ্ধারকাজ শেষের দিকে বলে জানান তিনি। সকাল থেকে ওখানে দু’টি দল মোতায়েন ছিল উদ্ধারকাজে, রাজ্য এবং জাতীয় দুর্যোগ মোকাবিলা দল। আহতদের দ্রুত উদ্ধার করে চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়েছে বলেও জানিয়েছেন আইজি। কিছু রাস্তা আমরা খুলে দিয়েছি, হেল্পলাইন চালু করেছি। পর্যটক বা স্থানীয় মানুষের সুবিধার্থে জেলা পুলিশ থেকে চালু করা হয়েছে হেল্পলাইন নম্বর জানিয়েছেন রাজেশ কুমার যাদব।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *