অরুণাচল সীমান্তে চিন গড়ছে ৩৬টি ‘এয়ারক্রাফট শেল্টার’

রাজন্যা নিউজ ব্যুরো নয়াদিল্লি

ভারত সীমান্ত ঘেঁষে তিব্বতের লুনজে বিমানঘাঁটিতে ৩৬টি শক্তিশালী বিমানঘাঁটি, প্রশাসনিক ভবন ও নতুন অ্যাপ্রন তৈরির কাজ শেষ করেছে চিন। অরুণাচল প্রদেশের তাওয়াং থেকে মাত্র ১০৭ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত এই ঘাঁটিটি ম্যাকমোহন লাইনের প্রায় ৪০ কিলোমিটার ওপারে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এর ফলে চিনের যুদ্ধবিমান ও ড্রোন মোতায়েনের ক্ষমতা আরও বাড়বে, যা ভারতের বিমানবাহিনীর প্রতিক্রিয়ার সময়কে কার্যত কমিয়ে দেবে।
ভারতের প্রাক্তন বিমানবাহিনী প্রধান বি এস ধানোয়া এক সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ‘লুনজেতে ৩৬টি শক্তিশালী বিমানঘাঁটি তৈরি মানে স্পষ্ট, পরবর্তী সংঘর্ষে তাদের কৌশলগত যুদ্ধবিমান ও হেলিকপ্টার এখান থেকেই উড়বে। গোলাবারুদ ও জ্বালানি আগেই ভূগর্ভস্থ টানেলে মজুত করা হয়েছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘ডোকলাম সংঘাতের সময়ই বলেছিলাম, যেদিন তারা তিব্বতে শক্তপোক্ত বিমানঘাঁটি তৈরি করবে, সেদিনই বুঝতে হবে তারা যুদ্ধের প্রস্তুতি নিচ্ছে।’

বিমানবাহিনীর প্রাক্তন উপপ্রধান অনিল খোসলার মতে, লুনজেতে ঘাঁটির সম্প্রসারণ ভারতের কাছে একটি ‘গুরুতর কৌশলগত হুমকি’। তাঁর মন্তব্য, ‘২০২০ সালের গালওয়ান সংঘর্ষের পর এই ধরনের ঘাঁটি তৈরি শুধু সামরিক দিক নয়, রাজনৈতিক প্রেক্ষিতেও তাৎপর্যপূর্ণ। এই কেন্দ্রগুলি চিনা বিমানকে একাধিক ঘাঁটিতে ছড়িয়ে রাখার সুযোগ দেবে, যা আঘাতের ঝুঁকি কমাবে ও উচ্চতল অঞ্চলে দীর্ঘমেয়াদি অভিযান সম্ভব করবে।’
লুনজের ঘাঁটিতে দেখা গেছে চিনের তৈরি সিএইচ-৪ ড্রোন। এই ড্রোনগুলি ১৬ হাজার ফুট উচ্চতা থেকে মিসাইল নিক্ষেপে সক্ষম। নতুন স্যাটেলাইট চিত্রে দেখা যাচ্ছে, ঘাঁটির রানওয়ে সম্প্রসারণের পাশাপাশি তৈরি হয়েছে ইঞ্জিন পরীক্ষার প্ল্যাটফর্ম ও সহায়ক অবকাঠামোও।
চিনের এই সামরিক প্রস্তুতির জবাব হিসেবে ভারত ২০২৯ সাল থেকে পেতে শুরু করবে মার্কিন তৈরি ‘স্কাই গার্ডিয়ান’ ড্রোন। ভারতীয় বিমানবাহিনী ও সেনাবাহিনীর জন্য আটটি করে এই ড্রোন কেনা হচ্ছে, যা ৩.৫ বিলিয়ন ডলারের এক বিশাল চুক্তির অংশ। এই উন্নত ড্রোন ভারতের গোয়েন্দা ও নজরদারি ক্ষমতা উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়াবে এবং প্রয়োজনে নির্ভুল আঘাত হানারও সক্ষমতা দেবে।
প্রাক্তন উপবিমানপ্রধান এস পি ধরকারের মতে, চিনের অবকাঠামোগত উন্নয়ন ভারতের জন্য এক বড় চ্যালেঞ্জ। তিনি বলেন, ‘এখন পর্যন্ত আমরা ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে কিছুটা সুবিধাজনক অবস্থায় ছিলাম। কিন্তু তিব্বতে ক্রমবর্ধমান আধুনিক বিমানঘাঁটি, দীর্ঘ রানওয়ে ও শক্তিশালী আশ্রয়কেন্দ্র সেই সুবিধা কমিয়ে দিচ্ছে।’

এই মুহূর্তে লুনজে-সহ তিংরি, বুরাং, ইউটিয়ান ও ইয়ারকান্টসহ ছয়টি ঘাঁটিতে দ্রুতগতিতে সম্প্রসারণ চলছে। ভারতীয় বিমানবাহিনী জানিয়েছে, ‘আমাদের নিজস্ব ব্যবস্থাপনা রয়েছে, এবং সীমান্তবর্তী এলাকায় সমস্ত গতিবিধির ওপর আমরা নিবিড় নজর রাখছি।’ প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞদের মতে, হিমালয় ঘিরে ভারত ও চিনের বিমানঘাঁটি উন্নয়নের এই প্রতিযোগিতা এখন নতুন বাস্তবতার ঈzঙ্গিত দিচ্ছে-যেখানে দুই দেশের মধ্যে সংঘাতের সম্ভাবনা ঠান্ডা থাকলেও, সীমান্তে সামরিক প্রস্তুতি আগের যে কোনও সময়ের চেয়ে বেশি সক্রিয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *