আমতা,উদয়নারায়ণপুরে গ্রামের বন্যার্তদের পাশে ত্রাণ নিয়ে শহরের সুশীল সমাজ

কল্যাণ অধিকারী, এডিটর রাজন্যা নিউজ

থলিয়া, বিকেবাটি গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় বন্যার জল সবে নেমেছে। ঢালাই রাস্তাময় কাদার আস্তরণ। ওই রাস্তা দিয়েই ত্রাণের দ্রব্য নিয়ে এগিয়ে চলেছে হাওড়া কদমতলা থেকে আসা নালন্দা সংস্কৃতি’র সদস্যরা। গ্রামের মানুষদের এখন বড়ো বিপদ। বন্যায় সবকিছু তছনছ করে দিয়েছে। ওঁদের পাশে দাঁড়ানো দরকার। জলবাহিত রোগের কথা জানিয়ে সচেতন করা অত্যন্ত জরুরী, নইলে নতুন করে বড় বিপদের সম্মুখীন হবে জানালেন সদস্যরা। বালি থেকে ত্রাণ নিয়ে এসেছেন ‘সাহিত্য-সংস্কৃতি ও কবিতার আসর’ সংগঠনের সদস্যরা। নিশ্চিতপুরে গ্রামবাসীদের ত্রাণ দেওয়ার মাঝে কবিতাও শোনানো হচ্ছে। ছোটদের কুমোর পাড়ার গরুর গাড়ি, লুকোচুরি ইত্যাদি।

ডিভিসির একনাগাড়ে ছাড়া জলে আমতা-২ ব্লকের ১০টি গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকা প্ল্যাবিত হয়। টানা চারদিন পর সেহাগোড়ী-ঝিকিরা সড়ক জেগে উঠেছে। ওই রাস্তা দিয়েই শহরের মানুষজন মেটাডোর, ছোট হাতি গাড়ি ভর্তি করে ত্রাণ নিয়ে আসছেন। শুকনো খাবার, পানীয়জল, কেউ আবার খিচুড়ি, ছ্যাচড়া নিয়ে এসেছেন। মানুষজনকে চেয়ার টেবিলে বসিয়ে কোথাও খাওয়ানো হচ্ছে। লক্ষ্য একটাই গ্রামের বন্যার্ত মানুষদের পাশে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেওয়া। ওঁদের মনোবল বাড়ানো। বন্যার্ত পরিবারের শিশুদের দুধ সহ বিভিন্ন খাদ্যদ্রব্য তুলে দিচ্ছে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দাও মানুষের পাশে দাঁড়াও সংগঠন। ভাতেঘড়ি মোড় মাথায় চেয়ার টেবিলে খিচুড়ি খাওয়াচ্ছে তৃণমূলের সদস্যরা।

থলিয়া, বিকেবাটি, জিবি চিতনান গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার হাজার হাজার জলবন্দি মানুষ নতুন করে ঘর সংসার গোছানো শুরু করেছেন। একিই অবস্থা ভবানীপুর, বরদা এলাকায়। কোথাও মাটির দেওয়ালে বাঁশ দিয়ে ঠেলে সোজা করা হচ্ছে। কোথাও আবার ইট ফেলে চলাচলের রাস্তা তৈরি করছে গ্রামের মানুষজন। ওই রাস্তা দিয়েই ত্রাণের দ্রব্য নিয়ে পৌঁছেছেন মৈনান গ্রামের গৃহবধূ পুর্ণিমা ধাড়া। জমানো টাকা দিয়েই বিস্কুট, চানাচুর, বাতাসা, মুড়ি, এক লিটার জলের বোতল তুলে দিচ্ছেন তিনি। মানিকপীর থেকে ‘সামন্তী ফাটাকেষ্ট স্মৃতি সংঘ’ সদস্যরা সেহাগোড়ীতে গ্রামের ভিতর পৌঁছে গিয়েছে। জলে নেমে খিচুড়ি পৌঁছে দিয়ে আসছেন। ওঁদের কথায়, ‘গ্রামের দুর্গারা এখন মহাবিপদে। ওঁদের মুখে হাসি ফোটাতে পারলেই সবার খুশি’।

উদয়নারায়নপুরের গজা গ্রামে বন্যা বিধ্বস্ত হাজারও মানুষকে আহারের ব্যবস্থা করেছে ‘সম্প্রীতি’ নামক একটি সংগঠন। সদস্য সৌরভ কোলে বলেন, “মানুষ বড়ো অসহায়, মানুষের পাশে দাঁড়াও এই উদ্দেশ্য নিয়েই ছুটে চলেছি একের পর এক গ্রামে। বন্যায় ওঁদের সব কেড়ে নিয়েছে। এই মুহূর্তে পাশে থাকাটা সব থেকে প্রয়োজন। সেই কাজটাই করবার আপ্রাণ চেষ্টা করছি।” হাওড়ার জগাছা থেকে এসেছে সাতজন যুবক। কেউ কাজ করে ডেলিভারি বয়ের, কেউ আবার ওষুধের দোকানে। কিন্তু রবিবার টা ছুটি নিয়েছিল গ্রামের মানুষদের পাশে দাঁড়াতে। বেবি ফুড, শুকনো খাবার নিয়ে এসেছে। 

গ্রামের স্কুল পড়ুয়া রিমা, মৌলিসা, বান্টি, সৈকত, সিরাজুল, ফতেমারা ক’দিন বন্যায় ঘরের মধ্যে আবদ্ধ হয়েছিল। এদিন তাদের হাতে বই খাতা পেন তুলে দিয়েছে বেলুড়ের একটি সংগঠন। ফিরে যাওয়ার আগে পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়ার প্রতিশ্রুতি নিল ওঁরা। এভাবেই রবিবার গ্রামের বন্যার্তদের পাশে অভিভাবকের ভূমিকায় শহরের সুশীল সমাজ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *